দীর্ঘ অপেক্ষার উজ্জ্বল আকাশ

এবারের আইপিএলের আগে নাম খুব বেশি কেউ জানতো না। ঘরোয়া ক্রিকেটেও আহামরি পারফর্ম করতে পারেননি। তবু জহুরির চোখে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের স্কাউট দল চিনতে ভুল করেনি হীরে। সেই সুবাদেই কিনা এবারের আইপিএলে বল হাতে আলো ছড়াচ্ছেন আকাশ মাধওয়াল। 

উত্তরখন্ডের পেসার আকাশ ভারতীয় ক্রিকেট পাড়ায় পরিচিত নন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কিংবা এ দলের হয়েও ডাক পাননি কখনো। বয়সটা ২৯ হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনো নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেকটাই হয়েছে অনেকটা সময় পেরিয়ে। ২০১৯ সালে সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফি দিয়ে সর্বপ্রথম ভারতীয় ক্রিকেটে আবির্ভাব এই তরুণের। মোটে ১৭ লিস্ট এ ম্যাচের সাথে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২৬টি।

ফলে এমন একজন পেসারকে মুম্বাই কেন দলে ভেড়াল সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিস্তর। তাছাড়া আকাশের বোলিংয়ে আলাদা করে নজর কাড়ার মতো কিছু নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর ট্রল হলেও আকাশকে সমর্থন করে গেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মূলত গত মৌসুমেও মুম্বাই স্কোয়াডের সাথেই ছিলেন এই পেসার। সেবারে সুরিয়াকুমার যাদবের ইনজুরির সুবাদে ডাক পেলেও কোনো ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। 

নিজের প্রতিভার ঝলকটা হয়তো নেটে রেখেছিলেন, বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সুযোগ পেলে তিনিও সামর্থ্য রাখেন ভবিষ্যতের তারকা হবার। সেই সুবাদেই কিনা এবারের নিলাম থেকে ২০ লাখ রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই। জাসপ্রিত বুমরাহ কিংবা জোফ্রা আর্চারদের ইনজুরির সুবাদে পাওয়া সুযোগটা নিতে পারেননি আরশাদ খান কিংবা অর্জুন টেন্ডুলকাররা। 

তবে আকাশ পড়ে পাওয়া সুযোগটা হাতছাড়া করেননি। অভিষেক ম্যাচে উইকেট না পেলেও সময় যত গড়িয়েছে ততই যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন এই তারকা। 

উমরান মালিকের বুনো গতি কিংবা ভুবনেশ্বর কুমারের মতো সুইংয়ের জাদু আপনি আকাশের বোলিংয়ে পাবেন না। আকাশও জানেন নিজের সীমাবদ্ধতা, সে কারণেই কিনা লাইন লেংথেই তাঁর মনোযোগ। টানা ভালো লাইনে বল করে ব্যাটসম্যানকে যেন ভুল করতে বাধ্য করেন এই পেসার।

এছাড়া তাঁর বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় গুণ ইনিংসের যেকোনো সময় বল করতে জানেন। পাওয়ার প্লেতে নতুন বলে যেমন সাবলীল, তেমনি ডেথ ওভারে এসে রান বন্যায় বাঁধা দিতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। 

উইকেট শূন্য অভিষেক ম্যাচের দুঃখ আকাশ ভুলিয়েছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে। তরুণ এই পেসারের বোলিংয়ের কোনো জবাব ছিল না টাইটান্সের ব্যাটারদের কাছে। পাওয়ার প্লেতেই ফিরিয়েছেন দারুণ ছন্দে থাকা দুই ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা এবং শুভমান গিলকে।

মাঝের ওভারে পরের স্পেলেও সমান কার্যকর আকাশ, ফিরিয়েছেন ক্রমশই ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা ডেভিড মিলারকে। শেষ পর্যন্ত চার ওভারে ৩১ রান দিয়ে তিন উইকেট শিকার করে মুম্বাইয়ের সফলতম বোলার ছিলেন আকাশ। 

বয়স ত্রিশ পেরিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়ানো ক্রিকেটারের সংখ্যা মোটেই কম নয়। ভারতের তারকাখচিত দলে জায়গা করে নেয়া কঠিন। তবে আকাশ জানেন ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে কাজটা অসম্ভব নয়। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link