তিন দিনেই অস্ট্রেলিয়ার আত্মসমর্পণ!

দারুণ কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতে ৪ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। সিরিজ শুরুর আগে প্যাট কামিন্স-উসমান খাজাদের কণ্ঠেও শোনা গিয়েছিল আশার বাণী। তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে অজিদের দুর্দান্ত টেস্ট পরিসংখ্যানে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা দারুণ একটা লড়াইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

কিন্তু সিরিজের প্রথম ম্যাচে হল তার ঠিক উল্টোটা। ভারতের কাছে ঠিক পাত্তাই পেল না অস্ট্রেলিয়া দল। পাঁচ দিনের টেস্টে মাত্র তিন দিনেই ইনিংস হারের তিক্ত স্বাদ পেল অজিরা। নিজেদের আধিপত্য দেখিয়ে ভারত ম্যাচটি জিতে নিয়েছে ইনিংস ও ১৩২ রানে।

নাগপুরের এ টেস্টে একমাত্র টসেই জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টস বাদে ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং, কোনো ইউনিটেই তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারেনি প্যাট কামিন্সের দল।টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। এরপর আর সেই বিপর্যয় এড়াতে পারেননি কোনো ব্যাটার।

টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের সেরা দুই ব্যাটার মার্নাস লাবুশানে আর স্টিভ স্মিথও তাদের ইনিংস বড় করতে পারেননি। লাবুশানে অর্ধশতক থেকে ১ রান দূরে থেকে জাদেজার বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন। আর স্মিথের সামনে ত্রাস হয়ে দাঁড়ান সেই জাদেজাই। সোজা বল বোল্ড হয়ে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে ফিরে যান তিনি।

টপ অর্ডারদের ব্যর্থতার পথ ধরেছিলেন মিডল অর্ডার ব্যাটাররাও। জাদেজার স্পিন ঘূর্ণিতে দাঁড়াতেই পারেননি হ্যান্ডসকম্ব, র‌্যান শ’রা। শেষ পর্যন্ত ১৭৭ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস। আর দীর্ঘদিন পর ইনজুরি থেকে ফিরে এসেই ফাইফারের ছোঁয়া পান রবীন্দ্র জাদেজা।

অস্ট্রেলিয়ার ১৭৭ রানের বিপরীতে দুর্দান্ত শুরু করে ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা আর লোকেশ রাহুল। দুজনে মিলে গড়েন ৭১ রানের জুটি। রাহুল ২০ রানে আউট হয়ে ফিরে গেলেও সেঞ্চুরি তুলে নেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তবে প্রথম উইকেটের পর ৫০ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। কোহলি, পুজারা, সুরিয়া কুমার যাদব কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। ভারতের মিডল অর্ডারদের ব্যর্থতায় অস্ট্রেলিয়ার মতোই ইনিংসের দিকে এগোচ্ছিল ভারতের ইনিংস।

তবে উইকেটে থিতু হয়ে যান রবীন্দ্র জাদেজা আর অক্ষর প্যাটেল। বল হাতে ৫ উইকেট নেওয়ার পর জাদেজা খেলেন ৭০ রানের একটি ইনিংস। কামিন্সের বলে আউট হওয়ার আগে অক্ষর প্যাটেল তুলে নেন নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতক।

শেষ পর্যন্ত ৮৪ রানের ইনিংস খেলে আউট হন তিনি। আর এতেই ৪০০ রানের বড় সংগ্রহ পায় ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ইনিংসে একমাত্র আলো ছড়িয়েছিলেন টড মারফি। একাই নেন ৭ টি উইকেট।

২২২ রানের দেওয়া লিডে ম্যাচ ততক্ষণে ভারতের দিকেই ঝুঁকে গিয়েছে। তবে প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতা ভুলে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরোধের দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় ছিল সবাই। কিন্তু সেটা তো হয়-ই নি, বরং আরো বাজে ব্যাটিং প্রদর্শন করে অস্ট্রেলিয়া।

এবার অজি ব্যাটারদের জন্য ত্রাস হয়ে ওঠেন রবিচন্দ্রন আশ্বিন। উসমান খাজাকে দিয়ে শুরু করেন। এরপর অ্যালেক্স ক্যারিকে আউট করে নিজের ফাইফার পূরণ করেন। আগের ইনিংসের ৫ উইকেট নেওয়া জাদেজা এ ইনিংসে নেন ২ উইকেট।

ভারতের স্পিনারদের তোপে পরে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি অজি ব্যাটাররা। মাত্র ৯১ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। যার অর্থ- ইনিংস ও ১৩২ রানের বড় পরাজয়ের মুখ দেখল অজিরা। আর এর মধ্য দিয়ে ৪ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল ভারত।

২০০৫ সালের পর ভারতের মাটিতে কখনোই টেস্ট সিরিজ জেতা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। ধারাবাহিক সে ব্যর্থতার গল্পই আবারো লেখা হল নাগপুর টেস্টে। তবে বাকি ৩ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে তারা। তিক্ততার পূর্ণ এ ইতিহাস বদলাতে হলে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টটি জিততেই হবে অস্ট্রেলিয়াকে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link