ছন্দে থাকলে অপ্রতিরোধ্য মিলার

ডেভিড মিলারের ক্যারিয়ার আসলে এভাবেই এগিয়ে চলছে; খানিকটা আড়ালে, খানিকটা গোপনে তিনি নিজের কাজটা করে যান।

অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ, ৪৫ বলে অনবদ্য ৮২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ডেভিড মিলার। কিন্তু দিনশেষে হাততালি পেয়েছে হেনরিখ ক্ল্যাসেনের ১৭৪ রানের অতিমানবীয় ইনিংস। পরের ম্যাচে ৬৩ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৬৫ রান করেছন ঠিকই, তবে লাইমলাইটে উঠে এসেছে মার্কো জানসেনের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স।

ডেভিড মিলারের ক্যারিয়ার আসলে এভাবেই এগিয়ে চলছে; খানিকটা আড়ালে, খানিকটা গোপনে তিনি নিজের কাজটা করে যান। নিজের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপেও হয়তো এভাবে দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে চাইবেন প্রোটিয়া দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই সদস্য।

ক্যামেরার ফোকাস নিয়ে মোটেই আগ্রহ নেই মিলারের। তাই তো ওপরের দিকে খেলা নিয়েও কোন আক্ষেপ নেই তাঁর। তিনি বলেন, ‘আমাদের টপ সিক্স আসলে বিশ্বসেরা। ডি কক, মার্করাম এরা সহজেই বাউন্ডারি হাঁকাতে পারে। ডুসেন তো প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়, এদের সাথে ক্ল্যাসেন আছে। আমি নিশ্চিত কোচ আমাকেও একাধিক ম্যাচে উপরের দিকে খেলাতে চাইবে, কিন্তু আপাতত আমাদের ব্যাটিং অর্ডার বেশ সুসংহত।’

গত কয়েক বছরে ডেভিড মিলার অন্য রকম ফর্মে আছেন। ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যে ব্যাটারের গড় ছিল ৩৮.৭, সে এখন ব্যাট করে প্রায় ৬১ গড়ে। আর স্ট্রাইক রেট ১০০.১৩ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪.১৫ এ। অথচ ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে ব্যাটিং পজিশনের অবনতি ঘটেছে এই তারকার; এখন পাঁচ বা এর নিচে নামেন তিনি।

নিজের এমন ফর্ম নিয়ে মিলার জানান, ‘আমি অনেকদিন ধরেই আছি। আমার যা পছন্দের সেসব করছি। যখন একটু খারাপ সময় যায়, সবাইকেই সেটা প্রভাবিত করে। কিন্তু আমি ধরে নি যে আমি ফর্মে আছি। আর গত চার বছর ভাল ক্রিকেট খেলছি, যতদিন আমার শরীর সুস্থ থাকবে ততদিন খেলব।’

লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলায় ম্যাচ ফিনিশের গুরু দায়িত্ব এই বাঁ-হাতির উপরেই পড়ে। কিন্তু শেষদিকে রান তোলার গতি বাড়ানো কঠিন মনে হয় না তাঁর কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি বলবো না এটা(হার্ডহিটিং) খুব কঠিন। আগের চেয়ে এখন ভাল বুঝতে শিখেছি যে কখন হাত খুলতে হবে। কেননা কখনো বোলিং পিচে ওভারে ছয় রান লাগতে পারে, কখনো আবার ওভারে বারো রান। দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু আপনাকে ম্যাচ শেষ করে আসতে হবে।’

অবশ্য সবসময় নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন ডেভিড মিলার। তিনি বলেন যে, ‘আমি যখন সেট থাকি তখন এটা বিশ্বাস করি আমাকে কেউ থামাতে পারবে না। এটা মাথায় গেঁথে রাখতে পারাটাই আসল।’

পাঁচ বা এর চেয়ে নিচের পজিশনে খেলা কোন ব্যাটসম্যানই ডেভিড মিলারের ব্যাটিং গড় ছুঁতে পারেনি। আবার তাঁর সমান স্ট্রাইক রেট আছে কেবল সতীর্থ ক্ল্যাসেনের। মিলারের ২৭ ইনিংসে অর্ধশতক আছে ১১টি – পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই হয়তো এমন ধারাবাহিক মিডল অর্ডার ব্যাটার পাওয়া যাবে না।

এ ব্যাপারে প্রোটিয়া তারকা মনে করেন, ‘ আমি ব্যাটিং করার সময় বোলার আগেই ভয়ে ভয়ে থাকে। আমার শুধু ধৈর্য ধরে বাজে বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করতে হয়। এমনটা করতে পারলে বোলার দ্রুত পরিকল্পনা পরিবর্তন করে, যা হিতে বিপরীত হয়। আমাদের বোলারদের জন্য পরামর্শ থাকবে তাঁরা যেন সহজে পরিকল্পনায় বদল না আনে।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান দল অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ। বিশ্বকাপ জেতার তাই এটাই সেরা সুযোগ তাদের জন্য। সেটা মাথায় আছে মিলারেরও, গত আসরের বাজে পারফরম্যান্স ভুলে এবার নিজের সেরাটা দিবেন – এটাই প্রত্যাশা এই মারকুটে ব্যাটসম্যানের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...