পা ভেঙেছে, মনোবল নয়

গ্রায়েম স্মিথের এক হাতে ব্যাট করা, অনিল কুম্বলের মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে বোলিং কিংবা তামিম ইকবালের ভাঙা হাতে ব্যাটিংয়ে নামা বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে বছরের পর বছর৷ আর সেই আলোচনায় এবার নতুন যোগ হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার নাথান লিঁও।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময় পায়ে মারাত্মক চোট পাওয়া এই অজি স্পিনার পুরো ম্যাচ থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন। এমনকি শঙ্কা রয়েছে এই সিরিজেই হয়তো আর দেখা যাবে না তাঁকে।

অথচ, সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে একাদশ ব্যাটার হিসেবে মাঠে নেমে আসেন তিনি। নিরপেক্ষ দর্শক তো বটেই, স্বয়ং ইংলিশ সমর্থকেরাও তখন দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায় এই স্পিনারকে।

কাকতালীয়ভাবে এই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সাদা জার্সিতে টানা একশতবারের মত মাঠে নামার কীর্তি গড়েছিলেন নাথান লিঁও। এর আগে মাত্র পাঁচজন পেরেছেন একশ বা তারও বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলতে। তবে এদের কেউই বোলার নন, তাই প্রথম স্পেশালিষ্ট বোলার হিসেবে বিরল এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন এই ডানহাতি।

ক্রিকেটার হিসেবে নাথান লিঁও কতটা ধারাবাহিক কিংবা তাঁর পারফরম্যান্স অস্ট্রেলিয়ার জন্য কতটা জরুরি সেটা বুঝতে বোধহয় এই একশত টেস্টের গল্পই যথেষ্ট।

অজিদের মত পেস বান্ধব দলে নিজেকে অপরিহার্য স্তম্ভে পরিণত করা কিংবা ফিটনেস ধরে রেখে ইনজুরি এড়িয়ে এতটা পথ পাড়ি দেয়া শুধু লিঁও বলেই হয়তো সম্ভব হয়েছে।

মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচ অবশ্য মন মতো হলো না নাথান লিঁওর; খেলতেই পারলেন না ঠিকঠাক। তবে যা করেছেন তিনি সেটাও অবিশ্বাস্য, অতিমানবীয়। সাইড স্ট্রেইনের ব্যাথা আর এক গাদা ঝুঁকি নিয়েই ব্যাট হাতে নেমেছেন ব্রড, রবিনসনদের মোকাবেলা করতে।

শেষ উইকেটে মিচেল স্টার্কের সঙ্গে জুটি গড়েন নাথান লিঁও; স্টার্ক যাতে স্ট্রাইকে থাকতে পারেন, সেজন্য ওভারের শেষ বলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে প্রান্ত বদল করেছিলেন একবার; আবার স্টুয়ার্ট ব্রডের করা একটা বল পুল শটে বাউন্ডারি ছাড়াও করেছিলেন তিনি।

ব্যাথার তীব্রতায় যার চোখমুখ কুঁচকে যাচ্ছিল বারবার, সেই লিঁও স্টার্কের সঙ্গে মিলে সংগ্রহ করলেন আরো পনেরো রান।সংখ্যার হিসেবে এই পনেরোটা রান তেমন কিছু নয়।

অস্ট্রেলিয়া হয়তো এই পনেরো রান ছাড়াই জিতবে কিংবা এই পনেরো রান নিয়েও হেরে যাবে বেন স্টোকসদের কাছে। কিন্তু, নাথান লিঁওর এই আত্মত্যাগ নিশ্চয়ই অজি বোলারদের আরেকটু ভাল করার অনুপ্রেরণা দিবে; আক্রমনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে।

নাথান লিঁও যেটা করলেন সেটাকে দেশপ্রেম বললে হয়তো বাড়াবাড়ি মনে হবে; তবে ক্রিকেটের প্রতি এই নিবেদনও তো দেশের পতাকার প্রতি সম্মান থেকেই আসে; ছোট করে দেখার সুযোগ কই। লিঁওদের মত তারকাদের জন্যই ক্রিকেট এত সুন্দর।

পাঁচশ উইকেটের রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল নাথান লিঁওর কাছে; কিন্তু বেরসিক চোটের বাধায় অপেক্ষা বাড়লো শুধুই। সেটা ভেবে মন খারাপ হতেই পারে এই তারকার; তবে তিনি যা করেছেন সেটার গুরুত্ব বোধহয় কয়েকটা উইকেটের চেয়ে একটু বেশি।

অন্তত, নাথান লিঁওর দুর্দান্ত কীর্তি গড়ার ম্যাচটি ভক্তরা আলাদা করে মনে রাখবে অনেকদিন; মনে রাখার মতই অনন্য এক পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link