লাখ টাকা খরচ করে বিদেশি কোচ লাভ কি?

মিরপুরের ইনডোরে নাজমুল আবেদীন ফাহিম ভাইয়ের সঙ্গে তিন ঘণ্টার সেশন করেছেন সাকিব আল হাসান।  শুধু ব্যাটিং নিয়েই কাজ হয়েছে। আরও দু’দিনের পরিকল্পনা আরও লম্বা সময়, প্রায় পুরো দিন ধরে নিবিড়ভাবে কাজ করা। এরপর নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ম্যাচ খেলতে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন অধিনায়ক।

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সেই শৈশবের কোচের কাছেই যদি ফিরতে হয়, তাহলে এত লাখ লাখ টাকা খরচ করে এত এত বিদেশি কোচিং স্টাফ রেখে লাভ কি?

খুবই যুক্তিসিদ্ধ প্রশ্ন। তবে এটাও বুঝতে হবে, প্রতিটি ক্রিকেটারের কিছু ‘কমফোর্ট জোন’ থাকে। তার ভেতর-বাহিরের খবর সবচেয়ে ভালো জানেন ওই শৈশবের কোচ বা বেড়ে ওঠার সময়কার কোচ কিংবা তার ঘনিষ্ঠ কোনো কোচ।

বিদেশি কোচরা অনেক সময়ই কোনো ক্রিকেটারের সমস্যার গভীরে যেতে পারেন না বা ছোটখাটো অনেক কিছু তাদের চোখে পড়ে না। ওই শৈশবের কোচ হয়তো একটু দেখেই তা চট করে ধরে ফেলতে পারেন।

অনেক সময় বিদেশি কোচরা সমস্যা ধরে ফেলতে পারলেও হয়তো উপযুক্ত বা নিশ্চিত সমাধান দিতে পারেন না। কারণ, ক্রিকেট খেলায় একই সমস্যার সমাধান একেকজনের ক্ষেত্রে একেকভাবে কাজ করতে পারে।

ক্রিকেট ইজ অল অ্যাবাউট অ্যাডজাস্টমেন্টস। এই মানিয়ে নেওয়ার ধরন একেকজনের একেকরকম। একেক সমস্যায় সাড়া দেওয়ার ধরন একেকরকম। রান করার ধরন একেকরকম।

কখনও কখনও বিদেশি কোচ কোচ কোনো সমস্যা ধরে সমাধান বাতলে দিলেও ওই ক্রিকেটার হয়তো তা মন থেকে মেনে নিতে পারেন না বা নিজেকে সুনিশ্চিত করে বোঝাতে পারেন না। কারণ, ক্রিকেট খেলাটায় কোনো একটি দিকে সামান্যতম অ্যাডজাস্টমেন্ট করা বা কিছু ফাইনটিউন করতে গেলে আবার অন্য দিকে টান পড়তে পারে।

বেসিক টেকনিক্যাল কোনো কিছুতে বিদেশি কোচদের পরামর্শ গ্রহণ করা নিয়ে তাই কখনও কখনও দ্বিধায় ভোগেন ক্রিকেটাররা। পুরোপরি বিশ্বাস করে উঠতে পারেন না। বিদেশি কোচ তো ওই ক্রিকেটারের সবটুকু জানেন না।

কিন্তু শৈশবের কোচ সবটুকু জানেন। কাজেই তিনি যখন কোনো সমাধান দেবেন, সবদিক ভেবেই দেবেন। একটা শানিত করতে গিয়ে আরেকটি নড়বড়ে হয়ে পড়ার শঙ্কা এখানে কম। ক্রিকেটাররাও তাই বিশ্বাসটা করতে পারেন মন খুলে।

আরও বিশদ ব্যাখ্যা করা যায়। তবে মূল ব্যাপারটা এরকমই।

তবে হ্যাঁ, বিশ্বকাপের মধ্যে দুই ম্যাচের এরকম ছোট বিরতির মধ্যেও যদি এমন জরুরিভাবে দেশে ফিরতে হয় অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটারকে, তখন বিদেশি কোচদের দিকে আঙুল তুলতেই হয়। সমস্যা কিছু হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই হুট করেই হয়নি! কোচরা কি করেছেন তখন?

