কান্না থেকে উচ্ছ্বাস, ব্যবধান এক বিশ্বকাপ

কান্না জর্জরিত এক মুখচ্ছবি থেকে উচ্ছ্বাসের আগ্রাসন। সময় বদলে যায়, মানুষ বদলায়, বদলায় অনুভূতি। তবে তার পেছনে থাকে অজস্র গল্প। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার গল্প। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আবার উঠে দাঁড়াবার শক্তি সঞ্চয় করতে হয়। দৌড় শুরু করতে হয় নিজের সবটুকু দিয়ে। সবাই সেটা পারেন না। তাসকিন আহমেদ ঠিকই পেরেছেন।

ইনজুরি আর অফফর্মে জাতীয় দল থেকে বহুবার ছিটকে জেতে হয়েছে তাসকিন আহমেদকে। বছর চারেক আগে বিশ্বকাপের দলে জায়গা না হওয়ায় কেঁদেছিলেন গণমাধ্যমের সামনেই। সেই তাসকিন এখন বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের অন্যতম সেনানী। সেনাপতি হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায় তাকে।

তপ্ত রোদে, উতপ্ত বালুতে দৌড়ে বেড়িয়ে কটাক্ষও হজম করতে হয়েছে। তবে তিনি যখন আগের থেকেই পরিণত হয়ে ফিরলেন, তখন সব হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তাসকিন নিজের পারফরমেন্স দিয়েই সে সবকে মুহূর্তেই গায়েব করে দেন।

ধারাবাহিকভাবে বিগত বছরগুলোতে তিনি পারফর্ম করে গেছেন। নিজের বোলিংয়ে বৈচিত্র‍্য এনেছেন। সাথে নিজের ব্যাটিংয়েরও উন্নতি করেছেন। দলের জন্য যা কিছু ভাল সব করবারই প্রচেষ্টা করেছেন তাসকিন। দলের জন্য সবটুকু নিঙড়ে দিতেই নিজেকে করেছেন ‘সুপার ফিট’।

তাইতো তার উপরই থাকছে আস্থা। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান অস্ত্রই তাসকিন। বিশ্বকাপেও তার উপর বাড়তি দায়িত্বই থাকবে। তাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের। তাছাড়া এবারের বিশ্বকাপে অধিকাংশ ম্যাচই হবে ফ্ল্যাট উইকেটে।

সেসব উইকেটে সাধারণত ব্যাটাররাই সুবিধা পেয়ে থাকেন সবচেয়ে বেশি। স্পিনারদের তেমন কিছু করবার সুযোগ থাকে না। বাংলাদেশের পেসারদেরই তাই প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করতে হবে। তার সম্মুখভাগেই নিশ্চয়ই থাকবেন তাসকিন আহমেদ।

আউট সুইং, আর গতির মিশেল, সেই সাথে কার্যকর সব বাউন্সের তাসকিন প্রতিপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখার সামর্থ্য রাখেন। তাছাড়া প্রয়োজনে ইয়োর্কারে একেবারে উপড়ে ফেলতে পারেন তাসকিন। সেই সামর্থ্যও রয়েছে তার। লেন্থের তারতাম্যও তাসকিনের বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করা। এসবকিছু মিলিয়েই তাসকিন হয়ে উঠতে পারেন ভয়ংকর।

তবে তার ভাগ্যের সহয়তা প্রয়োজন পড়তে পারে। তার থেকেও বেশি প্রয়োজন হবে সতীর্থদের সহয়তা। তার করা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে সতীর্থদের ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ার নজির আছে ভুড়িভুড়ি। কিন্তু বিশ্বকাপে এমনটি হোক তাসকিন নিজেও সম্ভবত তা চান না। দলও নিশ্চয়ই এমনটি হোক তা প্রত্যাশা করে না। কেননা বিশ্বকাপের মহামঞ্চে সুযোগ তো আসবে বেশ অল্প।

তাসকিনের বোলিং ছাড়াও তার ব্যাটিংটা বাংলাদেশের জন্য একটু হলেও স্বস্তির কারণ। কেননা শেষের দিকে বাংলাদেশী ব্যাটারদের দ্রুতই প্যাভিলিয়নে ফেরার একটা চর্চা রয়েছে। যা বেজায় দৃষ্টিকটু। তবে সেদিক থেকেও তাসকিন খানিকটা নিজেকে আলাদা করতে পেরেছেন। তার ব্যাটিংটা ভরসাযোগ্য।

তাছাড়া শেষের দিকে দু’চার খানা বড় শট খেলার সামর্থ্যও রয়েছে তাসকিনের মধ্যে। এসব কিছু মিলিয়ে তাসকিন এক ভরসার নামে পরিণত হয়েছেন। বিশ্বকাপের এই ১৫ সদস্যের দলে নিয়মিতই তাসকিনকে দেখা যাবে। স্রেফ ইনজুরি এসে গণ্ডগোল না পাকিয়ে দিলেই হয়।

অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও তার উপর আস্থা রাখছেন। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার এবারের বিশ্বকাপে তাসকিনকে দেখছেন অন্যতম সেরা উইকেটশিকারি বোলারদের একজন হিসেবে। তেমনটিও হোক সবাই অন্তত সেই প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link