রেকর্ড গড়া এক ‘স্থূলকায়’ গল্প

শরীরী ভঙ্গিমা কিংবা শট সিলেকশন— তাঁর ব্যাটিং টেকনিকে মিলেছিল শচীনের ছাপ। ভারতের হয়ে শুরুতে সেই আস্থার পরিস্ফূরণ ঘটিয়েছিলেন তিনিও। কিন্তু এরপরই বাইশ গজের বৃত্ত থেকে কেন্দ্রচ্যূত হয়ে পড়লেন তিনি। ব্যাটার হিসেবে পরিণত হয়ে ওঠার আগেই ঝরে পড়লেন। বলা হচ্ছে পৃথ্বী শ’য়ের কথা। 

পারফর্মার, তবে বড্ড অধারাবাহিক। সাথে ফিটনেস মানদণ্ডেও দিনকে দিন পিছিয়ে পড়ছিলেন। সর্বশেষ আইপিএলে নিজেকে রাঙাতে ব্যর্থ হলেন। সাদামাটা ব্যাটিংয়ের ধারা অব্যাহত থাকল দুলীপ ট্রফিতেও। সব মিলিয়ে সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছিল না পৃথ্বী শ’র। 

তবে দীর্ঘকাল ধরে অবিরত বাজে সময়ের অবসান যেন এ ব্যাটার ঘটালেন এক ইনিংস দিয়েই। কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেটের বিপক্ষে খেললেন ২৪৪ রানের ইনিংস। ১৫৩ বলের যে ইনিংসটিতে ছিল ২৮ চার ও ১১ ছক্কার মার।

পৃথ্বী শয়ের এমন দুর্দান্ত ইনিংসে অনুমিত ভাবেই জয় পেয়েছে নর্দাম্পটনশায়ার। পৃথ্বীর ২৪৪ রানের ইনিংসের সুবাদে ৪১৫ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ গড়ে নর্দাম্পনশায়ার। সেই রান তাড়া করতে নেমে লক্ষ্য থেকে ৮৮ রানের আগে থেমে যায় সমারসেটের ইনিংস। ফলত, ৮৭ রানের জয় পায় নর্দাম্পটনশায়ার। 

লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ইতিহাসের পৃথ্বী শয়ের চেয়ে বড় ইনিংস রয়েছে আরো ৫ টি। গত বছর বিজয় হাজারে ট্রফিতে তামিলনাড়ুর হয়ে অরুণাচল প্রদেশের বিপক্ষে ১৪১ বলে ২৭৭ রানের ইনিংস খেলে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন ভারতের নারায়ণ জগদিশান। 

তবে লিস্ট এ ক্রিকেট ইতিহাস বিবেচনায় পৃথ্বী শ’য়ের এ ইনিংসটি সেরা পাঁচে না ঢুকতে পারলেও ইংল্যান্ডের মাটিতে এটি আবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। পৃথ্বীর চেয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে বড় ইনিংস খেলেছেন একজনই। তিনি অ্যালি ব্রাউন। 

২০০২ সালে ওভালে চেলটেনহাম অ্যান্ড গ্লস্টারশায়ার ট্রফিতে গ্লমারগনের বিপক্ষে ১৬০ বলে ২৬৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সারের সাবেক এ ক্রিকেটার। 

এর আগেও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন পৃথ্বী শ। ২০২১ সালের বিজয় হাজারে ট্রফিতে মুম্বাইয়ের হয়ে ১৫২ বলে অপরাজিত ২২৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।  

পৃথ্বী শয়ের এমন দুর্দান্ত ইনিংসের পর কি তবে তাঁর জাতীয় দলের দ্বার উন্মুক্ত করে দিল? প্রশ্নটা এখন উঠতেই পারে। তবে বাস্তবতা বলে, পৃথ্বীর জন্য এখন জাতীয় দলের পথটা কঠিনই বটে। 

তাছাড়া, নিজের স্থূলতা, ফিটনেস ইস্যুতে এমনিতেই বিবেচনার বাইরে আছেন তিনি। অবশ্য ক্রিকেট বিশ্বে ফিটনেসহীন গ্রেট ক্রিকেটার যে নেই, তা নয়। পাকিস্তানের ইনজামাম উল হক ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের প্রতাপ দেখিয়েছেন বছরের পর বছর। 

কিন্তু সে সব অতীতের ব্যাপার। তখনকার সময়ে ফিটনেস অতটা প্রাধান্যে ছিল না। কিন্তু সময়টা বদলে গিয়েছে। এখন ফিটনেস ক্রিকেটারদের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য অন্যতম মানদণ্ড। তাই পৃথ্বী শ’র জন্য কাজটা এখন মোটেই সহজ নয়। 

ভারতের তারুণ্য কেন্দ্রিক, উঠতি ক্রিকেটারদের ভিড়ে তাঁকে জায়গা করে নেওয়ার দৌড়ে এখনও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। তবেই একটা প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারেন অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি হাঁকানো এ ব্যাটার। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link