ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল ব্যর্থ। লিটন দাস তবে কী? তিনিও ঠিক ব্যর্থদেরই কাতারে। এমন একটা মন্তব্যের পর দেশের ক্রিকেট সমর্থককূল তেড়েফুঁড়ে আসতেই পারেন। তবে মোদ্দাকথা, চলতি বছরে, আরেকটু যুক্ত করে বললে বিশ্বকাপের বছরে বাংলাদেশের এ দুই ওপেনারই নির্দিষ্ট এক মানদণ্ডে এক রকম তলানির দিকেই অবস্থান করছেন।
২০২৩ সালে এখন পর্যন্ত ৯ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তাতে দলগত সাফল্যে বাংলাদেশ ঠিকঠাকই, ৫ জয়ের বিপরীতে ২ টিতে হার আর বাকি দুটি ম্যাচ ভেসে গিয়েছে বৃষ্টিতে। তবে দলের এমন সাফল্যের মহিমায় আড়ালে থেকে যায় ওপেনারদের ভরাডুবি।
বাংলাদেশে খেলা এ ৯ ম্যাচে তামিম আর লিটন পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন ৩ টা। ৮ ইনিংসে লিটনের ২ টা, আর ৯ ইনিংসে তামিমের ফিফটি একটা। অর্থাৎ হিসাবটা বলছে, এ বছরে প্রতি তিন ওয়ানডেতে এ দুই ওপেনারের কেউ না কেউ ফিফটি করেছেন। এমন পরিসংখ্যান কতটা সুখকর কিংবা গড়পড়তা, তা নির্ণয় করা মুশকিল। তবে সামগ্রিক চিত্রতে অন্যান্য দেশের ওপেনারদের তুলনা বাংলাদেশি এ দুই ওপেনারের পারফরম্যান্স মোটেই আশা জাগানিয়া কিছু নয়।
একটা পরিসংখ্যান বলছে, টেস্ট প্লেয়িং দেশগুলোর ওপেনারদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এ বছরে ওয়ানডেতে ন্যূনতম ১৫০ বল খেলেছেন, ১৫ জন ওপেনিং ব্যাটার। সেই ১৫ ওপেনারের মধ্যে ত্রিশের নিচে ব্যাটিং রয়েছে শুধু পাঁচ জনের। আর ঐ পাঁচ ওপেনারের দুইজন হলেন, তামিম ইকবাল আর লিটন দাস। ৯ ইনিংসের ২৮.২৫ গড়ে তামিমের রান ২২৬, আর ৮ ইনিংসে ওপেনিংয়ে ব্যাট করে ২৪.৮৬ গড়ে লিটন করেছেন ১৭৪ রান।
এ সময়কালে তামিম লিটনের চেয়ে কম ব্যাটিং গড়ে ব্যাটিং করেছেন আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিং, স্টিফেন দোহেনি, আর নিউজিল্যান্ডের ফিন অ্যালেন। অর্থাৎ ব্যাটিং গড়ের হিসেবে ১৫ ওপেনারের মধ্যে তামিমের অবস্থান ১১ নম্বরে আর লিটনের অবস্থান ১২ তে।
বাংলাদেশি এ দুই ওপেনারকে রেখে চলুন অন্যান্য দেশের ওপেনারদের দিকে নজর দেওয়া যাক। এ সময়কালে ভারতের শুভমান গিল ৭৮ গড়ে ব্যাটিং করেছেন। আর তাঁর আরেক সঙ্গী রোহিত শর্মা ৪৬.৩৮ গড়ে ব্যাটিং করেছেন। পাকিস্তানের দুই ওপেনারের ক্ষেত্রে ফখর জামান ৯৪.৬০ আর ইমাম উল হক ৩৮.২০ গড়ে ব্যাটিং করেছেন।
এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার টেম্বা বাভুমা ৮৪, নিউজিল্যান্ডের ওপেনার ডেভন কনওয়ে ৫১.৩৩, ইংল্যান্ডের জেসন রয় ৪৬.৩৩, ডেভিড মালান ৬৩ গড়ে ব্যাটিং করেছেন। এ চিত্রটাই একটা আভাস দিচ্ছে, কতটা নড়বড়ে ওপেনিং জুটি নিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এবার আসা যাক ব্যাটিং স্ট্রাইকরেটে। এই ১৫ ওপেনারের মধ্যে চলতি বছরে ৫ জন ১০০ এর উপরে স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন। আর বাকি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন ৯০+, ২ জন ৮০+, ২ জন ৭০+ আর বাকি ২ জন ৬০ এর উপরে স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন।
লিটন দাস তবুও ৯৬.১৩ ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট রেখে কিছুটা মান বাঁচিয়েছেন। কিন্তু অপর ওপেনার তামিমের ৭৫.৮৪ স্ট্রাইকরেট তাঁকে ঠাই দিয়েছে ১২ নম্বরে। স্ট্রাইকরেটের দিক দিয়ে তাঁর পিছনে রয়েছেন পল স্টার্লিং, স্টিফেন দোহেনি আর ইনোসেন্ট কাইয়া। আরো হতাশার ব্যাপার হলো, এখন পর্যন্ত ২০২৩ সালে ওপেনারদের মধ্যে ওয়ানডেতে সেরা ১০ রানসংগ্রাহক ব্যাটারদের মধ্যে তামিমের স্ট্রাইকরেটই সবচেয়ে কম।
বড় এক স্বপ্ন নিয়ে এবারের বিশ্বকাপ খেলতে যাবে বাংলাদেশ। সেই স্বপ্নের পথে সম্ভাব্য দলটাও প্রায় নির্ধারিত। অধিনায়ক তামিম ইকবালের সুরে বরাবরই নাম্বার সেভেন আর ব্যাকআপ ওপেনার নিয়ে চিন্তা ফুটে ওঠে। তবে তামিমের সেই চিন্তক মনে সম্ভবত ওপেনিং জুটির এই দুর্দশার ব্যাপারটাও জাগ্রত হওয়া উচিৎ।
কারণ সাম্প্রতিক দলগত সাফল্যে ওপেনিংয়ের এ দুরবস্থা আড়াল হয়ে গেলে, শেষ পর্যন্ত মাশুলটা দিতে হবে বাংলাদেশকেই। অতীত ইতিহাস বলে, বড় মঞ্চেই টিম টাইগার্সের যতসব ফাঁকফোকর বেরিয়ে আসে।
এমন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির সাক্ষী এবার নিশ্চয় হতে চাইবেন না অধিনায়ক তামিম। তবে সময়টা যে ফুরিয়ে আসছে। বিশ্বকাপের আগে বড়জোর দুটি সিরিজ পাবে বাংলাদেশ। আর ঐ ৫/৭ টা ম্যাচেই লিটন-তামিমকে ফিরে আসতে হবে স্বরূপে। তবেই পূর্ণ উদ্যমে বিশ্বকাপ অভিযানে পা বাড়াতে পারবে টিম টাইগার্স।