ট্রলের পাত্র থেকে ধারাবাহিকতার মূর্তমান প্রতীক

বাইশ গজে দারুণ একটা সময় পার করছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকেই তিন সংস্করণে ধারাবাহিকতার মূর্তমান প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। অথচ একটা সময় পর্যন্ত ছিলেন ট্রলের পাত্র, সমর্থকদের শত বিরক্তির কারণ। তবে সেখান থেকে নিজের উত্তরণ নিজেই ঘটিয়েছেন শান্ত। প্রতিনিয়ত পারফর্ম করার অসম চাপ থেকে বেরিয়ে ব্যাট হাতে চওড়া হাসিই যেন হয়ে উঠেছে শান্তর রোজকার রূপ।

এশিয়া কাপে দুটি ইনিংস খেলেছিলেন শান্ত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতকের পথে হেঁটেও ৮৯ রানে থেমেছিলেন। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আর আগের ম্যাচের আক্ষেপ রাখেননি। ১০৪ রানের ইনিংসের মাধ্যমে তুলে নেন চলতি বছরের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তবে সেঞ্চুরির পরেই আসে দুঃসংবাদ। চোটে পড়ে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যান শান্ত।

চোট কাটিয়ে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে তিনি যখন আবার খেলায় ফিরছেন, তখন শান্তর কাঁধে নেতৃত্বের ভার। তবে সে ভারে আর তিনি নুয়ে পড়েননি। খেলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব একটি ইনিংস। বিশ্বকাপের আগে সেটিই ছিল শান্তর খেলা শেষ ইনিংস। পুরো বছর জুড়ে দুর্দান্ত ফর্ম যার ব্যাটে, সেই শান্তকে নিয়ে বিশ্বকাপে প্রত্যাশা ছিল আকাশ ছোঁয়া। নাজমুল হোসেন শান্ত সেই প্রত্যাশাকে ছুঁতেই যেন ছুটলেন।

ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে করলেন ফিফটি। অপরাজিত ৫৯ রানের ইনিংসের মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপ অভিষেকটা রাঙালেন বাঁ-হাতি এ ব্যাটার। তবে তাতেও যেন তৃপ্ত নন নাজমুল হোসেন শান্ত। এ নিয়ে শেষ ৪ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩ হাফসেঞ্চুরি করা শান্তর ব্যক্তিগত লক্ষ্যটা যেন আরেকটু দূরে। গোটা বছরের ফর্মটাকে তিনি ছাপিয়ে যেতে চান বিশ্বকাপের মঞ্চে। কারণ বিশ্বকাপই যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যাওয়ার সবচেয়ে বড় মঞ্চ।

ওয়ানডে ক্রিকেটে শান্তর অভিষেক সেই ২০১৮ সালে। তবে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না বহুদিন ধরে। নিজের প্রথম ১৫ টা ইনিংসে নেই একটিও ফিফটি। সময়টা এই গত বছরের নভেম্বরে ভারত সিরিজেই। ততদিন পর্যন্ত একটিও ফিফটি না পাওয়া শান্ত নিজেও কি ভেবেছিলেন, মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে তিনি হয়ে উঠবেন দলের সবচেয়ে আস্থাভাজন ব্যাটার? খুব সম্ভবত না।

তবে নিজেকে দেখিয়ে দেওয়ার একটা কিক সব সময়ই নিশ্চয় ছিল। সে জন্যই নিজের ১৬ তম ইনিংসে এসে সেই যে অর্ধশতকের মুখ দেখলেন, এরপর থেকে বড় ইনিংস খেলার দিকেই চোখ এ ব্যাটারের। চলতি বছরে ১৫ টা ইনিংসে ৭৫৭ রান করেছেন। যেখানে দুই সেঞ্চুরি আর ৬ হাফসেঞ্চুরিতে গড়টা নিয়ে গেছেন ৫৪.০৭-এ।

এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩০ ইনিংসকে যদি দুই ভাগে ভাগ করা যায় তাহলে দেখা যায়, তাঁর প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ১৪। আর পরের ১৫ ইনিংসে ব্যাটিং গড় গিয়ে ঠেকেছিল ৫৪ তে। আর এতেই একদিনের ক্রিকেটে এখন ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করার দ্বারপ্রান্তে শান্ত। আর ৩৩ টি রান করলেই তিনি এ মাইলফলকে পৌঁছে যাবেন।

দারুণ ছন্দে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য সেটা ধরে রাখা একটা চ্যালেঞ্জ। শান্ত নিজেও সেটা জানেন। তবে সমালোচনার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে যেভাবে তিনি মেলে ধরেছেন, সেটাই যেন বিস্ময়ে ডুব দেওয়ার মতো একটা ব্যাপার। ট্রলের পাত্র থেকে এখন তিনি অন্যতম আস্থার প্রতীক। এই ইতিবাচক বৈপরীত্বে ভরা প্রক্রিয়ায় শান্ত নিশ্চিত ভাবেই বাইশ গজে এক লড়াকু যোদ্ধার নাম। যোদ্ধার এই তরবারির আগ্রাসন চলতে থাকুক স্রোতোবহা নদীর মতো।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link