একটা খবর বেশ ঢালাও ভাবে প্রচারিত হচ্ছে সর্বত্র। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অনুশীলনে গণমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ঘটনাটা আদোতে পুরোপুরি সত্য নয়। তবে হ্যা, এ কথা সত্য যে গণমাধ্যমের কার্যপরিধি সংকুচিত করা হয়েছে।
এর পেছনের কারণটা কি? এমন একটা প্রশ্ন আসা বেশ স্বাভাবিক। নিশ্চয়ই পেছনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। একটা বিষয় অবশ্য মেনে না নিয়ে উপায় নেই; বাংলাদেশের গণমাধ্যম ঠিক যতটা কাছে থেকে জাতীয় দলের অনুশীলন পর্যালোচনা করে, ঠিক ততটা কাছে থেকে বা নিয়মিত অনুশীলনের খবরাখবর নিতে পারেননা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাংবাদিকরা।
তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটটা বেশ ভিন্ন। এখানে প্রতিটা মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি হয়। কয়েকশ জোড়া অনুসন্ধানী চোখ অসংগতি খুঁজে বেড়ায়। আর তাতে অনেক সময় ইতিবাচক খবর প্রচারের চাইতে, নেতিবাচকতাই সম্প্রচারিত হয়। সেটা টেলিভিশন হোক কিংবা অনলাইন। আর বেশ কিছুদিন এমনটা হোক তা চাননা বাংলাদেশের প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে।
তাইতো তার নির্দেশেই বিসিবি জানিয়ে দিয়েছে গণমাধ্যম কেবল ১৫ মিনিট সময় পাবে অনুশীলনের ছবি, ভিডিও সংগ্রহ করবার। তবে এই ঘটনা কিন্তু নতুন নয়। ফুটবলের দুনিয়ায় এটা হরহামেশাই ঘটে থাকে। আবার বিভিন্ন সিরিজ ও বড় টুর্নামেন্টের আগে ক্রিকেটেও এমন রুদ্ধদ্বার অনুশীলন হয়ে থাকে। তবে এত আগেভাগে হয় কেবল ফুটবলেই।
ফুটবলে অবশ্য কৌশলগত দিক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মাঠের ফরমেশন থেকে শুরু করে, খেলার ধরণ সবকিছুই একটা দলের সাফল্যের অন্যতম নিয়ামক। সেসব লোকচক্ষুর আড়ালেই রাখতে চান ফুটবল কোচরা। তবে ক্রিকেটে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় কৌশলগত পরিকল্পনা। কেননা ক্রিকেট অনেকটাই ব্যক্তিগত পারফরমেন্স নির্ভরশীল। তাছাড়া ট্যাকটিক্যাল পরিবর্তনও সহসাই চোখে পড়ে না।
তবে হ্যা, একজন খেলোয়াড়ের দূর্বলতা থাকতে পারে নানান রকম। কোচ চান্দিকা হয়ত তার খেলোয়াড়দের সেই দূর্বলতাগুলো ফলাও করে প্রচার হোক তেমনটা চাননা। তাছাড়া খেলোয়াড়রা ঠিক কোথায় উন্নতি করেছে সেটাও জানতে দিতে নারাজ লংকান এই কোচ।
বরং টুর্নামেন্টের ময়দানে তিনি চমকে দিতে চান প্রতিপক্ষকে। হয়ত যেই দূর্বলতায় আঘাত করবে বলে প্রতিপক্ষ পরিকল্পনা করেছিল, সেই দূর্বলতাকেই শক্তিতে পরিণত করে ফেলতে চান চান্দিকা ও তার শীষ্যরা।
আর তারা যে তেমনটি করে ফেলেছেন, সেটা গণমাধ্যমের সহয়তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক- তেমনটা না হতে দেওয়াও বেশ স্বাভাবিক একটি বিষয়। সর্বোপরী বাংলাদেশ ক্রিকেটের বৃহৎ স্বার্থ রক্ষার্থে এমন পদক্ষেপ ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করা উচিত।
তাইতো ১৩ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে রুদ্ধদ্বার অনুশীলন। নিয়ম মেনে গণমাধ্যমে সময়ে পেয়েছে ১৫ মিনিট। যদিও এদিন মাঠের অনুশীলন করেনি টাইগাররা। বৃষ্টির বাঁধার কারণে খেলোয়াড়রা মাঠে নামেননি। বরং তারা ড্রেসিং রুমে বসে প্রতিপক্ষদের নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পর্যালোচনা করে নিজেদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো ঠিক করেছেন।
এমন রুদ্ধদ্বার অনুশীলন চলবে আরও তিন দিন। বাংলাদেশ এবার এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। ২০১২ ও ২০১৮ এর দুঃখস্মৃতি ভুলে আনন্দের নতুন এক অধ্যায় লিখতে চায়। অন্তত এই ‘ক্লোজডোর’ অনুশীলনগুলোই সেই মুহূর্তগুলো এনে দিতে সহয়তা করুক। তেমনটাই তো প্রত্যাশা সকলের।