এই ম্যাচের চিত্রনাট্য কার লেখা!

লো স্কোরিং কিংবা হাই স্কোরিং— ম্যাচের ধরন যেমনই হোক, আইপিএল ম্যাচ মানেই যেন রোমাঞ্চে ভরা আর উৎকণ্ঠায় ঠাঁসা। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে গুজরাট-দিল্লী মধ্যকার লড়াইটাও হয়েছে ঠিক এমন। লো স্কোরিং ম্যাচ। তবুও ম্যাচের ফলের জন্য চোখ রাখতে হয়েছে শেষ বল পর্যন্ত। আর লো স্কোরিং ম্যাচের এমন লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেসেছে দিল্লী ক্যাপিটালস। গুজরাট টাইটান্সকে তাঁরা হারিয়েছে ৫ রানে।

তবে শুরুর গল্পটা কিন্তু ছিল গুজরাটের পেসারদেরই। টসে জিতে এ দিন ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় দিল্লী ক্যাপিটালস। মোহাম্মদ শামির বোলিং তোপে রীতিমত অসহায় বনে যান দিল্লীর ব্যাটাররা। দিল্লীর শুরুর ধাক্কাটা আসে ইনিংসের প্রথম বলেই। শামির বলে কাভারে খেলতে গিয়ে ডেভিড মিলারের তালুবন্দী হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ফিলিপ সল্ট।

দিল্লীর পথ হারানো শুরু সেখান থেকেই। নিয়মিত বিরতিতে এরপর একে একে ফিরে যান ডেভিড ওয়ার্নার, মিশেল মার্শ, রাইলি রুশো আর মানিষ পাণ্ডে। মাত্র ২৩ রানেই ৫ উইকেট হারানো দিল্লী তখন ১০০ পেরোনো নিয়েই তীব্র শঙ্কায়। তবে আমান হাকিম খানকে নিয়ে পরবর্তীতে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন অক্ষর প্যাটেল।

এ দুই ব্যাটারের ৫৩ রানের জুটিতে কিছুটা উঠে দাঁড়ায় দিল্লী। যদিও ৩০ বলে ব্যক্তিগত ২৭ রান করে অক্ষর প্যাটেল ফিরে গেলে আবারো চাপের মুখে পড়ে দিল্লীর ইনিংস। তবে এ দিন দৃশ্যপটটা নিজের করে নিয়েছিলেন ‘অচেনা’ আমান হাকিম খান।

রিপা প্যাটেলকে নিয়ে এ ব্যাটার দিল্লীকে পৌঁছে দেন শতরানের সংগ্রহে। তাতেই শুধু ক্ষান্ত থাকেননি আমান হাকিম। নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পাশাপাশি দিল্লীর ইনিংসও সংহত করার চেষ্টা করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত, আমানের সেই প্রচেষ্টা সফলও হয়েছে। ২৩ রানে ৫ উইকেট হারানো দিল্লী শেষ পর্যন্ত স্কোরবোর্ডে জমা করে ১৩০ রান।

১৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে গুজরাট টাইটান্স। শূন্য রানে ফিরে যান ঋদ্ধিমান সাহা। এরপর শুভমান গিলও এ দিন উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। গুজরাটের ইনিংসে দ্রুত উইকেট পতনের ফলে এ দিন ব্যাটিং প্রমোশন পেয়ে চারে নেমেছিলেন বিজয় শঙ্কর। কিন্তু তিনিও ফিরে যান গুজরাট শিবিরে হতাশা জাগিয়ে। বিজয়ের শঙ্করের পর ডেভিড মিলারও এ দিন চূড়ান্ত ব্যাটিং ব্যর্থতার প্রদর্শন ঘটান। প্রোটিয়া এ ব্যাটার ফিরে যান কোনো রান যোগ না করেই।

৩২ রানে ৪ উইকেট হারানো গুজরাট তখন এক প্রকার ম্যাচ থেকে ছিটকেই গিয়েছে। তবে উইকেটে টিকেছিলেন তিনে নামা অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। অভিনব মনোহরকে নিয়ে এ ব্যাটার দলের সাময়িক বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন। অভিনব মনোহরও পান্ডিয়াকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত ২৬ রানে ফেরার আগে হার্দিক পান্ডিয়ার সাথে যোগ করেন ৬২ রানের জুটি।

আর এ জুটিই শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে গুজরাটকে ম্যাচে রেখেছিল। অভিনব মনোহর ফিরে যাওয়ার পর ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূরণ করেন হার্দিক পান্ডিয়া। তবে ম্যাচে মোড় ঘুরিয়ে দেন রাহুল তেওয়াতিয়া। শেষ ৯ বলে ৩০ রানের প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠা সমীকরণে হঠাতই এ বাঁ-হাতি ব্যাটারের ব্যাটিং ঝড়ে ম্যাচে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় গুজরাট।

এনরিখ নর্কিয়ার করা সে ওভারের শেষ ৩ বলে ৩ ছক্কা হাঁকান তেওয়াতিয়া। এর ফলে শেষ ওভারে গুজরাটের প্রয়োজন হয় ১২ রান। আগের ওভারে ২১ রান তুলে নেওয়া গুজরাটের জন্য তখন এমন সমীকরণ বেশ সহজসাধ্যই বটে।

তবে শেষ পর্যন্ত গুজরাটের সেই জয়যাত্রার দ্বার বন্ধ করে দেন পেসার ইশান্ত শর্মা। আগের ওভারে টানা তিন ছক্কা হাঁকানো রাহুল তেওয়াতিয়াকে এ ওভারেই ফেরান এ পেসার। এরপরই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় গুজরাট। নির্ধারিত ২০ ওভারে তাদের ইনিংস ইনিংস থামে লক্ষ্য থেকে ৬ রান দূরে, ১২৫ রানে।

৫৩ বলে ৫৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও হার্দিক পান্ডিয়া এ দিন মাঠ ছাড়েন ম্যাচ হারের আক্ষেপ নিয়েই। একই সাথে গুজরাটের এ পরাজয়ে ম্লান হয়েছে মোহাম্মদ শামির আইপিএল ক্যারিয়ার সেরা বোলিংও। ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে গুজরাটকে প্রথমেই ম্যাচে এগিয়ে দিয়েছিলেন এ পেসার। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতায় মোহাম্মদ শামির জ্বলে ওঠার দিনে শেষ পর্যন্ত জ্বলে উঠতে পারলো না তাঁর দল গুজরাট টাইটান্স।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link