রেকর্ডের পাতায় বাংলাদেশের হানা

১৩৮ টেস্টের ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষকে ফলো অন করানোর ঘটনা মাত্রই একটাই। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলো অন করিয়ে ইনিংস ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এ ঘটনার প্রায় সাড়ে চার বছর বাদে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এবার মিরপুর টেস্টে ফলোঅন করার সুযোগ পেয়েছিল টাইগাররা।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৮২ রানের বিপরীতে আফগানদের স্কোরবোর্ডে মাত্র ১৪৬ রান। ২৩৬ রানের লিড নিয়ে তাই দ্বিতীয়বার ব্যাট না করলেও চলতো বাংলাদেশের। কিন্তু এবারও ফলো অন না করিয়ে নিজেরাই আবার ব্যাটিং করতে নেমে গেল বাংলাদেশ। আর সেই নেমে যাওয়াটাই যেন হয়ে উঠলো রেকর্ডের সিঁড়িপথ।

মমিনুল হকের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে উভয় ইনিংসেই সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়লেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ২ বছর বাদে লাল বলের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন মমিনুল নিজেও। এ ছাড়া জাকির হাসান আর লিটন দাসের হাফসেঞ্চুরিতে আফগানিস্তানকে পাহাড়সম এক লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। অবশ্য সেই লক্ষ্যটা হতে পারতো আরো বড়।

কিন্তু দলীয় স্কোর ৪ উইকেটে ৪২৫ রান থাকা অবস্থায় ইনিংস ঘোষণা করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস। এর আগে প্রথম ইনিংসের ২৩৬ রানে এগিয়ে থাকায় দুই ইনিংস মিলিয়ে তাই বাংলাদেশের লিড গিয়ে দাঁড়ায় ৬৬১ রানে। আর এখানেই হয়েছে নতুন রেকর্ড।

টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে প্রতিপক্ষকে দেওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লক্ষ্য এটি। এর আগে ২০২১ সালে হারারে টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ৪৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৫ বছরে ইতিহাসে ছয়শোর বেশি লক্ষ্য দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ২১ বারই। যার সর্বশেষটা হয়েছিল ২০১৯ সালের ব্রিজটাউন টেস্টে। ইংল্যান্ডকে সেবার ৬২৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিপক্ষকে ৬৫০ বা এর বেশি লক্ষ্য ছুঁড়ে দেওয়ার তালিকাটা আবার বেশ ছোট। মিরপুরের এই টেস্ট দিয়ে মাত্র দশবারই এ ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ক্রিকেট।

টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান লক্ষ্য দেওয়ার রেকর্ড ইংল্যান্ডের। ১৯৩০ সালে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮৩৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ইংলিশরা। যদিও সময়টা ছিল টাইমলেস ক্রিকেটের যুগ। সেটি বাদে ৫ দিনের টেস্ট বিবেচনায় প্রতিপক্ষকে সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেওয়ার রেকর্ডটা অস্ট্রেলিয়ার। ১৯৬৯ সালে সিডনি টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সেবার ৭৩৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল অজিরা।

১৯৩৯ সালে ডারবান টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৬৯৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সেটিও ছিল টাইমলেস টেস্ট। বলে রাখা ভাল, এই টেস্টের সাথেই জড়িয়ে আছে, টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের দীর্ঘতম টেস্ট ম্যাচের ঘটনা। ৩ মার্চ থেকে সে টেস্ট শুরু হয়ে শেষটা হয়েছিল ১৪ মার্চে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ইতিহাসের দীর্ঘতম সে টেস্ট ম্যাচটির ফল হয়েছিল ড্র। এর পিছনের ইতিহাস অবশ্য আরো মজাদার।

ইংল্যান্ডের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬৯৬ রান ছুঁড়ে দিলেও সে ম্যাচ হারতে বসেছিল প্রোটিয়ারাই। ম্যাচে দশম দিনে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪২ রান। কিন্তু বেরসিক বৃষ্টিতে এরপর আর একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। অবাক করা ব্যাপার হলো, সেই ৪২ রান বাকি রেখেই মাঠে ছেড়েছিল ইংল্যান্ড। কারণ পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী জাহাজে চড়ার তড়িঘড়ি ছিল ইংলিশদের।

তাদের জাহাজ অ্যাথলন ক্যাসেল ডারবান ছেড়েছিল তার আগের দিনেই এবং কেপটাউনে গিয়ে ইংল্যান্ড দলের জন্য অপেক্ষা করছিল। তাই খেলা শেষ না করেই ইংল্যান্ড দল তাড়াহুড়ো করে ডারবান থেকে ট্রেনে চেপে কেপটাউনে জাহাজ ধরে। আসলে খেলাটা যে এতদিন গড়াতে পারে তা তাদের ভাবনাতেও ছিল না। দীর্ঘতম টেস্ট ম্যাচটি তাই পরিসংখ্যানের খাতায় ড্র হয়েই থেকে যায়৷

যাহোক, এরপরের রেকর্ডটা বাংলাদেশের। ২০২৩ সালে এসে মিরপুর টেস্টে আফগানিস্তানকে ৬৬১ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিল বাংলাদেশ। যা টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ লিডের দিক দিয়ে চতুর্থ, আর এই শতাব্দীতে সর্বোচ্চ লিডের রেকর্ড।

এখানেই শেষ নয়, জয়ের দিক থেকেও রেকর্ড ছুঁয়েছে লিটন দাসের দল। রানের বিবেচনায় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেই এটা তৃতীয় বৃহত্তম জয়। আর পাঁচদিনের টেস্টের ইতিহাসকে ধরলে এই ৫৪৬ রানের ব্যবধানটাই থাকবে সবার ওপরে। টেস্ট অধিনায়কত্বের শুরুটা লিটন দাসের পক্ষে এর চেয়ে ভাল ভাবে শুরু করার আর কোনো উপায় হয়তো ছিল না।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link