তুরুপের তাস নাসুম আহমেদ

শেষপর্যন্ত সেই দ্বৈরথে জিতেছেন নাসুম, বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের স্বপ্ন সারথিদের একজন এখন তিনি।

বিশ্বকাপ দলে কে থাকবেন, নাসুম আহমেদ নাকি তাইজুল ইসলাম – এমন একটি অঘোষিত দ্বৈরথ গত প্রায় এক বছর থেকে চলছিল। শেষপর্যন্ত সেই দ্বৈরথে জিতেছেন নাসুম, বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের স্বপ্ন সারথিদের একজন এখন তিনি। কেন অভিজ্ঞ তাইজুলের চেয়ে তাঁর উপর বেশি ভরসা করছে টিম ম্যানেজম্যান্ট সে উত্তর অবশ্য ইতোমধ্যে দিয়েছেন তিনি।

এবারের এশিয়া কাপেই প্রথমবার ওয়ানডেতে বড় কোন টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন নাসুম আহমেদ। সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যখন একাদশে জায়গা পান তখন পারফর্ম করতে কোন আপস করেননি তিনি। সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গেলেও এই বাঁ-হাতি নিজের কাজটা করেছিলেন ঠিকঠাক।

পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে তো জয়ের অন্যতম নায়কই বলা যায় নাসুমকে। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে সেদিন গুরুত্বপূর্ণ ৪৪ রান করেন তিনি। এরপরই বিশ্বকাপ দলে তাঁর জায়গা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়, সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে বাকি অনিশ্চয়তাটুকুও দূর করে দেন এই স্পিনার।

সিলেটের এই ক্রিকেটারের প্রধান বৈশিষ্ট্য রক্ষণাত্বক বোলিং। উইকেটের এক পাশ থেকে টানা ডট বল আদায় করে ব্যাটসম্যানের উপর চাপ সৃষ্টি করেন তিনি, ফলে অন্য পাশ থেকে উইকেট তোলা সহজ হয়।

তাঁর ক্যারিয়ারের দিকে তাকালেই ব্যাপারটা স্পষ্ট; বারো ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মাত্র ৩.৯১ ইকোনমিতে বোলিং করেছেন, এছাড়া মেডেন ওভার করেছেন বারোটি। বিদেশের মাটিতে আরো কিপটে এই বোলার, পাঁচ ম্যাচ খেলে ওভারপ্রতি মাত্র ৩.২৫ রান খরচ করেছেন তিনি।

তাই বলে উইকেট তোলার ক্ষেত্রেও কম যান না নাসুম। ৩১.৫ গড়ে এখন পর্যন্ত ১২টি ওয়ানডে উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এখনো এক ইনিংসে চার উইকেট পাওয়ার স্বাদ না পেলেও তিন উইকেট পেয়েছেন দুইবার।

সাকিব, মিরাজদের সঙ্গে জুটি গড়ে লাল-সবুজের স্পিন আক্রমণকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন এই তারকা। তাই তো জেনুইন স্পিনার হিসেবে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা পছন্দ তিনি। বিশ্বকাপেও বেশ কিছু ম্যাচে তাঁকে খেলাবে টিম ম্যানেজম্যান্ট। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারলে প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে যাবে টিম টাইগার্স।

তাইজুল ইসলাম বা অন্য কোন স্পিনারকে না খেলিয়ে নাসুমকে খেলানোর সবচেয়ে বড় সুবিধা বোধহয় তাঁর ব্যাটিং। পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার বলা না গেলেও ব্যাটার নাসুম মোটেই ফেলনা নন। অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে ১৮ রান কিংবা এশিয়া কাপে একই দলের বিপক্ষে ৪৪ তাঁর ব্যাটিং দক্ষতার প্রমাণ দেয়।

সেজন্যই আট নম্বরে নাসুম আহমেদকে জায়গা দিলে ব্যাটিং নিয়ে খুব একটা ভাবতে হবে না বাংলাদেশকে। আর বোলিংয়ে তো তিনি ভরসা করার মতই একজন, লাল-সবুজ জার্সিতে অভিষেকের পর থেকে পারফরম্যান্সের জন্য বাদ পড়েননি।

ফ্লাইট, গতির ভ্যারিয়েশন, টপ স্পিন – প্রথাগত অফ স্পিনের সাথে এসবও আছে নাসুমের ভান্ডারে। ফলে তাঁকে আক্রমণ করাটা সহজ হয় না কোন ব্যাটারের জন্যই। এমনকি পাওয়ার প্লেতেও এই বাঁ-হাতিকে ব্যবহার করতে পারেন অধিনায়ক সাকিব; তবে মাঝের ওভারগুলোতে রান আটকানোর দায়িত্বটাই সম্ভবত বেশি পালন করতে হবে।

দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতের পিচে স্পিনাররা সাহায্য পাবেন সেটা আন্দাজ করাই যায়। আর তেমনটা হলে বাংলাদেশের তুরুপ তাস হতে পারেন নাসুম আহমেদ। তাঁর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফাঁদে আটকা পড়তে পারে বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটার, তিনি নিজেও নিশ্চয়ই শান দিয়ে নিচ্ছেন নিজের বোলিংয়ে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...