সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় তামিমের পুরনো সখ্যতা আছে। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেও ঠিক এভাবেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে সেটি আনুষ্ঠানিক বিদায় ছিল না। কিন্তু এবার যেটা হলো, তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ফুলস্টপ বসিয়ে দিলেন তামিম ইকবাল। কাকতালীয়ভাবে, সময়টা ঠিক তখনই, যখন একটি বিশ্বকাপের আসর দরজায় কড়া নাড়ছে।
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দেখা যাবে না তামিম ইকবালকে। কিছুক্ষণ বাদে এই খবর পুরনোই হতে চলেছে। তবে আলোচনার স্রোত বইবে বেশ কয়েকটি প্রশ্নে, বিশ্লেষণে, যুক্তিতে। কেন তামিম থামলেন নাকি তাঁকে থামানো হলো, এই প্রশ্নবোধক আলোচনা তো আছেই। এর সাথে যুক্ত হবে আরো কিছু প্রশ্নও। তামিমের অনুপস্থিতিতে বিশ্বকাপে কোন স্ট্র্যাটেজিতে খেলবে বাংলাদেশ? তামিমের প্রস্থানে বাংলাদেশের আদৌ কোনো লাভ হলো, নাকি অপূরণীয় কোনো এক ক্ষতির সামনে বাংলাদেশ?
ব্যাট হাতে তামিম বিগত বছর গুলোতে সাদামাটাই ছিলেন বলা চলে। সমালোচনার তীরে অনুমিতভাবে বিদ্ধও হয়েছেন। তবে কি তামিমের এমন বিদায়ের ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য সুফলই বয়ে আনবে? মোটেই কিন্তু তা নয়। তামিম এই দলটার অধিনায়ক ছিলেন। এই দলকে নিয়েই তিনি এতদিন বিশ্বকাপের জন্য রণকৌশল সাজাচ্ছিলেন। সেই তামিম এখন বিদায় জানাচ্ছেন। এটা অবশ্যই বিশ্বকাপের আগে দলের জন্য একটা ধাক্কা।
শুধু তাই নয়, তামিমের জায়গায় এখন একজন ওপেনারকে প্রস্তুত করতে হবে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্যও কিন্তু সময় নেই। আফগানদের বিপক্ষে বাকি ২ ম্যাচ আর বড়জোর এশিয়া কাপে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুযোগ পাবে টিম ম্যানেজমেন্ট। যেটা মোটেই পর্যাপ্ত সময় নয়। তাঁর চেয়েও বড় কথা, কাকে নিয়ে ওপেন করানো হবে – সেই ব্যাটার এখনও তৈরি না। কয়েকটা নাম শোনা গেলেও কেউই চূড়ান্ত নয়।
তামিমের অনুপস্থিতিতে নতুন অধিনায়কও বেছে নিতে হবে বাংলাদেশকে। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাকিব। এখন ভবিষ্যত বিবেচনায় সাকিবকে মোটেও দীর্ঘমেয়াদে অধিনায়কত্ব দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু সাকিব ছাড়া বড় আসরে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা যে দলে আর কারো নেই।
দীর্ঘ মেয়াদের বিবেচনায় লিটন দাস হতে পারেন পরবর্তী অধিনায়ক। তবে অধিনায়কের ভার সামলে লিটন কি সত্যিই নিজের ছন্দটা ধরে রাখতে পারেন? সেই প্রশ্নটা থেকেই যায়। সব কিছু মিলিয়ে তামিমের এমন হঠাৎ বিদায়ের ঘোষণায় ক্ষতিটা হলো বাংলাদেশেরই। বিশ্বকাপ শুরুর আগে যেটি মোটেই কাম্য ছিল না।
নতুন অধিনায়ক, নতুন ওপেনার, সাথে নতুন করে টিম কম্বিনেশন, সবটাই এখন নতুন করে সাজাতে হবে বাংলাদেশকে। তামিমের এমন সিদ্ধান্তে বিশ্বকাপ যাত্রায় কিছুটা হোঁচট এখানেই খেয়েছে বাংলাদেশ। তবে সেটি কাটিয়ে উঠতে হবে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই। সময়ই অবশ্য সেটির জানান দিবে, বিশ্বকাপের আগে তামিমের বিদায়ের ঘোষণায় বাংলাদেশের কতটা ক্ষতি বা লাভ হয়েছে।