ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামে একটা ঝড়ই বয়ে গেল বটে। একটা নয়, পাঁচ পাঁচটা। শুরুটা বিরাট কোহলি দিয়ে। এরপর তাঁর পথ ধরে ডু প্লেসি, ম্যাক্সওয়েলদের ব্যাটিং তাণ্ডব। কিন্তু মোক্ষম জবাব জমা রেখেছিল লখনৌর ব্যাটাররাও।
মার্কাস স্টয়নিস পরে ব্যাট করতে নেমে ব্যাঙ্গালুরুর বোলার বলও সমানে পিটিয়েছেন। তারপরও আশা নিরাশার দোলাচলে ঝুলছিল লখনৌ-ব্যাঙ্গালুরুর ম্যাচ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্গালুরুর বোলারদের উপর রীতিমত ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে লখনৌকে ১ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন ক্যারিবিয়ান পাওয়ার হিটার নিকোলাস পুরান। অবশ্য পুরানের অমন ব্যাটিং তাণ্ডবের পরও চোখ রাখতে হয়েছিল ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত।
টসে হেরে এ দিন প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন ব্যাঙ্গালুরুর দুই ওপেনার বিরাট কোহলি আর ফাফ ডু প্লেসি। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র ফায়দা তুলে প্রথম ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই স্কোরবোর্ডে জমা করেন ৫৬ রান।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরও ব্যাঙ্গালুরু ব্যাটিং তাণ্ডব একটুও থামেনি। বরং কোহলি-ডু প্লেসির যুগলবন্দীতে প্রতিরোধই গড়তে পারছিল না লখনৌর বোলাররা। অবশেষে অমিত মিশ্রার বলে প্রথম ব্রেক থ্রু পায় লখনৌ। দলীয় ৯৬ রানে স্টয়নিসের হাত ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বিরাট কোহলি।
অবশ্য আউট হওয়ার আগে তুলে নিয়েছিলেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। ৪ চার আর ৪ ছক্কায় ৪৪ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। কোহলি আউট হওয়ার পর উইকেটে আসেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
কোহলি যেখানে শেষ করেছিলেন , ঠিক সেখান থেকেই আবার শুরু করেন ম্যাক্সওয়েল। সিঙ্গেলের চেয়ে এ দিন বাউন্ডারির উপরে নজর দেন এ ব্যাটার। ২৪ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত থামেন ২৯ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলে। যার মধ্যে বাউন্ডারি থেকেই ৩ চার আর ৬ ছক্কায় এসেছে ৪৮ রান।
কোহলি, ম্যাক্সয়েলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের দিন তাণ্ডব চালান ফাফ ডু প্লেসিও। কোহলির সাথে ইনিংস শুরু করা এ ব্যাটার পেয়েছেন ফিফটি। তবে ফিফটি করেই থামেননি তিনি। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তাঁর অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংসের কল্যাণেই ২০০ পেরোনো স্কোরের দেখা পায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। নির্ধারিত ২০ ওভারে শেষ পর্যন্ত ২১২ রানে থামে তাদের ইনিংস।
২১৩ রানের পাহাড়সহ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোচট খায় লখনৌ সুপারজায়ান্টস। শূন্য রানেই ফিরে যান কাইল মেয়ার্স। ক্যারিবিয়ান এ ব্যাটারের বিদায়ের পরেই বিপত্তির শুরু। ২১ রানের ব্যবধানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে লখনৌ।
ইনিংসের শুরুত এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ে কার্যত সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল লখনৌর। তবে দলকে পথ দেখাতে শুরু করেন মার্কাস স্টয়নিস। প্রাথমিক বিপদ কাটিয়ে পাল্টা আক্রমণে পন্থা বেছে নেন এ অজি ব্যাটার। তাতে সময়ের ব্যবধানে পাশার দানও উল্টে যেতে শুরু করে।
স্টয়নিসের ব্যাটিং তোপে খেই হারিয়ে ফেলে ব্যাঙ্গালুরুর বোলাররা। ক্রমাগত চার ছক্কায় লখনৌর সংগ্রহও তর তর এগিয়ে যাচ্ছিল। এর মাঝে স্টয়নিসও তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। অবশ্য অতি আক্রমণাত্বক অ্যাপ্রোচেই একটা শটে মিস টাইমিং হয়ে স্টয়নির উড়িয়ে মারা বল ক্যাচ হয়ে ধরা দেয় শাহবাজ আহমেদের হাতে ধরা দেয়।
স্টয়নিসের বিদায়ের পর লোকেশ রাহুলও কিছুক্ষণ বাদে সিরাজের বলে আউট হয়ে ফিরে যান। টানা দুই ব্রেক থ্রুতে ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসে ব্যাঙ্গালুরু। তবে তখনও ম্যাচের শেষ চিত্রনাট্য লেখা হয়নি। উইকেটে ছিলেন নিকোলাস পুরান।
আর ক্যারিবীয় ব্যাটারই পরে আকস্মিকভাবে ব্যাঙ্গালুরুর বোলারদের উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে শুরু করেন। আস্কিং রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে দলকেও দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যান। সাথে মাত্র ১৫ বলেই তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। এ দিন সিরাজ থেকে শুরু করে হার্শা প্যাটেল- কেউই পুরানের পেশির জোরে টিকতে পারেননি। আর তাতেই পুরান তাণ্ডবে ম্যাচ জয়ের পথে এগিয়ে যায় লখনৌ।
শেষ পর্যন্ত ১৯ বলে ৪ চার আর ৭ ছক্কায় ৬২ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন পুরান। তবে ততক্ষণে ম্যাচের মোড় ঘুরে গিয়েছে লখনৌর দিকে। পুরান ফিরে গেলেও জয় তুলে নিতে কোনো সমস্যাই হয়নি লখনৌর। যদিও হার্শা প্যাটেলের করা ইনিংসের শেষ ওভারে কিছুটা নাটকীয়তা তৈরি হয়েছিল। এক ওভারে ৫ রানের সমীকরণে তা গড়ায় শেষ বল অবধি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ব্যাঙ্গালুরুর পরাজয় এড়াতে পারেনি।
তবে ম্যাচটাও শেষ হয় চূড়ান্ত নাটকীয়তায়। হার্শা প্যাটেলের করা শেষ বলটা আভেষ খান ব্যাটেই ছোঁয়াতে পারেননি। তবে উইকেটরক্ষকের কাছে বল যাওয়ার সাথে সাথেই প্রান্ত বদল করে ফেলেন দুই ব্যাটার। আর ঐ বাই থেকে আসা একটি রানেই এক উইকেটে জয় পায় লখনৌ সুপার জায়ান্টস।