ফোকাস, ফোকাস অ্যান্ড ফোকাস!

বলা যায় এখনও তাঁর কেবলই শুরু। ক্যারিয়ারে মোটে দুটো টেস্ট, চারটে ইনিংস, একটা অর্ধশতরান। তাই, ভবিষ্যদ্বানী করা কঠিন।

তাতেই যেটুকু স্পার্ক দেখা গেছে তাতে এটুকু বলাই যায় যে সবকিছু ঠিকঠাক চললে ভারতের শুভমন গিল লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারেন। সাধারণ ক্রিকেট প্রেমী থেকে বিশেষজ্ঞমহল সবাই একবাক্যে একথা স্বীকার করছেন।

শুভমন গিলের টেকনিক, ফুটওয়ার্ক যথেষ্ট ভালো, কিছু শটতো চোখে লেগে থাকে, তবে আমরা অর্থাৎ সাধারন ক্রিকেট প্রেমীরা খুব তাড়াতাড়ি যে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে যাই। সেই হিসেবে গিলকে নিয়েও স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করে দিয়েছি।

কিন্তু মিস্টার গিল, আপনার প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ রইলো যে আপনি ঘুনাক্ষরেও এসবে প্রভাবিত হবেন না। আপনার বয়সের থেকে বেশি সময় ধরে ক্রিকেট দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আজ যারা বাহবা দিচ্ছে, মাথায় তুলে নাচচ্ছে, আপনার একটা বা দুটি সিরিজ খারাপ গেলেই কিন্তু এরা সার্জেই বুবকার থেকেও দ্রুত গতিতে ডিগবাজি খেয়ে যাবে। এই সাধারন ক্রিকেট প্রেমী, যে কোনো ধরনের সংবাদ মাধ্যম, এবং ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একাংশ ততক্ষণই আপনার সঙ্গে আছে যতক্ষণ আপনার ব্যাটে রান আছে।

এখনো একটাও শতরান বা সেই অর্থে বড় ইনিংস কিন্তু আসেনি। টেস্টে তারাই গ্রেট ব্যাটসম্যান যারা একবার সেট হয়ে যাওয়ার পরে সহজে আউট হয় না, ৩০/৪০ গুলোকে ১০০ তে পরিবর্তন করতে পারে। আপনার চারটে ইনিংসেই কিন্তু আপনি প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে, সেট হয়ে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। যেটা একদমই ভাল লক্ষণ নয়।

আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটি খেলোয়াড়ের প্ৰকৃত মূল্যায়ন শুরু হয় কিন্তু দ্বিতীয় বছর থেকে। যখন বিপক্ষ আপনার খেলা কাটাছেঁড়া করে মাঠে নামবে, আপনার দূর্বলতার হাতে-গরম নথি বোলারদের হাতে থাকবে আর তারা সেই অনুযায়ী বল করবে। সেই সময় সেই প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে রান করতে পারাটাই আসল চ্যালেঞ্জ। আশা করবো আপনি সেই পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হবেন, বিশ্বাস করি আপনার সেই ক্ষমতা আছে।

আর একটা জিনিস একদমই ভুলবেন না, এই সিডনি টেস্টে আপনি বা আপনারা যখন ব্যাট করছিলেন তখন আপনার বা আপনাদের জন্য জল ও তোয়ালে নিয়ে একটা ছেলে বারবার মাঠে ঢুকছিল, যে দু বছর আগে এই অস্ট্রেলিয়াতেই আপনার মতোই একটা ভীষন সফল অভিষেক ঘটিয়েছিল, যার টেস্ট গড় প্রায় পঞ্চাশ কিন্তু আজ স্থান রিজার্ভ বেঞ্চে।

তাই আপনার ‘ক্ষিদ্দা’ যেন আপনার কানে একটাই মন্ত্র ঢুকিয়ে দেন, ‘ফোকাস, ফোকাস অ্যান্ড ফোকাস’। এর বাইরে কিচ্ছু নেই। সৌরভ গাঙ্গুলীর অনুভূতি ধার করে বলি, বাইশ গজে যখন ওই উইলোর টুকরোটা নিয়ে দাঁড়াবেন তখন দেখবেন ওখানে আপনি ভীষণ একা!

আপনার চারপাশে মিডিয়া, বন্ধু, বিশেষজ্ঞ, কোচ – কেউ নেই, আছে শুধু ওই পরম বন্ধু একটুকরো উইলো। একমাত্র ওটাকেই বিশ্বাস করুন। আপনার যুদ্ধ জয়ের একমাত্র সঙ্গী। বাঁচালে ওই বাঁচাবে আর মারলে ওই মারবে। তাই ওর প্রতি ফোকাস না হারিয়ে শুধু ওটার প্রতি মনোসংযোগ করুন। বিশ্বাস করি আপনি পারবেন। অনেক শুভেছা রইলো, আপনার প্রতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link