ইউরোপীয়ান ফুটবলে এখন সবচেয়ে চর্চিত বিষয় সম্ভবত সৌদি আরব। ইউরোপের ফুটবল মৌসুম শুরু হতে এখনও সময় বাকি। মাঝে জমজমাট দলবদল। তবে ইউরোপের ক্লাবগুলোকে ছাপিয়ে এই দলবদলে প্রধান খেলোয়াড়ে পরিণত হচ্ছে সৌদির ক্লাবগুলো।
প্রায় প্রতিটা খেলোয়াড়কে সৌদি আরবের বিভিন্ন ক্লাবে সংযুক্তির একটা হিড়িক পড়েছে। সর্বশেষ চক্ষু চরকগাছ হওয়ার মত এক কাণ্ড করে বসেছে আল হিলাল। সৌদি আরবের এই ক্লাবটি খুব করে চেয়েছিল সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকে নিজেদের শিবিরে যুক্ত করতে।
তবে সেখানটায় ক্লাবটি হয়েছে ব্যর্থ। তবে একজন তারকা খেলোয়াড়কে যেন তাদের চাই-ই চাই। সেজন্যই রেকর্ড পরিমাণ অর্থের লোভনীয় প্রস্তাব ছুঁড়ে দিয়েছে কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্য। এই সময়ের অন্যতম তারকা ও প্রতিভাবান খেলোয়াড় ফ্রান্সের এই তারকা। ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছেন তিনি। রানার্স আপও হয়েছেন এক দফা।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপে একাই প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিলেন মেসির আর্জেন্টিনাকে। তবে টাইব্রেকারে থমকে যায় তার ভাগ্য। কিন্তু তাতে অবশ্য এমবাপ্পের চাহিদা কমেনি এক ছটাক। বরং ১৮ ডিসেম্বরের সেই পারফরমেন্সের কারণেই তার বাজার দর বেড়েছে হুহু করে। ইউরোপে তার ভীষণ চাহিদা। সেই চাহিদার সাথে পেরে ওঠা দায়। তাইতো আল হিলাল ছুঁড়ে দিয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব।
তাতে এমবাপ্পের বর্তমান ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) অবশ্য সম্মতিও জানিয়েছে। কেননা পুরো অর্থই তো যাবে ক্লাবের কোষাগারে। তাছাড়া বছরে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ইউরো বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে এমবাপ্পেকে। স্রেফ এক বছরের চুক্তিতেও তিনি চাইলে পা রাখতে পারেন সৌদি আরবের মাটিতে।
কিন্তু গুঞ্জন আছে গোপেন তিনি রিয়াল মাদ্রিদের সাথে চুক্তি করে রেখেছেন। আগামী বছরেই পিএসজির সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে এমবাপ্পের। তখন তিনি ‘ফ্রি এজেন্ট’। পিএসজির ধারণা, রিয়াল মাদ্রিদে ফ্রি-তেই যেতে চান এমবাপ্পে। তাতে অবশ্য লোকসানটা হবে প্যারিসের ক্লাবটির। কেননা এমবাপ্পেকে বিক্রির কোন অর্থই যে তখন ক্লাব পাবে না।
পিএসজি তাই উঠে-পড়ে লেগেছে এমবাপ্পেকে এই মৌসুম শুরুর আগেই বিক্রি করে দিতে। এমবাপ্পেও অবশ্য নাছোড়বান্দা। সদ্যই সফলতার মুখ দেখা এমবাপ্পে এখনই ইউরোপ ছেড়ে যেতে চান না। আর এক বছর প্যারিসে থেকে গেলে ৬০ মিলিয়ন ইউরো বোনাস হিসেবে পাবেন এমবাপ্পে। সুতরাং কোনভাবেই এমবাপ্পে এখন পিএসজি ছাড়তে রাজি নন।
এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান ক্লাবের সাথে তার সম্পর্কের ক্রমশ অবনতিই হচ্ছে। এমবাপ্পে না চাইলে তাকে বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাছাড়া খেলোয়াড় যখন ক্লাবকে স্রেফ ব্যবহার করতে চাইবে, তখন ক্লাবও তাকে খুব একটা নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে চাইবে না। এমন পরিস্থিতিতে, এমবাপ্পেকে আগামী মৌসুমের পুরোটা সময়ই দেখা যেতে পারে সাইডবেঞ্চে।
কালেভদ্রে তাকে মাঠে হয়ত নামানো হবে। একেবারেই গড়িমসি করলে পিএসজি হয়ত এমবাপ্পের সাথে তাদের বাকি থাকা চুক্তি বাতিল করবে। সেক্ষেত্রে এই বছরের পুরো বেতনাদি পরিশোধ করে দিতে হবে ক্লাবটিকে। সেটাই বরং ক্লাবের জন্য হতে পারে বেশ স্বস্তিদায়ক। কেননা অবিক্রিত এমবাপ্পে সময়ের সাথে সাথে গলার কাটা থেকে ইনফেকশনে পরিণত হতে পারে।
অন্যদিকে, রিয়াল মাদ্রিদ বেশ নিশ্চুপ, এমবাপ্পের এই পুরো ঘটনায়। কিন্তু বেশ কিছু ইংলিশ ক্লাব এমবাপ্পের জন্য ছুটবে বলেও গুঞ্জন চাওড় হয়েছে ইউরোপ জুড়ে। তবে আল হিলালের এত বিপুল অর্থের প্রস্তাব পিএসজিকে খানিকটা বিপাকেই ফেলেছে। দলটা নিশ্চিতরুপেই এখন অন্য সব প্রস্তাব মনঃপুত হবে না। কিন্তু তবুও এমবাপ্পেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া চাই।
অথচ বছর খানেক আগেও পিএসজির সকল পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এমবাপ্পে। এমনকি ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে এমবাপ্পেকে সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। তবুও যেন মন আর টিকছে না তরুণ এই তারকার। তিনি যেন নিজেকে নতুন এক চ্যালেঞ্জে দিকে ছুঁড়ে দিতেই সবচেয়ে বেশি আগ্রহী।
এমবাপ্পের এই ‘ট্রান্সফার সাগা’ আরও বেশ ক’টি মোড় নেবে। সময় গড়াবার সাথে সাথে নতুন নতুন সব পাতা যুক্ত হবে। শেষ অবধি এমবাপ্পের ভাগ্যই আর পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে তার ভবিষ্যৎ।