বেসবল, বাস্কেটবল কিংবা রাগবি, গলফ— আমেরিকায় জনপ্রিয় খেলা এ গুলোই। সাঁতার, অ্যাথলেটিক্স, ফুটবলেও অবশ্য মার্কিনদের কম আগ্রহ নেই। কিন্তু বাইশ গজের ক্রিকেট এত দিন ছিল ব্রাত্য। জনপ্রিয়তার দৌড়ে এবার সেই ক্রিকেটও যুক্ত হচ্ছে।
জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে প্রথম বারের মতো ডালাসে শুরু হয়েছে মেজর লিগ ক্রিকেট। আমেরিকায় ক্রিকেট! নতুনত্বতায় বিস্ময়সূচক শব্দ বসাতেই হচ্ছে।
তবে আরো বিস্ময় বাড়িয়ে দেয় যখন জানা গেল, আমেরিকায় ক্রিকেট কিন্তু মোটেই নতুন কোন বিষয় নয়। ১৮শ শতাব্দীতে এই আমেরিকাতেই ছিল ক্রিকেটের বিচরণ। এমনকি জর্জ ওয়াশিংটনের পছন্দের তালিকাতেও ছিল এই ক্রিকেট।
তাছাড়া আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামসও তাঁর এক বক্তব্যে ক্রিকেটের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে অজানা কারণে ক্রিকেট টা আর আমেরিকায় পরিণত পর্যায়ে যায় নি।
সেই স্রোতে ক্রিকেট খেলাটা ব্রাত্যই থেকে যায় আমেরিকার ইতিহাসে। তবে দিন বদলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বলছে, ‘এই মুহূর্তে প্রায় ২ লক্ষ ক্রিকেটার রয়েছে আমেরিকাতে।’
শুধু তাই নয়, আমেরিকায় স্থানীয়, ঘরোয়া মিলিয়ে প্রায় ৪০০ টা লিগ চালু রয়েছে। এ ছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত টুর্নামেন্ট তো আছেই।
হার্ডবল, টেপবল, সফটবল এমনকি ইন্দোর ক্রিকেটেও দেখা মিলছে আমেরিকার উঠতি ক্রিকেটারদের। বছর দুয়েকের মধ্যে, আমেরিকায় ক্রিকেটে রীতিমত এক বৈপব্লিক পরিবর্তনই হচ্ছে বলা চলে।
এর আগে শুধু আন্নাদালে, ভার্জিনিয়া রাজ্য থেকেই মিলত ক্রিকেটের সব সামগ্রী। তবে ক্রিকেট আমেরিকার এখন নিজস্ব ব্যবস্থাপনা আছে এ সব সামগ্রীর। এরই মধ্যে তাঁরা একটা ব্র্যান্ডও উন্মোচন করেছে। যার নাম জি-পিকে।
আমেরিকায় ক্রিকেটের বিস্তৃতির জন্য অন্যতম পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব ভাবা হয় মাজহার শাহ কে । পাকিস্তানি-আমেরিকান এই ভদ্রলোক ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন অঞ্চলে প্রথমে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। এরপর থেকেই মূলত খেলাটা সমগ্র আমেরিকায় ছড়িয়ে যায়।
স্থানীয় ক্রিকেটারদের ভাষ্যমতে, মাজহার শার স্মরণে এখনো একটি টুর্নামেন্ট আমেরিকায় প্রচলিত আছে। আজাদী কাপ নামের সে টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচের ম্যাচ সেরার জন্যও রয়েছে অভিনব এক পুরষ্কার। প্রতি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়কে দেওয়া হয় উমরাহ যাত্রার জন্য একটি বিমান টিকিট।
মূলত দক্ষিণ এশীয়দের জন্যই আমেরিকায় ক্রিকেট এতটা বিস্তৃতি লাভ করেছে। এই যেমন আলোচিত মেজর লিগ ক্রিকেটের সফল উদ্যোগের পিছনে রয়েছে ভারতের অগ্রগণ্য ভূমিকা।
এবারের এমএলসিতে অংশগ্রহণকারী ছয় দলের মধ্যে চারটির মালিকানাতেই আছে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি— কলকাতা নাইট রাইডার্স, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, চেন্নাই সুপার কিংস ও দিল্লী ক্যাপিটালস।
এমএলসির সাথে যুক্ত রয়েছেন ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী দ্য টাইমস গ্রুপ এবং মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলার মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
একটি ক্রিকেট ম্যাচ জমিয়ে তুলতে দর্শকের বিকল্প নেই। এমএলসিতে সেই দর্শক বাজারেও রয়েছে দক্ষিণ এশিয়দের আধিপত্য। যে টেক্সাসে এমএলসির প্রথম ম্যাচ গড়াল, সেই টেক্সাসে প্রায় রয়েছেন প্রায় ১০ লাখের মতো ভারতীয় নাগরিক। একই ভাবে হাউস্টনেও রয়েছে পাকিস্তানিদের আধিপত্য।
এমএলসির বেশির ভাগ ম্যাচও রয়েছে এই দুটি শহরে। যার কারণ এমএলসির প্রতি ম্যাচের গ্যালারি থাকছে পূর্ণ। যার মধ্যে সিংহভাগ রয়েছেন দক্ষিণ এশীয় প্রবাসী। মূলত তাদের কারণেই আমেরিকায় ক্রমান্বয়ে ক্রিকেট জনপ্রিয় খেলা হয়ে উঠছে।
সবে শুরু। এখনও অনেক টুকু পথচলা বাকি। শুরুর এই ধারাটা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জই এখন আমেরিকার সামনে। তবে এই কিছু পথ এগিয়ে গেলে, উঠে দাঁড়াবে আমেরিকার ক্রিকেট। বর্তমানে জনপ্রিয়তার যে জোয়ার, তাতে হয়তো এবার আর ইতিহাস গর্ভে ক্রিকেটকে হারাতে চাইবে না আমেরিকানরা।