পরিসংখ্যান কেবলই সংখ্যা। অতীতে ঘটা ঘটনা পাশ কাটিয়ে যাওয়াই আসলে এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র। তেমনই এক চিন্তাধারা থেকেই বাংলাদেশ খেলতে নামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত।
আবার একাদশ ছয় স্বীকৃত বোলার। সেটা অলরাউন্ডার সাকিব আর মিরাজকে সঙ্গী করে। আক্রমণাত্মক ভাবনা তা বলতেই হয়। কেননা ব্যাটিং বিপর্যয়ের দুশ্চিন্তায় দল তো সবসময় অতিরিক্ত একজন ব্যাটার নিয়ে খেলে আসছে। তবে এবার অতিরিক্ত এক বোলার নিয়েই খেলল। আর সফলতাও তো মিলে যায় একেবারে শুরুরদিকে।
অবশ্য ছয় বোলার নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট অবশ্য একটা প্রক্রিয়ার অংশ। যেটা শুরু হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা শেষ সিরিজ থেকেই। বেশ ইতিবাচক একটা পদক্ষেপই বলা চলে। অন্তত বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে। বাংলাদেশ দলটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ততটা শক্তপোক্ত নয়।
এমন একটা দলের তাইতো খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসা ছাড়া আর তেমন কোন উপায় খোলা থাকে না। অন্যদিকে র্যাংকিংয়ে আফগানরা খুব ভাল অবস্থানে না থাকলেও, তারা বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ। বিশ্বের যেকোন দলকে হারিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে রশিদ খানের দলের।
মূল অস্ত্র বোলিং, সেই সাথে বিধ্বংসী টপ অর্ডার। তবে এদিন বাংলাদেশের বোলাররা বেশ সতর্ক। কোন রকম সুযোগই দেননি তারা আফগানিস্তানের টপ অর্ডারকে। শুরুর দিকটায় বেশ আঁটসাঁট বোলিং লাইনে চাপে পড়ে যায় আফগানিস্তান। প্রথম উইকেট শিকার নাসুম আহমেদের।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে, তাসকিন, শরিফুল, সাকিবরা উইকেট তুলে নিয়েছেন। কোন রকম জুটি গড়বারই বিন্দুমাত্র সুযোগ দিতে নারাজ যেন বাংলাদেশের বোলাররা। ১৪ তম ওভারের শেষ বলে, নাজিবুল্লাহ জাদরান আউট হলে, ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
সেখান থেকে বড় লক্ষ্য ছুড়ে দেওয়া আফগানিস্তানের জন্যে বেশ কঠিন কাজই মনে হচ্ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের বোলারদের এদিনের বোলিং পারফরমেন্সের কারণে। কিন্তু তখনও অভিজ্ঞতায় ঠাসা মোহাম্মদ নবী ছিলেন বাইশ গজে। তিনি নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এলেন। সাথে যুক্ত হলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
এরপরই এলোমেলো হতে শুরু করে বাংলাদেশের বোলিং। মূলত তাসকিন আহমেদের করা ১৭ তম ওভার থেকেই শুরু। যেখানে ১৪০ ও কঠিন মনে হচ্ছিল, সেখানে ১৫০ রানের লক্ষ্যের দিকেই ছুটতে থাকে আফগান দুই ব্যাটার। তাসকিনের সেই ওভারে ১৪ রান আসে। যা আবার ইনিংসের সর্বোচ্চ। ঠিক যে কারণে আফগানদের সমীহ করে গোটা বিশ্ব, সেটারই আরও একটি উদাহরণ মঞ্চস্থ করে নবী-ওমরজাই জুটি।
ভয়ডরহীন ভাবে, নিজেদের পেশিশক্তির ব্যবহারটাই করে গেছেন দুই আফগান ব্যাটার। ওমরজাইয়ের খেলা ১৮ বলে ৩৩ রানের ইনিংসটিই মূলত আফগানিস্তানকে শুরুর ধাক্কাটা সামলে বেশ ভাল একটা সংগ্রহের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। নবী আর ওমরজাইয়ের জুটি ভাঙে ১৪৩ রানে। যার মধ্যে, ১৭ থেকে ১৯ এই ৩ ওভারেই দুইজনে মিলে নিয়েছেন ৪২ রান।
শেষের ৫ ওভারে যেন বাংলাদেশের বোলাররা দিশেহারা। অসহায়ের মত আফগান তাণ্ডব অবলোকন করে গেছেন তাসকিন, সাকিব, মুস্তাফিজরা। রান দিয়েছেন ৬০। শেষমেশ, ১৫৫ রানে টার্গেট ছুড়ে দিতে সক্ষম হয় মোহাম্মদ নবীর দল। এক্ষেত্রে কৃতীত্ব নবীও পেতে পারেন। কেননা ব্যাটিং ব্যর্থতার কিনারা থেকে দলকে তুলে নিয়ে গেছেন দূর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরি করে।
যে ইতিবাচকতা নিয়ে বাংলাদেশ শুরু করেছিল নিজের বোলিং ইনিংস, সেখান থেকে খানিকটা পা হড়কেই গেছে বাংলাদেশ। এখন ব্যাটারদের দায়িত্ব হড়কানো পা-কে স্থিতিশীল করে, জয়ের ধারা অব্যাহত রাখা।