৩৬!
তাদের পেছনে ছিলো ৩৬ বলে একটা সংখ্যা। এটা কেবল একটা সংখ্যা নয়। এটা একটা কেলেঙ্কারি, এটা অবিশ্বাস্য একটা মানসিক চাপ, এটা হাজার হাজার সমালোচনার দুয়ার। এই ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার দুঃস্মৃতি ভারত দু এক বছরে ভুলতে পারবে না বলে মনে হয়েছিলো।
আর ভোলার পথটাও কী ছিলো?
সেই ধ্বংসযজ্ঞের পরই অধিনায়ক ও দলের সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ফিরে গিয়েছেন দেশে। সেরা সব পেসাররা ইনজুরির কারণে দলে নেই। রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুলরা নেই। এই অবস্থায় আজিঙ্কা রাহানেকে বলা হলো, যাও, মেলবোর্ন টেস্টে লড়াই করো।
এ যেনো প্রথম যুদ্ধবিধ্বস্থ হওয়ার পর সহসেনাপতিকে ঢাল তলোয়ার ছাড়াই ময়দানে নামিয়ে দেওয়া।
না, এখান থেকে পেছন ফিরে তাকাননি রাহানে। বরং নিজের ব্যাটটাকে তরবারি বানিয়ে নিজেই সৈনিকদের সামনে গিয়ে দাড়িয়েছেন। সব কেলেঙ্কারি, সব সমালোচনা এবং সব চাপ উড়িয়ে দিয়ে দলকে তুলে এনেছেন ধ্বংসস্তুপ থেকে। সেই ৩৬ রানে অলআউট হওয়া ভারতই আজ সকালে ৮ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো।
ম্যাচসেরা খেলোয়াড় হয়ে রাহানে দেখিয়ে দিলেন, বিপর্যয়ের পর কিভাবে ঘুরে দাড়াতে হয় এবং নৌকাডুবির পর কিভাবে সাতরে কুলে উঠতে হয়।
চলতি সফরে ওয়ানডে সিরিজ হারার পর দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাড়িয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছিলো ভারত। প্রথম টেস্টে ভালো অবস্থানে থেকেও অবিশ্বাস্য ভাবে ২য় ইনিংসে ৩৬ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হেরেছিলো বিরাট কোহলিরা। ভারতের এমন বিপর্যয়ের পরই শুরু হয় চারদিক থেকে সমালোচনা। এমনকি ভারত এই সিরিজে একটা ম্যাচও জিততে পারবে না বলে ভবিষৎবাণী দিয়েছিলেন মার্ক ওয়াহ।
প্রথম টেস্ট হারার পর ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর খুব বেশি সুযোগ দেখেন নাই মার্ক ওয়াহ। প্রথম টেস্ট শেষে ফক্স ক্রিকেটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক এই ব্যাটসম্যান ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘কোনও আশা নেই। আমি ভেবেছিলাম, অ্যাডিলেড হলো এমন এক টেস্ট, যেখানে তাদের জয় দিয়ে শুরু করার সুযোগ ছিল, কেননা বিরাট কোহলি ওই এক টেস্টের জন্যই ছিল। ভেবেছিলাম, কন্ডিশনটা তাদের অনুকূলে আছে। (অ্যাডিলেড টেস্টের) তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া যেভাবে গুঁড়িয়ে দিলো, তাতে করে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সম্ভাবনা আমি দেখছি না। অস্ট্রেলিয়া ৪-০তে জিতবে।’
সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে প্রথম টেস্ট শেষেই দেশে ফিরে গিয়েছিলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। নাবিককে হারানো ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের দায়িত্ব পরে আজিঙ্কা রাহানের হাতে। দায়িত্ব পেয়েই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সব সমালোচনার জবাবই দিয়েছেন রাহানে।
টসে হেরে ফিল্ডিং করতে নেমে প্রথম ইনিংসেই বোলারদের নৈপুণ্যে ম্যাচে এগিয়ে যায় ভারত। প্রথম ইনিংসে ১৯৫ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ১৩১ রানের লিড নিয়ে ম্যাচে চালকের আসনে বসে ভারত।
২য় ইনিংসেও ব্যাট করতে নেমে ভারতের বোলারদের তোপের মুখে পরে অস্ট্রেলিয়া। ২য় ইনিংসে ২০০ রানে অলআউট হয়ে ভারতকে মাত্র ৭০ রানের টার্গেট দেয় স্বাগতিকরা। ২য় ইনিংসের শুরুতেই ভারত ২ উইকেট হারালেও শুবমান গিলকে সাথে নিয়ে বাকি কাজ শেষ করেই মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক।
সিরিজে এখন সমতা বিরাজ করছে। দুর্দান্ত জয়ে চাপ কাটিয়ে আত্ববিশ্বাসী ভারত যখন নতুন গল্প লেখার জন্য প্রস্তুতি নেবে তখন অস্ট্রেলিয়াকে ছক কষতে হবে ঘুড়ে দাড়াতে, দেশের মাটিতে সিরিজ ধরে রাখতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৭২.৩ ওভারে ১৯৫/১০ (লাবুশেন ৪৮, হেড ৩৮, ওয়েড ৩০; বুমরাহ ৫৬/৪, অশ্বিন ৩৫/৩)
ভারত ১ম ইনিংস: ১১৫.১ ওভারে ৩২৬/১০ (রাহানে ১১২, জাদেজা ৫৭, গিল ৪৫; লায়ন ৭২/৩, স্টার্ক ৭৮/৩, কামিন্স ৮০/২)
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ১০৩.১ ওভারে ২০০/১০ (গ্রিন ৪৫, ওয়েড ৪০, লাবুশেন ২৮; সিরাজ ৩৭/৩, জাদেজা ২৮/২)
ভারত ২য় ইনিংস: ১৫.৫ ওভারে ৭০/২ (গিল ৩৫*, রাহানে ২৭*; স্টার্ক ২০/১, কামিন্স ২২/১)
ফল: ভারত ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: আজিঙ্কা রাহানে।