অনলাইন বেটিং ও স্পন্সরশিপ: ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়িয়ে ?

বিগত বছরগুলোতে বদলে গেছে ক্রিকেট বাণিজ্য। নতুন নতুন ফরম্যাট এবং ফ্যাঞ্চাইজি লিগের উত্থান, টেকনোলজির ব্যবহার বৃদ্ধি আর বিজনেস মডেল দেখা গেছে ক্রিকেটের দুনিয়ায়। বেড়েছে ক্রিকেট জুয়ার আসর, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আগমণ হয়েছে অনলাইন বেটিংয়ের। প্রশ্ন উঠছে ভবিষ্যতের ক্রিকেট তবে কেমন হবে? 

স্পোর্টিং বেটিংকে বেশিরভাগই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলেও কিছুটা ইতিবাচক প্রভাবও আছে ক্রিকেটে। যেমন বেটিংয়ের সুবাদে ক্রিকেটে অর্থের ঝনঝনানি বেড়েছে, ক্রিকেটাররা আগের তুলনায় বেশি আয় করছেন। ক্রিকেট বোর্ড লাভবান হচ্ছে, ফলে তৃণমূলে ক্রিকেটের উন্নয়ন কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়নে অর্থ কোনো সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না। 

তাছাড়া এসব স্পন্সরশীপ বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে। বিশ্বের যেসব স্থানে ক্রিকেট জনপ্রিয় খেলা নয়, সেসব স্থানের দর্শকরাও ক্রিকেটের প্রতি আকৃষ্ট হবে। বেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোই আজকের দিনেই সবচেয়ে বড় স্পন্সর কোম্পানির একটি, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ এবং প্রচারণা করতে পারছে। এই আয়ের অংশ থেকে ক্রিকেট বদলে দেয়া সম্ভব।

সাকিব আল হাসান ক’দিন আগেই একটা বেটিং প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে সমালোচনায় পড়েছিলেন। অন্যদিকে, হরভজন সিং কিংবা যুবরাজ সিংও এই পথে হেঁটেছেন। কিংবদন্তিদের নিয়ে আয়োজিত রোড সেফটি ক্রিকেটেও দলগুলোর জার্সিতে শোভা পেত একটা অনলাইন বেটিং প্রতিষ্ঠানের লোগো।

একটা বিষয়ে ক্রিকেট বেটিংকে সবাই নিরুৎসাহিত করে যে বেটিংয়ের সুবাদে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ কোনো ক্রিকেট ম্যাচে এমন খেলোয়াড় থাকতে পারেন যিনি কিনা বেটিং প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ। ফলে দলের প্রতি সেই ক্রিকেটারের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ফলে সেই ক্রিকেটার সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার পাশাপাশি দলের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারেন।

সেই কারণেই এই পরিস্থিতির একটা সমাধান বের করতে হবে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের। যাতে ক্রিকেটারদের এহেন পরিস্থিতিতে পরতে না হয় যেখানে বেটিং প্রতিষ্ঠান এবং দলের সাথে স্বার্থের আঘাত হানে। 

তবে সুবিধার পাশাপাশি নানা অসুবিধাও রয়েছে ক্রিকেট বেটিংয়ের। ক্রিকেটে অর্থের ঝনঝনানি বাড়িয়ে দিতে পারে জুয়া এবং ম্যাচ ফিক্সিংয়ের পরিসর। কারণটা অবশ্যই বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই জুয়াকে বিবেচনা করা হয় অপরাধ হিসেবেই। অন্যদিকে, ক্রিকেটাররা সহজ উপার্জনের আশায় জড়িয়ে পড়তে পারেন ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধের সাথে। বড় দলগুলোর জন্য হয়তো ম্যাচ ফিক্সিং বড় কোনো সমস্যা নয়, তবে ফ্যাঞ্চাইজি লিগ এবং ছোট দলগুলোর জন্য ম্যাচ ফিক্সিং মারাত্নক হুমকি। 

তাছাড়া বেটিংয়ের পসার ক্রিকেটকে আর নিছক খেলাতে সীমাবদ্ধ রাখবে। বরং তাঁর চাইতে অনেক বেশি বেটিং নির্ভর করে ফেলতে পারে। বর্তমানে বিখ্যাত ক্রিকেট সাইটগুলোও ম্যাচের আগে ফলাফল এবং ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স প্রেডিক্ট করে থাকে। ফলে দর্শকদেরও নিজেদের পছন্দের দলকে সমর্থন দেবার বদলে অনেক বেশি বেটিংনির্ভর হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। 

এমনটাও হতে পারে দর্শকরাও বরং নিজেদের পছন্দের দলের বদলে যেদিকে জয়ের পাল্লা ভারী সেদিকেই সমর্থন দিতে পারে। এতে ক্রিকেটের স্পিরিট নষ্ট হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। 

সব মিলিয়ে ক্রিকেটের উপর বেটিংয়ের প্রভাব নিয়ে আজো বিতর্ক বিদ্যমান। বেটিং যেমন একদিকে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেবার পাশাপাশি অর্থের জোগান দিচ্ছে, তেমনিভাবে ক্রিকেটের স্পোর্টসম্যানশিপ স্পিরিট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

ক্রিকেট বোর্ডগুলোকে তাই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কি করে বেটিংয়ের কালো ছায়া থেকে ক্রিকেটকে যতটা সম্ভব মুক্ত রাখা যায়। পাশাপাশি স্পন্সরদের চেষ্টা করতে হবে কি করে অর্থের জোগান চালু রাখা যায় যাতে করে ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়। এখন দেখায় বিষয় সবকিছু মিলিয়ে আগামী দিনের ক্রিকেট কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link