ঘরের মাঠে ভারতের পাঁচ বিপর্যয়

ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের ভয়াবহ ব্যাটিং ধ্বসে স্তম্ভিত গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। ইনিংসের প্রায় অর্ধেক ওভার বাকি থাকতেই মাত্র ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায় রোহিত শর্মার দল। তবে কেবল এবারই প্রথম নয়, এর আগেও ঘরের মাঠে এর চাইতে কম রানে অল আউটের লজ্জায় পড়তে হয়েছে ভারতকে। আসুন দেখে নেয়া যাক ঘরের মাঠে ভারতের সর্বনিম্ন পাঁচ দলীয় সংগ্রহ। 

  • ৭৮- শ্রীলঙ্কা (১৯৮৬)

ঘরের মাঠে ওডিয়াইতে ভারতের সর্বনিম্ন রানের ইনিংস ৭৮ রানের। ১৯৮৬ সালে কানপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ২৪.১ ওভারে এই লজ্জার রেকর্ডের মুখোমুখি হয় ভারত। অথচ সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে লংকানদের মাত্র ১৯৫ রানে আটকে দিয়ে জয়ের কক্ষপথেই ছিল স্বাগতিকরা।

কিন্তু জবাব দিতে নেমে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইন আপ। একমাত্র কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত এবং দিলীপ ভেংসরকার বাদে কেউই দুই অংকের রানে পৌঁছাতে পারেননি। ব্যাট হাতে ৩১ রানের পাশাপাশি বল হাতে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন অর্জুনা রানাতুঙ্গা। লংকানরা ম্যাচ জিতে নেয় ১১৭ রানের বড় ব্যবধানে। 

  • ১০০- ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৯৯৩)

ঘরের মাঠে ১৯৯৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ১০০ রানে অল আউট হয় ভারত। আহমেদাবাদে সেদিন ক্যারিবীয় বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি ভারতীয় ব্যাটাররা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২০৩ রানের মাঝারি সংগ্রহ দাঁড় করায় সফরকারীরা। পরে বৃষ্টি বাঁধায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে এলে স্বাগতিকদের জন্য জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭০ রানে। কিন্তু এই সংগ্রহকেই ভারতীয়দের জন্য পাহাড়সম করে তোলেন ক্যারিবীয় বোলাররা।

ইনিংসের শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকরা গুটিয়ে যায় মাত্র ১০০ রানেই। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৩ রান করেন অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। উইনস্টন বেঞ্জামিন এবং কার্ল হুপার দুজনেই শিকার করেন তিনটি করে উইকেট। তবে ব্যাট হাতে অপরাজিত ১৪ রান করায় ম্যাচসেরার খেতাবটা যায় বেঞ্জামিনের কাছেই। অন্যদিকে, ৬৯ রানে ম্যাচ জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

  • ১১২- শ্রীলঙ্কা (২০১৭)

২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১২ রানে অল আউটের লজ্জায় পড়ে ভারত যা কিনা নিজেদের মাঠে তাঁদের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের ১২ ওভার বাকি থাকতেই ১১২ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ডানহাতি পেসার সুরঙ্গা লাকমালের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি কোনো ব্যাটার।

চারজন ব্যাটসম্যান ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই। মাত্র ১৩ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেন লাকমাল। ভারতীয়দের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ রান আসে কুলদ্বীপ যাদবের ব্যাট থেকে। 

  •  ১১৭- অস্ট্রেলিয়া (২০২৩)

২০২৩ সালে সিরিজের দ্বিতীয় ওডিয়াইতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ২৬ ওভারেই ১১৭ রানে অল আউট হয় ভারত। মিচেল স্টার্কের পেস বোলিং জাদুতে দাঁড়াতেই পারেননি রোহিত শর্মা – বিরাট কোহলিরা। স্টার্কের পাশাপাশি তিন উইকেট নেন শন অ্যাবট।

এদিন ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও সমান বাজে ছিলেন ভারতীয় বোলারা। তাঁদের পাড়ার বোলারে নামিয়ে এনে মাত্র ১১ ওভারেই ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় অজি বোলাররা। 

  • ১৩৫- ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৯৮৭)

গুয়াহাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩৫ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। বোলিং নির্ভর সেদিনের পিচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ভুগতে হয়েছিল ক্যারিবিয়দেরও, তবে ভিভ রিচার্ডসের ৪১ রানের সুবাদে সাত উইকেটে ১৮৭ রানের মাঝারি সংগ্রহ পায় তাঁরা।

জবাব দিতে নেমে যেন চোখে সর্ষেফুল দেখছিলেন ভারতীয় ব্যাটাররা, অল আউট হয়ে যায় ১৩৫ রানেই। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেন মহিন্দর অমরনাথ। অন্যদিকে, কোর্টনি ওয়ালশের ১৬ রানে চার উইকেটের সুবাদে ৫২ রানের জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

  •  ১৩৫- বিপক্ষ পাকিস্তান (১৯৯৯)

১৯৯৯ সালে জয়পুরে ২৭৯ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৩৫ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে অনিল কুম্বলের স্পিন ঘূর্ণি সত্ত্বেও সাঈদ আনোয়ারের ৯৫ রানের সুবাদে বড় লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তানি বোলারদের সম্মিলিত তোপে ২৫ রানের কোটা পার করতে পারেননি কোনো ভারতীয় ব্যাটার।

৩৬.১ ওভারে মাত্র ১৩৫ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। অফস্পিনার আরশাদ খানের তিন উইকেটের পাশাপাশি শোয়েব আকতার, আব্দুল রাজ্জাক এবং শহীদ আফ্রিদি নেন দুটো করে উইকেট। তাঁদের দারুণ নৈপুণ্যেই ১৪৩ রানের বড় জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link