উপমহাদেশে রাজা-বাদশার সেই শাসনামল হারিয়ে গেছে বহু আগেই। এদেশে এখন শাসন ব্যবস্থা ভিন্ন। আগের মতো বিরাট গোঁফওয়ালা কাউকে দেখা যায় না অঞ্চল শাসন করতে। এখন দেখা মেলে কেবল রূপালী পর্দার তারকাদের চরিত্রের স্বার্থে টান টান গোঁফ রাখতে।
আচ্ছা… ক্রিকেট মাঠের বোলারদেরও তো একটা আলাদা চরিত্র আছে। বোলারদের যেমন আগ্রাসন আবার ব্যাটসম্যানদের শান্ত স্বভাবে চড়াও হওয়া, এসব মিলেই মাঠের ক্রিকেটটা অসাধারণভাবে চিত্রায়িত হয়।
একজন সিমারের ক্ষেত্রে অ্যটিটিউট অনেক বড় বিষয়। জোর দিয়ে বললে — ‘অ্যটিটিউট ম্যাটার’স আ লট ফর আ সিমার।’ আদর্শ উদাহরণ খুঁজলে লকি ফার্গুসন ছাড়া কে আছে? অতীত ঘাঁটলে অবশ্য জনসনকে পাওয়া যায়। তার গোঁফটাই তার আসল অ্যাটিটিউট ছিল। যাই হোক, আজ মূলত লকি ফার্গুসনকে নিয়ে লিখতে বসেছি। ক্রিকেট মাঠের সবচেয়ে অ্যাটিটিউট সমৃদ্ধ একজন বোলার তিনি। যার গোঁফে লেগে থাকে আভিজাত্যের ছোঁয়া।
যার চোখে-মুখে স্পষ্ট লেগে থাকে একবিন্দুও ছাড় না দেওয়ার স্পষ্ট বাণী। আমি তাকে প্রথম দেখি ২০১৯ বিশ্বকাপে। সেভাবে নিউজিল্যান্ডের খেলা দেখা হয় না বলে জানা ছিল না অভিষেক তারও বছর তিনেক পূর্বে। তবে বিশ্বকাপে তার বোলিং দেখে তিন বছর ধরে ক্রিকেট দুনিয়ায় তার হাইলাইটস ইউটিউবে খোঁজার লোভ আমাকে ছাড়েনি। ইউটিউব আমাকে নিশ্চিত করলো ক্রিকেট মাঠে শুরু থেকেই বরাবরই ফার্গুসন ছিলেন প্রতাপশালী।
বর্তমান সময়ে ক্রিকেট যেভাবে ব্যাটসম্যানের খেলায় রূপ নিয়েছে, সে গতিপথ পাল্টে দিতেই এই তেজি বোলারের আবির্ভাব বলে ধারণা আমার। বাইশ গজ পর্যন্ত পৌঁছাতে তার রান আপের পরিধি বেশ ক্ষুদ্র হলেও তিনি অবস্থান করেন ১৫০ কিলোমিটারের ক্লাবে। এত ক্ষুদ্র রান আপে তার এমন গতিতে ছোঁড়া বলে নাকানি-চুবানি খাওয়া ব্যাটসম্যানরা সম্ভবত তাকে মোকাবেলা করা দু:স্বপ্নের সাথেই তুলনা করবেন।
কার্টলি এমব্রোস, শেন বন্ড আর ডেল স্টেইনের পর ফার্গুসন-ই সম্ভবত এতোটা বিধ্বংসী বোলার ক্রিকেটে। গতি, বাউন্স, সীমিত আকারে সুইংয়ের সাথে নিখুঁত ইয়র্কারে পেস বোলিংয়ের এক কমপ্লিট প্যাকেজ বলা চলে তাকে নির্দ্বিধায়। স্বদেশি শেন বন্ডের আদলেই হয়তো নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন কিউই এই পেসার। ২০১৯ বিশ্বকাপে তার তাণ্ডব মুখস্থ ক্রিকেটবিশ্বের খোঁজ-খবর রাখা প্রতিটা মানুষের।
টুর্নামেন্টের ফাইনাল পর্যন্ত খেলে শিকার করেছেন ২১ উইকেট। বল হাতে প্রতিদিনের ঝাঁঝালো বোলিং গ্যালারিতে কিংবা টিভি পর্দায় বসে কেউ উপভোগ করেনি তা অবিশ্বাস্য। বিশ্বকাপে কোনো প্রতিপক্ষকেই ছাড় দেননি তিনি। সবার বিপক্ষেই গতি, বাউন্স ইয়র্কারে দিশেহারা করে রেখেছিলেন প্রতিপক্ষকে। তবে তিনি যে কেবল গতিই ব্যবহার করেন তা নয়! ক্ষেত্রবিশেষে স্লোয়ারেও উইকেট ভেঙেছেন, সাথে ভেঙেছেন প্রতিপক্ষের কোমড়ও।
অ্যামব্রোস, বন্ড আর স্টেইনকে আগ্রাসনের মূর্ত উদাহরণ হিসেবে ধরা হলে ফার্গুসনও হাঁটছেন তাঁদেরই দেখানো পথে। ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছেন প্রতিনিয়ত বাইশ গজে। বল হাতে তার আগ্রাসী রূপ দেখতে ব্যস্ত থাকেন ক্রিকেট ভক্তরা। সুঠাম দেহের অধিকারী একজন সিমারের আগ্রাসী রূপ, ভক্তদের কাছে লাগে মধুর মত।
লকি শুধু নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটেই নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেই তিনি বিরাট এক বিচিত্র চরিত্র। একজন ক্রীড়াবিদের জীবনে খাদ্যভাস খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তবুও লোকে খাবারের ব্যাপারে কোনো রাখ ঢাক রাখেন না। আরো বেশি খেতে পারবেন বলেই তিনি জিমে ঘাম ঝরান, সাথে মাঠের পেস ঝড় তো আছেই। অব্যাহত থাকুক বাইশ গজে তাঁর এই ঝড়ের ধারা।