যে রাতে জিতেছে স্রেফ ফুটবল

এমন একটা দিনের জন্যেই হয়ত কোটি কোটি মানুষ ফুটবলের ভক্ত। 

এমন একটা রাতের সাক্ষী হবে বলেই তো অপেক্ষা। এমন একটা রাতের দেখা পাওয়ার আশায় নির্ঘুন কাটে রাতের পর রাত। এমন একটা রাতের জন্যেই সম্ভবত ফুটবলকে আপন করে নেওয়া। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফুটবল ভক্তদের দিয়েছে ষোল আনা ফিরিয়ে। কি এক জম্পেশ লড়াইয়ের রাত! যে রাতে হারেনি কেউ, জিতেছে কেবলই ফুটবল।

ইউরোপীয়ান ফুটবল বলতে যারা অজ্ঞান, তারা সম্ভবত এ ধরণের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের বড় ভক্ত। তারা সম্ভবত ট্যাকটিকাল ফাইট দেখতে অভ্যস্ত। তারা এই ম্যাচগুলো থেকে নেয় শিক্ষা- জীবনে যা কিছু ঘটুক হার মানা যাবে না। ফুসফুসে থাকা শেষ অক্সিজেন কণা নিঙড়ে দিয়ে হলেও শেষটা অবধি চালিয়ে যেতে হবে চেষ্টা।

রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠ থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফিরেছে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। একেবারে সহজলভ্য অন্তত ছিল না। সান্তিয়াগো বার্নাব্যু-তে সম্ভবত কোন কিছুই সহজ না। প্রত্যাবর্তনের আরও এক অধ্যায় প্রায় লিখেই ফেলেছিল ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা।

পুরো বিশ্বের কোটি-কোটি ভক্তদের কি আর তাতে খায়েশ মেটে! তাইতো ফিল ফোডেন আর জসকো গাভার্দিওলের চোখ ধাঁধানো, নয়ন জুড়ানো বিমার। তখন শঙ্কার কালো মেঘ রিয়ালের আকাশে। ঘরের মাঠে হারতে হবে শেষমেশ! না হারতে হয়নি, ম্যাচ শেষ হয়েছে সমতায়। একটা পাওয়ারফুল ভলি, সিটির গোলরক্ষক ওর্তেগার দর্শক বনে যাওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোন অপশন ছিল না খোলা।

এর আগে তো বার্নার্ডো সিলভার ফ্রি-কিক থেকে গোল, কামাভিঙ্গার দূরপাল্লার শট আর রদ্রিগোর ঠান্ডা মাথার ফিনিশিং হয়ে গেছে মঞ্চায়ন। রোমাঞ্চের বারুদে তখন তাপের তীব্রতা। আগুন লাগিয়েছিলেন তো ফোডেন আর গাভার্দিওল। রাতটা কি সেখানেই হয়েছে শেষ?

না মশাই, ফুটবল তো সব রাতে আপনার পয়সা উসুল করাবে না। যে রাতে করাবে সে রাতে যে পাই পাই পয়সার বিনোদনে একেবারে আপনাকে ডুবিয়ে মারবে। দিনের আরেক ম্যাচেও যে বিনোদনের কমতি হয়নি। সেখানেও হারেনি কেউ, জেতেনি কেউ। লন্ডনের এমিরেটস স্টেডিয়ামে আর্সেনালই গোলের মুখ প্রথমে খুলেছিল। বুকায়ো সাকার পায়ে ভর করেই জয়ের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিল।

সেটা অবশ্য হয়েছিল ক্ষণস্থায়ী। রক্ষণ গলে গোল অভিমুখে সার্জ গ্যানাব্রির শট। ১-১ সমতার ম্যাচটায় শেষ অবধি পেনাল্টি ছড়িয়েছে বিতর্ক। এর আগে অবশ্য সেই পেনাল্টি থেকেই সদ্যই লন্ডন ছেড়ে যাওয়া হ্যারি কেইন দিয়েছেন গোল। ঘরের মাঠে আর্সেনালেরও পরাজয়ের সম্ভাবনা হয়েছিল উজ্জ্বল।

ডি-বক্সের জটলার মধ্য থেকে ত্রাণকর্তা হয়ে বেড়িয়ে এলেন লিয়েন্দ্রো ট্রসার্ড। উদ্দ্যম এক উল্লাসে ফেটে যায় যেন মিকেল আর্তেতার পেছনের গ্যালারি। বার্নাব্যু কিংবা এমিরেটসের সেই চিৎকার ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। উল্লাস হয়েছে, হতাশা জাপ্টে ধরেছে। প্রিয় দল জয় বঞ্চিত হয়েছে, কেউ আবার তাতেই স্বস্তি খুঁজেছে।

স্বস্তি অবশ্যই দিয়েছে বটে। ফুটবল সবসময় স্বস্তির একটা আলতো পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায়। সারাদিনের ক্লান্তি আর বিষাদকে বিদায় জানাতে ৯০ মিনিট যথেষ্ট। এমন একটা দিনের জন্যেই হয়ত কোটি কোটি মানুষ ফুটবলের ভক্ত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...