টালমাটাল নারী ফুটবল

প্রচন্ড খরায় ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া দেশের ফুটবলে এক পশলা বৃষ্টি। পুরো শহরজুড়ে বাস প্যারেড হল। আনন্দের সবাই মাতোয়ারা। এরপর আবার সবাই যেন ভুল গেল সবকিছু। খবর রাখেনি কেউ চ্যাম্পিয়নদের। 

এই তো সেদিন ঘটা করে সংবর্ধনা দেওয়া হল সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে। প্রচন্ড খরায় ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া দেশের ফুটবলে এক পশলা বৃষ্টি। পুরো শহরজুড়ে বাস প্যারেড হল। আনন্দের সবাই মাতোয়ারা। এরপর আবার সবাই যেন ভুল গেল সবকিছু। খবর রাখেনি কেউ চ্যাম্পিয়নদের।

সেই নারী দলের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন সিরাত জাহান স্বপ্না। সাফ জয়ের পেছনের প্রত্যক্ষভাবেই অবদান রেখেছিলেন তিনি। লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চারবার খুঁজে পেয়েছিলেন জালের ঠিকানা। প্রবল সম্ভাবনাময় এক তরুনী তিনি। বয়স কেবল ২২।

এখনও তো অনেকটা পথ চলা বাকি ছিল তার। কিন্তু তিনি অল্পেই থেমে গেলেন। অবসরের ঘোষণা জানিয়ে দিলেন নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। হতাশার ধুম্রজালে যেন আটকা পড়ে আট বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনে নিলেন স্বপ্না।

তিনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘আমি নিজ ইচ্ছায় পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নিলাম। প্রায় আট বছর পেশাদার ফুটবল খেলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। ফুটবল–ক্যারিয়ারে আসার পর আমি অনেক কিছু পেয়েছি। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি। খেলার সুবাদে অনেকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। তাই জেনে বা না জেনে যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, প্লিজ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’

হঠাৎ করেই সিরাত জাহান স্বপ্নার অবসর। বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের ফুটবল আঙ্গিনায়। অবসরের ঘোষণা দেওয়ার আগেই তিনি জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়ে চলে যান। স্বপ্নার এই হুট করে ফুটবলকে বিদায় বলার বিষয়ে অবাক হয়েছেন নারী জাতীয় ফুটবল দলের কোচ, গোলাম রব্বানি ছোটনও।

ছোটন দেশের জনপ্রিয় এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খুব সম্ভবত কোনো হতাশা থেকেই সে অবসরের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা তার সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি। সে বলে, “স্যার খেলে কী হবে! সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পর কেটে গেছে আট মাস। কিন্তু কোনো খেলা নেই। ফ্রাঞ্চাইজি লিগ শুরু হওয়ার কথা, সেটারও কোনো খবর নেই।”‘

স্বপ্না স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন যে কোন প্রকার পারিবারিক চাপে পড়ে তিনি অবসরের মত এই কঠিন সিদ্ধান্তটি নেননি। বরং তার কথায় হতাশার ছাপ বেশ পরিষ্কার। দেশের ফুটবলের সাম্প্রতিক সময়ে যত সাফল্য এসেছে তার সিংহভাগই এসেছে নারীদের হাত ধরেই।

অথচ সেই নারী দলকে অলিম্পিক বাছাই পর্বের জন্যে পাঠানো যায়নি মিয়ানমারে। কারণটা ছিল অর্থাভাব। একটা দল ক্রমাগত দেশের জন্যে সাফল্য বয়ে আনছে। সেই দলটির খেলোয়াড়রা থেকে যান আড়ালে। তাদের আয়ের উৎস নেই। পারিশ্রমিকও সামান্যই। এমন পরিস্থিতিতে হতাশ জড়িয়ে ধরা বেশ স্বাভাবিক।

তাইতো সিরাত জাহান স্বপ্নারা বেছে নেন অবসরের পথ। অথচ স্বপ্নার তো উড়ে বেড়ানোর কথা ছিল তার নিজ স্বপ্নের আকাশে। অন্যদিকে নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানি ছোটনও সরে দাড়িয়েছেন কোচের দায়িত্ব থেকে। শুক্রবারই তিনি এই ঘোষণা দেন।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘অনেক তো করলাম। অনেক চাপ। পারিবারিক জীবন আছে। বন্ধুবান্ধব আছে। কাউকেই সময় দেওয়া হয়নি। ওদিকে মহিলা দলের ওপর সবার প্রত্যাশা বাড়ছে। আমি মনে করি, অনেক হয়েছে। এবার সরে যাই। এ কারণে আমি আর মেয়েদের কোচ হিসেবে থাকছি না।’

নারী ফুটবলের যত সাফল্য, তার সবটাই তো এসেছে তার হাত ধরেই। তিনিও ছেড়ে যাচ্ছেন নিজের দায়িত্ব। স্বপ্নার এই ঝড়ে পড়া, ছোটনের সরে দাঁড়ানো এসবকিছু নিশ্চয়ই এক অশনি সংকেত। সেই সাথে সন্দেহের ঝালালো গন্ধও ছড়াচ্ছে। আসছে দিনে হয়ত পতন সব সকল নক্ষত্রের। একেবারে নিশ্চিহ্ন হবে দেশের ফুটবল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...