এশিয়ার সেরা হতে বাংলাদেশের পাঁচ চ্যালেঞ্জ

মহাদেশীয় মহারণের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কখনোই পরা হয়নি বাংলাদেশের। এক বার নয়, দুই বার নয়, তিন তিনবার ফাইনালের মঞ্চে পা রাখলেও শেষটা হয়েছে হতাশায়, আক্ষেপকে সঙ্গী করে। তাই এশিয়া কাপ জিততে টিম টাইগার্সের ক্ষুধাটা ক্রমেই বেড়েছে।

১৯৮৬ সালে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বে যেবার বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের মঞ্চে খেলতে নামলো, তখন অংশগ্রহণ করাটাই দারুণ অর্জনের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছিল। তবে সে সময় পাল্টেছে। বদলে গিয়েছে বাংলাদেশ দলটার চেহারা।

তাদের চোখ এখন আর অংশগ্রহণের মধ্যে আটকে নেই, শিরোপা জয়ের আতিশায্যেও ডুব দিতে চায় তাঁরা। তাই বরাবরের মতোই এবারও শিরোপায় চোখ বাংলাদেশের। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সেই লক্ষ্য পূরণে সফল হবে কিনা, তা সময়ই বলে দিবে। তবে আপাতত সেই পথে বাংলাদেশের সামনে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ।

এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশের খেলা সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজটাই ফেরা যাক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সে সিরিজে বাংলাদেশ কিন্তু ২-১ এ পরাজয় বরণ করেছিল। অর্থাৎ, এশিয়া কাপ শিরোপা স্বপ্নে বাংলাদেশ বিভোর থাকলেও বাস্তবতাটা হচ্ছে, সিরিজ হারের স্মৃতিকে সঙ্গী করেই বাংলাদেশ এশিয়া কাপের মঞ্চে পা রাখতে যাচ্ছে।

এ ছাড়া, আরেকটি ভাবনার বিষয় হলো, এশিয়া কাপ দিয়ে একদিনের ক্রিকেটে আবারো নেতৃত্বে ফিরছেন সাকিব। অধিনায়কত্বের এমন হঠাৎ পালা বদলে বাংলাদেশ কতটা উপকৃত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই।

নিয়মিত ওপেনার তামিম ইকবাল ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়েছেন আগেই। তবে এবার সেই মিছিলে যোগ দিয়েছেন আরেক ওপেনার লিটন দাসও। জ্বরের কারণে শেষমেশ মাঠের বাইরেই থাকতে হচ্ছে এ ব্যাটারকে। তাঁর জায়গায় অবশ্য কপাল খুলেছে এনামুল হক বিজয়ের।

এখন এটা অনুমিতই যে, এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করতে দেখা যাবে নতুন ২ জনকে। সেটা হতে পারে, নাইম শেখ- তানজিদ তামিম জুটি অথবা এনামুল হক- নাইম শেখ/ তামিম জুটি। এখন প্রশ্ন হ্ছে, নিয়মিত ২ ওপেনারের অনুপস্থিতিতে অন্য জুটি দেশের বাইরে এসে সফল হবেন তো?

এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেলেও বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাববা জিইয়ে রেখেছিলেন পেসার এবাদত হোসেন। কিন্তু চিকিৎসকের ছুরি, কাচির নিতে যেয়ে এবার শুধু এশিয়া কাপ নয়, বিশ্বকাপ স্বপ্নও ভাঙতে বসেছে এবাদতের। অথচ শেষ এক বছরে ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট পেয়েছিলেন এই এবাদতই। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এবাদতকে ছাড়াই খেলতে হবে বাংলাদেশকে।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশে এখনও সুরাহা হয়নি, কে খেলবেন সাতে? পরিসংখ্যান বলছে, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের হয়ে সাত নম্বরে সবচেয়ে বেশি ব্যাট করেছেন আফিফ। তবে সেই আফিফ কিন্তু পুরোপুরি ছন্দে নেই। এমনকি এই একটি জায়গার দৌড়ে যারা রয়েছেন, তাঁরা কেউই ততটা সাতে সফল নন। তাই টাইগার টিম ম্যানেজমেন্টকেও সাত নম্বর পজিশন নিয়ে সমাধানের রাস্তায় পা ফেলতে হবে দ্রুতই।

বড় আসরে ফিল্ডিং বরাবরই গুরুত্বপূরণ একটা ফ্যাক্টর। তবে এই একটা ইউনিটেই বাংলাদেশ বেশ ক’বার পা হড়কেছে। অবশ্য এবার আর পুরোনো আসরের ফিল্ডিং ব্যর্থতায় তিক্ততার গল্প লিখতে চায় না বাংলাদেশ।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ যে তিনবার ফাইনালে খেলেছে, সেই তিনটি ফাইনালেই ছিলেন তামিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু এবারে আর জায়গা হয়নি তাদের। তামিম বাদ পড়েছেন ইনজুরিতে। আর রিয়াদকে বলতে গেলে একরকম বাতিলের খাতাতেই ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে উত্তরণ ঘটানো রিয়াদের জন্য এখন বেশ কঠিনই বটে।

তবে বাংলাদেশের এবারের দলটা তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে একদম পূর্ণ। এমন একটা দলকে নিয়ে সাকিব এশিয়া জয়ের পথে চোখ রাখতেই পারেন। তবে বাংলাদেশকে সেই পথে যেতে হলে এই সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়েই যেতে হবে। তবেই হবে এশিয়া জয়, সেই ধারাবাহিকতায় হয়তো বিশ্বজয়ও।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link