ক্রিকেট খেলাটাই এরকম যে টানা খেলতে খেলতে নিয়মিত ও মৌলিক অনেক কিছুই নড়ে যায় ওই ক্রিকেটারের অজান্তে। কোচদের দায়িত্ব সেখানেই। তা ধরিয়ে দেওয়া, শুধরে দেওয়া। এত বড় কোচিং স্টাফ তা পারছে কি না, প্রশ্নটি তোলা যায়। আবার, সাকিবের মতো এতটা অভিজ্ঞ ও সমৃদ্ধ একজনের সূক্ষ্ম ঘাটতিটুকু বের করায় ওই কোচিং স্টাফদের সত্যিকারের দক্ষতা কতটা আছে, সেই প্রশ্নও তোলা যায়।

আর হ্যাঁ, আরেকটি ব্যাপার। সাকিব যে দেশে ফিরলেন, একটা দলের অধিনায়ক দেশে ফিরলেন, এটা কিন্তু এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দল থেকে বা বিসিবি থেকে জানানো হয়নি। আমার মনে হয় না, বিশ্বকাপের আর কোনো দলের বোর্ড এরকম কিছু করতে পারে। এবারের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত মাঠের ক্রিকেটে যেমন-তেমন, মাঠের বাইরের পেশাদারীত্বে জঘন্য অবস্থা এই টিম ম্যানেজমেন্টের।

তাসকিনের ইনজুরি নিয়েও যেমন, সে কী লুকোচুরি তাদের! কৌশলগত হলেও বুঝতাম। সেটিও নয়, স্রেফ তাদের ধরণই এমন। মৌলিক তথ্যপ্রবাহের দিক থেকে ভীষণ অপেশাদার এই টিম ম্যানেজমেন্ট।

অথচ সব দলই এসব দারুণ পেশাদারীত্ব নিয়ে সামলায়। প্রায় প্রতিটি স্টেপে তারা অফিসিয়াল আপডেট দেয়, যাতে কোনো বিভ্রান্তি না ছড়ায়। বাংলাদেশের সঙ্গে হার্দিক পান্ডিয়া ইনজুরিতে পড়লেন। ভারতীয় দল থেকে ওই রাতেই তিন দফায় তার আপডেট জানানো হয়েছে। কাজে রঙচঙ মেখে নিউজ করার সুযোগ নেই।

সাকিব দেশে ফিরে মিরপুরে অনুশীলন করলে সেটা কি কখনও লুকিয়ে রাখা সম্ভব? এই যুগে কোনোভাবে সম্ভব? স্রেফ ছোট্ট ২-৩ লাইনের অফিসিয়াল বার্তা দিলেই হয়। তাহলে আর বিভ্রান্তি ছড়ায় না, ট্রল-ফাজলামো হয় না, ক্লিকবেইট নিউজ বা ইচ্ছেমতো মনের মাধুরি মিশিয়ে কিছু বলার সুযোগ থাকে না।

কিন্তু, বিসিবি সেসব করবে না। নিউজও তাই হতে তাকে ইচ্ছোমতো, সোশাল মিডিয়ায় সেসব আরও ডালপালা গজিয়ে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। ঝামেলায় পড়ি আমাদের মতো গুটিকয় লোক, যারা নিশ্চিত না হয়ে বা প্রকৃত কোট ছাড়া নিউজ করতে চাই না। নানা জনকে ফোন করে, অনেক অনুরোধ করে, অনেক চেষ্টায় জানতে পারি কিছু। কখনও সেটাও সম্ভব হয় না।

এমনিতেই আমাদের দেশে সোশাল মিডিয়া গুজবের কারখানা। বিসিবির এসব অহেতুক ও ব্যাখ্যাতীত লুকোচুরি গুজবগুলোকে আরও ডানা মেলার সুযোগ করে দেয়, বার বার।

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link