২০১৫ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটে ঘটেছিল এক ধ্রুবতারার আবির্ভাব। ধ্রুবতারার দ্যুতি সে সময় সীমানা ছাড়িয়েছিল বাংলাদেশ গণ্ডির বাইরেও। সাকিবের পর বহুদিন বাদে বাংলাদেশি কোনো ক্রিকেটার আইপিএলে হয়েছিলেন আলোচিত এক নাম। শুধু আইপিএল নয়, ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে রীতিমত হয়ে উঠেছিলেন ফেরিওয়ালা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই ধ্রুবতারার নাম মুস্তাফিজুর রহমান।
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা মুস্তাফিজ এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে পরিণত এক নাম। এরই মধ্যে একদিনের ক্রিকেটে নিজের ঝুলিতে যোগ করেছেন ১৫৬ টি উইকেট। বলাই বাহুল্য, ৮ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি এখন বাংলাদেশ দলের একজন সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবেই বিবেচিত হন।
তবে সময়ের ব্যবধানে মুস্তাফিজের বোলিং দীপ্তি কমেছে না বেড়েছে সেটিই এখন বড় এক প্রশ্ন। বাংলাদেশের বর্তমান পেস বোলিং ইউনিটে তিনিই কি তর্কাতীত ভাবে সেরা? এই প্রশ্নের উদয় হতো না বছর দুয়েক আগেও। মূলত, পুরনো মুস্তাফিজের কাটার রহস্য এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ। তাঁর দুর্বোধ্য বোলিং তত্ত্ব এখন অনেক ব্যাটারের কাছে সহজবোধ্য।
তবে মুস্তাফিজের পুরনো সেই ধার কমলেও এবারের বিশ্বকাপ জুড়ে তাঁকে ঘিরেই থাকছে বাংলাদেশের আকাশসহ প্রত্যাশা। কারণ ভারত বিশ্বকাপের কন্ডিশন দলের অন্যান্য ক্রিকেটারের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হলেও, মুস্তাফিজের জন্য তা পুরনো অভিজ্ঞতাই বটে। আইপিএল খেলার সৌজন্যে প্রতি মৌসুমেই যে মুস্তাফিজকে এই কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতে হয়।
তবে ভারতের কন্ডিশন মুস্তাফিজুরের জন্য অচেনা না হলেও, ভারতের মাটিতে কখনোই ওয়ানডে ম্যাচ খেলা হয়নি তাঁর। যদিও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের মাটিতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একবার ফাইফার পেয়েছিলেন এ পেসার।
মুস্তাফিজকে নিয়ে বড় এক সমালোচনায় বিষয়বস্তু হলো, তিনি যতটা দেশের মাটিতে সফল, ঠিক ততটাই ব্যর্থ বিদেশের মাটিতে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫৬ উইকেটের মধ্যে ৮৮ টি উইকেটই তিনি পেয়েছেন বিদেশের মাটিতে।
শুধু তাই নয়, হোম এন্ড ভিত্তিতে তাঁর বোলিং গড় প্রায় এক। দেশের মাটিতে তাঁর বোলিং গড় ২৮.৬৬। আর বিদেশের মাটিতে সে সংখ্যাটা ২৮.৬৭। তবে, বিদেশের মাটিতে কিছুটা খরুচে মুস্তাফিজ। দেশের মাটিতে ৪.২৬ ইকোনমিতে বল করা মুস্তাফিজের বিদেশের মাটিতে ৫.৭১।
মুস্তাফিজের জন্য বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা মোটেই নতুন নয়। এবারের বিশ্বকাপ দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো খেলতে যাচ্ছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এ ছাড়া ৩ টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। বৈশ্বিক আসর তাই মুস্তাফিজের জন্য মোটেই আনকোরা কোনো বিষয় নয়।
বরং বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বরাবরই নিজের একটা ছাপ রেখেছেন মুস্তাফিজ। আগের বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২০ টি উইকেট নিয়েছিলেন এ পেসার। যার মধ্যে ছিল দুটি ফাইফার। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সে বারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হারলেও, মুস্তাফিজ বল হাতে ছিলেন বেশ সফল। ঐ দুই ম্যাচেই নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।
তবে মুস্তাফিজকে নিয়ে সম্ভাবনার বিপরীতে শঙ্কার ব্যাপারও রয়েছে। শেষ দুই বছরে বল হাতে বেশ গড়পড়তা বোলিংই করেছেন তিনি। এ সময়কালে ২৫ ম্যাচে ২৯ টি উইকেট পেয়েছেন তিনি। তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে বড় প্রতিপক্ষগুলোর বিপক্ষে বল হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি দ্য ফিজ।
অবশ্য এই সব শঙ্কা ছাপিয়ে মুস্তাফিজকে নিয়ে সম্ভাবনার গল্পেই দেখতে চায় গোটা বাংলাদেশ। দ্য ফিজের কাটার বিষে স্ট্যাম্প ছত্রখান হওয়ার দৃশ্যেই চোখে আটকে থাকবে সবার।