হৃদয়-শামীমের ব্যাটে চড়ে জয় বাংলাদেশের

এক ম্যাচে দু’দফা ব্যাটিং বিপর্যয়। সেখান থেকে ম্যাচের মোড় ঘুরেছেও দু’দফা। তবে শেষমেশ জয়ের হাসিটা হেসেছে বাংলাদেশ। উৎকণ্ঠায় শেষ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েও বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ২ উইকেটে। স্নায়ুচাপের শেষটায় টাইগারদের স্বস্তির নিঃশ্বাস।

টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের। আবহাওয়া আর একাদশ বিবেচনায়, সেটাই তো করবার কথা। সাকিব আল হাসানের নেওয়া সেই সিদ্ধান্তের সফলতার প্রমাণ মেলে শুরুতেই। চেপে ধরা যায় আফগানিস্তানের টপ অর্ডারকে। প্রথমে আঘাত করেন নাসুম আহমেদ।

হজরতউল্লাহ জাজাইকে ফেরান তিনি। সেখান থেকেই বাংলাদেশ একটা ইতিবাচক শুরুই পায়। নিজেদের পক্ষে থাকা মোমেন্টামকে হাতছাড়া হতে দেননি বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। একমাত্র মেহেদী হাসান মিরাজ ছাড়া প্রত্যেকেই অন্তত একটি করে উইকেট বাগিয়েছেন নিজেদের পকেটে।

তবে সেসবের আগে নিজের স্বরুপে ফেরার রাস্তা ধরতে শুরু করেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তবে তাকেও খুব বেশিক্ষণ টিকতে দেননি তাসকিন আহমেদ। দারুণ ক্যাচ লুফে নিয়ে তাকে সহয়তা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর নিজের পছন্দের ইব্রাহিম জাদরানের উইকেটটি আবারও নিজের করে নেন শরিফুল ইসলাম। ব্যাটিং বিপর্যয়ে দাঁড়িয়ে তখন আফগানিস্তান।

৩২ রানেই নেই ৩ উইকেট। ৫২ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর, জুটি গড়ার দিকে মনোযগ দেন আফগানিস্তানের ব্যাটাররা। যার নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ নবী। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে সাথে নিয়ে তিনি ২৫ রানের ছোট্ট একটি জুটি গড়েন। তবে নাজিবুল্লাহও বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি নবীকে।

৮৭ রানে ৫ উইকেট হারানো আফগানিস্তান, ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে নবী ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের জুটিতে ভর করে। সেই জুটিতে আসে ৫৬ রান। যার ৩৩ রানই আসে ওমরজাইয়ের ব্যাট থেকে। মাত্র ১৮ বলে ১৮৩ স্ট্রাইকরেটে খেলা ইনিংসটিই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। লড়াই করবার মত পুঁজি পেয়ে যায় আফগানিস্তান। সেটাকে বাড়িয়ে নেন নবী।

১৫৪ রানে থামে আফগানিস্তানের ইনিংস। ৪০ বলে ৫৪ রানের দায়িত্বশীল এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ নবী। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। ১৫৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা সিলেটের মাঠের গড় রানের কাছাকাছি। তবে সেটাও দুষ্কর হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্যে। কারণটা আর অজানা নয় নিশ্চয়ই।

আফগানিস্তানের দূর্দান্ত বোলিংয়ের তোপে, শুরু থেকে বিপাকে পড়ে সাকিবের দল। ফজল হক ফারুকি উপড়ে ফেলেন রনি তালুকদারের উইকেট। ব্যাট-প্যাডের বিশাল ফাঁক গলে বল গিয়ে আঘাত করে স্ট্যাম্পে। তখনও ব্যাটিং বিপর্যয়ের শঙ্কা জাগেনি। তবে ভাগ্য যেন সহায় হতে চাইলো না।

সাম্প্রতিক সময়ে দূর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত, আউট হন পিঠে লেগে এরপর বল স্ট্যাম্পে আঘাত করলে। তার কিছুক্ষণ পরেই লিটনের আবারও সেই পুল শটের বলি। ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে পুল খেলতে গিয়ে বাইশ গজের কাছেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তখন ভীষণ চাপে।

সিলেট স্টেডিয়াম ভরা দর্শকদের মাঝে ছড়িয়ে যায় উৎকণ্ঠা। তা ঠেলে দিয়ে খানিকটা প্রশান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে কেবল শুরুই করেছিলেন সাকিব। তবে পরিকল্পনা করে পাতা ফাঁদে তিনি আটকা ডিপ পয়েন্টে। বিপর্যয় তখন অবশ্যম্ভাবী।

কিন্তু সেখান থেকে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখান শামীম হোসেন পাটোয়ারী ও তাওহীদ হৃদয়। দুইজনে মিলে গড়েন ৭৩ রানের জুটি। খেলা তখন হাতের মুঠোয় বাংলাদেশের। একটু তাড়াতাড়িই যেন ম্যাচ শেষ করতে চাইলেন শামীম। রশিদ খানকে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৫ বলে ৩৩ রান করে। তাতে অবশ্য ক্ষতি তেমন একটি হয়নি বাংলাদেশের।

বিপর্যয় সামলে ওঠা শামীম-হৃদয় জুটিই জয়ের শক্ত ভীত গড়ে দেয়। সেটার উপর দাঁড়িয়ে জয়টা শেষমেশ নিশ্চিত করেন শরিফুল ইসলাম। তবে মাঝে অবশ্য আবার পেন্ডুলামের মত ম্যাচের ভাগ্য চলে যায় আফগানিস্তানের পক্ষে। হ্যাট্রিক উইকেট নিয়ে করিম জানাত ম্যাচে উত্তেজনা বাড়ান। তাতে টলেনি বাংলাদেশের জয়ের ভাগ্য। তাওহীদ হৃদয় শেষ অবধি ছিলেন অপরাজিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link