এজবাস্টন রোমাঞ্চের শেষ হাসি অজিদের

একবার অস্ট্রেলিয়া। তো আরেকবার ইংল্যান্ড। এজবাস্টন টেস্টের পেণ্ডুলাম ঘুরেছে দুই দিকেই। তবে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটের এ কুলীন লড়াইয়ে ম্যাচজয়ের হাসি হেসেছে অজিরাই। শ্বাসরূদ্ধকর এক লড়াই শেষে ইংল্যান্ডকে ২ উইকেটে হারিয়েছে তাঁরা।

অ্যাশেজ মানেই উত্তপ্ত বাইশ গজের প্রাঙ্গন। অজি-ইংলিশ দ্বৈরথ সেই আপ্ত বাণীকে সত্য করেই বিশ্ব ক্রিকেটের চোখ গত ৪ দিনে কেন্দ্রিভূত করে রেখেছিল এজবাস্টন টেস্টে । সেই ধারাবাহিকতায় রোমাঞ্চ এসে ঠেকেছিল শেষ দিনে।

কিন্তু শেষ দিনের রোমাঞ্চে হঠাৎই বৃষ্টির হানা। বার্মিংহামে আকাশের মেঘ ভেঙ্গে নামল মুষলধারে বৃষ্টি। আর তাতেই ভেস্তে যায় দিনের প্রথম সেশন।

অবশ্য বৃষ্টি থামার পর অজি-ইংল্যান্ড দ্বৈরথে আবারো জমে ওঠে এজবাস্টন টেস্ট। অ্যাশেজের ছাইভস্ম পুনরুদ্ধার যাত্রায় প্রাণপণ লড়াইয়ে নামে ইংল্যান্ড। অপরদিকে অজিরাও চোখ রেখেছিল জয়ের দিকেই।

শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৭৪ রান। আর স্বাগতিক ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৭ টি। দুই দলের জন্যই লক্ষ্য সহজ কিংবা খুব কঠিন নয়। তবে ইতিহাস অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই কথা বলছিল। এজবাস্টনে এর আগে ২৮১ এর সমান বা বেশি রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করে জেতার ঘটনা ছিল দুটি।

সর্বশেষ গত বছর ভারতের বিপক্ষে ৩৭৮ রান তাড়া করে জিতেছিল ইংল্যান্ড। এর আগে ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৮১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করে জিতেছিল ৫ উইকেটে।

অস্ট্রেলিয়াকে তাই এমন বিরল রেকর্ড পাড়ি দিয়েই ম্যাচটি জিততে হতো। সে যাত্রায় আগের দিনে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা স্কট বোল্যান্ড এ দিন স্টুয়ার্ট ব্রডের শিকার হয়ে ফিরে যান। অবশ্য নামের পাশে ২০ রান যোগ করে পরিস্থিতি বিবেচনায় কার্যকরীই একটি ইনিংস খেলেন এ বোলার।

তবে বোল্যান্ড ফিরে যাওয়ার পর একটা মোমেন্টাম পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। আর সেই মোমেন্টাম কাজে লাগিয়েই ট্রাভিস হেডের উইকেট তুলে নেন মঈন আলী।

এরপর উইকেটে এসে উসমান খাজার সাথে কিছুক্ষণ উইকেটে সঙ্গ দিয়েছিলেন ক্যামেরুন গ্রিন। তবে দলের বিপত্তি বাড়িয়ে দেন রবিনসনের বলে বোল্ড হয়ে। কারণ অস্ট্রেলিয়া তখনও জয় থেকে ৮৯ রান দূরে।

অপরপ্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোয় চাপ বাড়ছিল খাজার উপরে। আর সেই চাপে পড়েই কিনা বেন স্টোকসের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি। আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান এবার থামেন ৬৫ রানে।

উসমান খাজা ফিরে যাওয়ার ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। এর মাঝে আবার জো রুটের স্পিনে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অ্যালেক্স ক্যারি। কার্যত, অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচজয়ের আশা সেখানেই শেষ হয়ে যায়।

তবে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স লড়াই বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। নাথান লিঁওকে নিয়ে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রায় অসম্ভব এক সমীকরণ। আর সেই অসম্ভাব্যতার চূড়া ঠিকই পাড়ি দেন তিনি। স্টুয়ার্ট ব্রড, রবিনসনদের একেকটা সুইং, বাউন্সার সামলে এগিয়ে যান জয়ের দিকে।

একটা সময় পর সেই জয়ের কাঙ্খিত মুহূর্তের দেখাও পেয়ে যান তিনি। নাথান লিঁওর সাথে নবম উইকেট জুটিতে গড়েন ৫৫ রান। আর এতেই ২ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে অস্ট্রেলিয়া। প্যাট কামিন্স শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪৪ রানে। আর তাঁর সাথে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ১৬ রানের কার্যকরী এক ইনিংস খেলেন নাথান লায়ন।

শেষ ২২ বছরে একবারে জন্যও ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ সিরিজ জেতা হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। এবার এজবাস্টন টেস্ট জিতে ৫ ম্যাচের এ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল অজিরা। দীর্ঘ সময়ের এ তিক্ত ইতিহাস বদলানোর দিকেই বোধহয় এবার চোখ প্যাট কামিন্সদের।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link