টিভির পর্দায় কিংবা পত্রিকার পাতায় আপনি সাকিব আল হাসানকে দেখেন। আবার রাস্তার পাশে বিশাল সব বিলবোর্ডেও সাকিবকে দেখতে পাওয়া যায় হরহামেশাই। তিনি নানানরকম ব্র্যান্ডের সাথে জড়িত। বৈচিত্র্যময় সব প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তিনি।
স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত মুখ সাকিব। ঠিক সে কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে যুক্ত করতে চায় নিজেদের সাথে। তবে সাকিবও দিনশেষে মানুষ। তিনি আর কতই বা সময় দেবেন! তাইতো বাকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ছোটেন অন্যসব খেলোয়াড়দের পেছনে। যেহেতু খেলোয়াড়রাই সর্বজন সমাদ্রিত।
সেদিক থেকে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের দেখা যায় বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে। বছর তিনেক আগে শেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা মাশরাফি বিন মর্তুজা এখনও বিজ্ঞাপনের জন্যে বিবেচিত হন। তরুণদের মধ্যে তাসকিন আহমেদ, নাজমুল হোসেন শান্তরাও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ‘মুখ’ হিসেবে যুক্ত হচ্ছেন। তবে এদিক থেকে লিটন যেন রয়েছেন বেশ পিছিয়ে।
তর্কসাপেক্ষে লিটন কুমার দাস বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটারদের একজন। অন্তত ক্ল্যাসিকাল ঘরোনায় তার মত দৃষ্টিনন্দন ব্যাটার খুব কমই পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। তাছাড়া তিনি বেশ সুদর্শনও। তবুও বিজ্ঞাপনের মুখ তিনি হতে পারেন না। এর পেছনেও নিশ্চয়ই কোন না কোন কারণ রয়েছে।
তবে সর্বপ্রথম যেই বিষয়টি সামনে আসে, তা হচ্ছে অধারাবাহিকতা। লিটন দাসকে বেশ উঁচু মানের ব্যাটার হিসেবেই আসলে বিবেচনা করা হয়। তবে তিনি তার ক্যারিয়ার জুড়েই বেশ অধারাবিক। কখনো একা হাতে দলকে ম্যাচ জিতিয়ে দেন। আবার কখনো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ফেরেন একেবারেই খালি হাতে। ধারাবাহিকভাবে পারফরম করা খেলোয়াড়রা নিয়মিত থাকেন চর্চায়।
তাইতো ব্র্যান্ডগুলো ধারাবাহিক খেলোয়াড়দের যুক্ত করতে চান নিজেদের সাথে। উদাহরণ হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্তকেই সামনে টেনে নিয়ে আসা যায়। তিনিও একটা সময় ব্যর্থতার বেড়াজালে আটকে ছিলেন। তবে তিনি ফিরেছেন। স্রেফ ফর্মে ফিরেই যে তিনি ক্ষান্ত হয়েছেন তা নয়। তিনি ধারাবাহিকভাবে দলের পক্ষে খেলে গেছেন। লোকমুখে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। নিয়মিত আলোচনায় তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।
ঠিক সে কারণেই নতুন পণ্যের বিজ্ঞাপনে দেখা মিলেছে শান্তর। তবে ওই যে ধারাবাহিকতার অভাবেই আসলে লিটন ব্র্যান্ডগুলোর অনীহার পাত্র। তাছাড়া আরও একটি বিষয় নিশ্চয়ই ‘ব্যাক অব দ্য মাইন্ড’ কাজ করে লিটনের ক্ষেত্রে। মিডিয়া সামাল দেওয়ার বিষয়ে লিটন খুব একটা সিদ্ধহস্ত নয়।
বিশ্বকাপ চলমান অবস্থান তিনি ভারতের মাটিতে স্বদেশী সাংবাদিকদের টিম হোটেল থেকে বের করে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটিয়েছেন। যদিও তিনি পরবর্তীতে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে লিটনের মিডিয়ার বিমুখ হওয়ার উদাহরণ স্রেফ এটাই নয়। তিনি আসলে মিডিয়া থেকে নিজেকে একটু আড়ালেই রাখতে চান। ব্যক্তিগতভাবে তিনি তেমনটা করতে চাইতেন পারেন।
তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এটা লিটনের জন্যেই ক্ষতির কারণ। অন্তত আর্থিকভাবে তো লিটন ক্ষতিগ্রস্ত হন। কোন পণ্যের প্রচারে সবচেয়ে অগ্রণি ভূমিকা থাকে মিডিয়ার। আর লিটন মিডিয়া বিমুখ বলেই সম্ভবত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পছন্দের তালিকায় তিনি থাকেন না।
তাছাড়া বড় দায়িত্বও হয়ত হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল হচ্ছে লিটনের জন্যে। এশিয়া কাপে তিনি সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছন। তবে বিশ্বকাপে তাকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যদিও এর পেছনের কারণ হিসেবে তাকে নির্ভার থাকার বিষয়টি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে মাশরাফি, সাকিব, তামিমরা নিজেদের খারাপ দিনেও দারুণভাবেই মিডিয়া সামলেছেন। সে কারণেই দেশের বিজ্ঞাপনের বাজারে তাদের কদর কমেনি।
লিটন খুব সম্ভবত কোন কোন ক্ষেত্রে নিজের সমালোচনাও সহ্য করতে পারেন না। সেসব কারণেই গণমাধ্যমে তীর্যক সব উত্তরও দিয়েছেন তিনি নির্দ্বিধায়। কিন্তু আখেরে লিটনের খুব একটা ফায়দা হচ্ছে না এসবে। তিনি বরং সমালোচিত হচ্ছেন বেশি, আর ঢাকা পড়ে যাচ্ছেন পর্দার আড়ালে।