২০২০ সালে শেষ তামিম ইকবাল খেলেছিলেন টি-টোয়েন্টি। এরপর একটা শূন্যস্থান তৈরি হয়। বাংলাদেশের ওপেনিং পজিশনে রীতিমত একটা ধ্রুব সত্যে পরিণত হয়েছিলেন তামিম। তাঁর প্রস্থান খানিকটা চিন্তার কারণই বটে। তবে সেখানে একটা স্বস্তির বিষয়ও ছিল। তামিম ইকবাল টি-টোয়েন্টির ওপেনিং পজিশন ছাড়া মানেই তো তরুণ কোন একজন লুফে নেবেন সেই সুযোগটি।
কিন্তু বিষয়টা কখনোই ততটা সহজ ছিল না। বাংলাদেশকে পেরুতে হয়েছে ভীষণ কঠিন একটা পথ। তামিমের বিদায়ের পর বাংলাদেশ ১৩ খানা নতুন ওপেনিং জুটি গঠন করেছে। তবে আফসোস কাজের কাজটি আর হয়নি। আগ্রাসী ক্রিকেটের ধারায় নিজেদেরও যুক্ত করতে পারেনি। বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই জুটি যেন অবশেষে খুঁজে পেয়েছে টাইগার ক্রিকেট। ত্রাতা হয়ে হাজির রনি তালুকদার।
এই তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই বছরে হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই রনির দ্বিতীয় অভিষেক। লম্বা বিরতির পর তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন জাতীয় দলে। আর সেই সুযোগেই তিনি বাজিমাত করে দিয়ে বাংলাদেশকে দিয়েছেন স্বস্তি। চৌদ্দতম জুটি হিসেবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন লিটন দাস ও রনি তালুকদার।
আর সেই জুটিটাই সাফল্যের গান নতুন করে লিখতে থাকে। একের পর এক রেকর্ড নিজেদের দখলে নিতে শুরু করে লিটন-রনি। নিজের বিধ্বংসী ফর্মটা খুঁজে পান লিটন দাসও। তাইতো তিনি সংবাদ সম্মেলনে অকপটে বলে বসেন পার্টনার পরিবর্তন হওয়ায় তাঁর খেলার ধরণেও এসেছে পরিবর্তন। বেশ সাহসী এক মন্তব্যই তিনি করে বসেছেন গণমাধ্যমে। সে সাহসটা নিশ্চয়ই জুগিয়েছে রনি তালুকদার।
যে ভয়ডরহীন ক্রিকেটের সন্ধ্যানে ছিল বাংলাদেশ সেই ক্রিকেটের বার্তা নিয়েই হাজির হয়েছেন রনি তালুকদার। অবশ্য একই রকম সম্ভাবনার আলো জ্বালিয়ে মুনীম শাহরিয়ারও এসেছিলেন জাতীয় দলে। তবে তিনি হয়েছেন ব্যর্থ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের পারফরমেন্সের ছিটেফোঁটাও তুলে ধরতে পারেননি তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবে রনি ঠিকই পেরেছেন।
তিনি হয়ত প্রতিটা ইনিংসেই অর্ধশতক করে ফেলেননি। তবে তাঁর কাছ থেকে দল যেটা চায় তিনি সেটাই করে দেখাচ্ছেন। ইংল্যান্ডের দুর্ধর্ষ বোলারদের সামনে দাড়িয়েও তিনি দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিতে সহয়তা করেছেন। অন্যদিকে আইরিশ বোলারদের বিপক্ষে রনি যেন মেতে উঠেছেন রেকর্ড গড়ার উৎসবে। সাথে সঙ্গী করেছেন লিটন দাসকে।
হ্যা, একটা বিষয় সত্য যে রনি তালুকদার ব্যাকরণ মেনে ব্যাট করেন না। তিনি নিরেট টেকনিক্যাল ব্যাটার নন। শট নির্বাচনের ক্ষেত্রেও রয়েছে অপ্রতুলতা। তিনি চাইলেই লিটনের মত মনোমুগ্ধকর ব্যাটিং প্রদর্শন করতে পারেন না। তিনি যেটা পারেন সেটাই করে যাচ্ছেন। তিনি তাঁর সামর্থ্যের মধ্যে থেকেই দলকে শুভসূচনা এনে দেওয়ার কাজটা করে যাচ্ছেন। তাতে করে বাংলাদেশ যে লাভবান হচ্ছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তিনি নির্ভীকভাবে ক্রিকেটটা খেলে যাচ্ছেন। রনি খুব ভাল করেই জানেন তাঁর আর হারাবার কিছুই নেই। খুব বেশি সময় যে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলে যেতে পারবেন সে নিশ্চয়তাও নেই। তাইতো যতটুকু সময় তিনি পাচ্ছেন উপভোগ করবার চেষ্টা করছেন। আর তাতেই টি-টোয়েন্টির চিরায়ত নিয়ম মেনেই ব্যাট করতে পারছেন রনি তালুকদার। দেখা পেয়েছেন নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটিরও।
তাছাড়া টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেও তাঁকে দেওয়া হয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। কেননা চৌদ্দটি ভিন্ন ওপেনিং জুটি ব্যবহার করা ম্যানেজমেন্ট তো রয়েছে সঠিক জুটি খুঁজে পাওয়ার সন্ধানে। সে পথে নিশ্চয়ই চাপ সৃষ্টি করলে ফলাফলের বিপরীত চিত্র দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে লিটন দাসের সাথেও রনি মেলবন্ধনটা হয়েছে বেশ।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে যতক্ষণ পর্যন্ত রনি-লিটন জুটি টিকে ছিল ততক্ষণ অবধি কেবল ছয়টি বলে বাংলাদেশ ছিল রান বঞ্চিত। অর্থাৎ রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে এই দুই ব্যাটার নিজেদের প্রতি আস্থা রেখেছেন। বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন পাশাপাশি রানের চাকা সচল রেখেছেন সিঙ্গেলস ও ডাবলসে। অপর প্রান্তে থাকা ব্যাটারের উপর কোন প্রকার চাপ আসতে দেননি। বিগত সময়গুলোতে শুরুর দিকে মাত্রাতিরিক্ত ডটবলই ছিল চিন্তার কারণ।
আর রনি তালুকদারের অন্তর্ভুক্তি সেই কারণের অবসান ঘটাতে শুরু করেছে। এটা কেবলই শুরু। পথটা বেশ বিস্তীর্ণ। রনি তালুকদার নিজের স্বরুপেই রইবেন পুরোটা সময় জুড়ে। তাঁর কাঁধে ভর করেই উড়ন্ত সূচনার নতুন নতুন গল্প লেখবে টিম টাইগার্স। প্রত্যাশা নিশ্চয়ই ততটুকু।