শেষ দুই ওভারে বদলে যাওয়া চিত্রনাট্য

ক্রিকেট কখনো কখনো খুব নিষ্ঠুর। বেশ কয়েকবারই এমন ঘটেছে পুরো ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও শেষ এক কিংবা দুই ওভারের ঝড়ে থাকতে হয়েছে পরাজিতের দলেই। আসুন দেখে নেয়া যাক শেষ দুই ওভারে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতা ম্যাচগুলো। 

  • রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু বনাম চেন্নাই সুপার কিংস, ৪৩ রান

ঘরের মাঠে খেলতে নেমে সেদিন ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে রীতিমতো রান পাহাড়ে চাপা পড়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। ক্রিস গেইল এবং বিরাট কোহলির ঝড়ো দুই ফিফটিতে ২০৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় ব্যাঙ্গালুরু। জবাব দিতে নেমে এক ফাফ ডু প্লেসি ছাড়া প্রতিরোধ গড়তে পারেননি কেউই।

শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য ৪৩ রানের প্রয়োজন ছিল চেন্নাইয়ের। পাঁড় চেন্নাই সমর্থকও বোধহয় সেদিন দলের জয় আশা করেননি। তবে মরনে মরকেল বোধহয় অন্যকিছু ভেবে রেখেছিলেন। উনিশতম ওভারে বিরাট কোহলিকে রীতিমতো নাকাল করে ছাড়েন, তিন ছয় আর দুই চারে তুলে নেন ২৮ রান।

শেষ ওভারে তাই বিনয় কুমার মরকেলকে আউট করলেও শেষরক্ষা হয়নি। ডোয়াইন ব্রাভো এবং রবীন্দ্র জাদেজা মিলে দুই চার এবং এক ছক্কায় তুলে নেন প্রয়োজনীয় ১৫ রান। মহাকাব্যিক এক জয় পায় চেন্নাই, দর্শকরা সাক্ষী হন উন্মাতাল শেষ দুই ওভারের। 

  • সাসেক্স বনাম গ্লুচেস্টারশায়ার, ৪৩ রান 

ব্রিস্টলে সেবার টি টোয়েন্টি ব্লাস্টের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল সাসেক্স এবং গ্লুচেস্টারশায়ার। অধিনায়ক মাইকেল ক্লিঙ্গারের ফিফটির পাশাপাশি বাকিদের মাঝারি ইনিংসে ১৮৫ রানের ভালো সংগ্রহ পায় গ্লুচেস্টারশায়ার। জবাব দিতে নেমে এক লুক রাইট ছাড়া প্রতিরোধ গড়তে পারেননি কেউই। 

শেষ দুই ওভারে তাই জয়ের জন্য ৪৩ রানের প্রয়োজন ছিল দলটির। সবাই আশা ছাড়লেও রাইট যেন সেদিন দলকে জেতানোর প্রতিজ্ঞা করেই মাঠে নেমেছিলেন। জেমস ফুলারের করা ১৯তম ওভারেই বদলে দেন ম্যাচের চিত্রনাট্য, পাঁচ ছয় আর দুই নো বলের সুবাদে তুলে ফেলেন ৩৪ রান।

পরের ওভারে তাই জেরোম টেলরের বলে দুইটি চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করতে কোনো অসুবিধাই হয়নি তাঁর। রাইট শেষপর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৫৬ বলে ১১১ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলে। 

  • গুজরাট টাইটান্স বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স, ৪৩ রান

আহমেদাবাদে সেদিন বিজয় শংকরের অতিমানবীয় এক ইনিংসে গুজরাটের বিপক্ষে রীতিমতো রানপাহাড়ে চাপা পড়ে কলকাতা। জবাব দিতে নেমে ভেংকটেশ আইয়ার ৮৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেও জয় থেকে বেশ দূরেই ছিল দলটি। শেষ দুই ওভারে তাই জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪৩ রান। উইকেটে তখন অখ্যাত রিংকু সিং এবং উমেশ যাদব। 

জস লিটলের ১৯তম ওভারেও আহামরি রান তুলতে পারেননি এই দুজন। ফলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৯ রান, উমেশ যাদবের সিঙ্গেল নেবার পর যা গিয়ে দাঁড়ায় ৫ বলে ২৮ রানের। বিশ্বের সবচেয়ে আশাবাদী মানুষও বোধহয় এমন পরিস্থিতিতে দলের জয় আশা করবেন না।

কিন্তু এরপর যা হলো সেটা রীতিমতো অকল্পনীয়! ইয়াশ দয়ালের টানা পাঁচটি বলই গ্যালারীতে পাঠালেন রিংকু সিং। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়টা সেদিন পেয়েছিল কলকাতা। 

  • সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ বনাম রাজস্থান রয়্যালস, ৪১ রান 

২০২৩ আইপিএল মৌসুমটা মোটেই ভালো কাটছে না সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের। বেশ কয়েকটি ম্যাচেই জয়ের সম্ভাবনা জাগালেও ফিরতে হয়েছে খালি হাতেই। জয়পুরে তাই রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে শেষ দুই ওভারে ৪১ রান দরকার পড়লে হায়দ্রাবাদের পক্ষে আশা রাখেননি কেউই। বিশেষ করে যখন আগের ম্যাচেই কলকাতার বিপক্ষে শেষ ওভারে নয় রান তুলতে পারেনি দলটি। 

তবে এদিন অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন এবারের আসরে মাত্রই দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা গ্লেন ফিলিপস। ১৯তম ওভারে কুলদ্বীপ যাদবেরব বলে টানা তিন ছয় আর চারে তুলে ফেলেন ২২ রান। কিন্তু ওভারের পঞ্চম বলে তিনি আউট হলে আবারো ম্যাচ হেলে পড়ে রাজস্থানের দিকে।

সন্দ্বীপ শর্মার শেষ বলে বলে পাঁচ রান দরকার পড়লেও আউট হয়ে যান আব্দুল সামাদ। তবে এদিন যেন ভাগ্যবিধাতা অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন, তৃতীয় আম্পায়ার ইশারা দেন নো বলের। এবারে আর ভুল করেননি সামাদ, বলটাকে সোজা গ্যালারিতে পাঠিয়ে দলকে এনে দেন দারুণ এক জয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link