আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাবা-ছেলে কিংবা দুই ভাইয়ের একসাথে খেলার ঘটনা কম নয়। তবে, দু’টি ভিন্ন দেশের হয়ে দুই ভাইয়ের খেলার ঘটনা বিরল। নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডেতে দেখা মিলল এই বিরল ঘটনার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার দুই ভাই দুই দেশের হয়ে একই ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত মাত্র ১ রানে শেন স্ন্যাটারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরত যান জেসন রয়। অবাক করা ব্যাপার হল, ইংলিশ তারকা ওপেনার জেসন রয় ও নেদারল্যান্ডসের বোলার শেন স্ন্যাটার দু’জনই সম্পর্কে খালাতো ভাই। রয় ও স্ন্যাটারের মা দু’জনই সম্পর্কে সহদোর বোন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের দেখায় অবশ্য ছোট ভাই স্ন্যাটারের বলে পরাস্থ হয়ে বোল্ড হয়ে ফেরত গেছেন রয়।
সহযোগী সদস্য দেশগুলোর তরুণ সম্ভাবনাময় তারকা হিসেবে বছর খানেক ধরেই ডাচ ক্রিকেটের বেশ পরিচিত নাম শেন স্ন্যাটার। ১৯৯৬ সালে জিম্বাবুয়ের হারারেতে জন্ম নেওয়া স্ল্যাটার স্কুল জীবন পার করে পাড়ি দেন অস্ট্রেলিয়ার ড্যারেন লেহম্যান অ্যাকাডেমিতে। সেখান থেকে আসেন নেদারল্যান্ডসের ক্লাব ক্রিকেটে। এক বছরের মাথায় ডাক পেয়ে যান নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলে। ২০১৮ সালে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় স্ন্যাটারের।
জিম্বাবুয়েতে লোগান কাপেও অংশ নেন তিনি। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি এসেক্সের হয়ে খেলছেন। প্রতিভাবান তকমা গায়ে জড়িয়ে খুব দ্রুতই উঠে আসেন ডাচ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
স্ন্যাটারের খালাতো ভাই ইংল্যান্ডের রঙিন পোশাকের তারকা ওপেনার জেসন রয় অবশ্য জন্মগ্রহণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে। রয়ের বাবা ছিলেন জন্মসূত্রেই আফ্রিকার নাগরিক। অপরদিকে, রয়ের মা ছিলেন জিম্বাবুয়ের। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া রয় পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়েন।
অবশ্য ক্রিকেট মাঠে এই দুই ভাইয়ের দেখা এবারই প্রথম নয়। কাউন্টি ক্রিকেটেও দু’জনে একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে খেলেছেন। ২০১৮ রয়্যাল লন্ডন কাপে স্ন্যাটারের এসেক্সের বিপক্ষে সারের হয়ে ৬৪ বলে ৮৬ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলেছিলেন রয়। অবশ্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবারই প্রথম রয়ের উইকেট নিতে পেরেছেন স্ন্যাটার।
নেদারল্যান্ডসের জার্সি গায়ে এখন পর্যন্ত মাত্র ২ ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন স্ন্যাটার। ২০১৮ সালে অভিষেকের পর নেপালের বিপক্ষে খেলেন ২ ওয়ানডে। এরপর প্রায় চার বছর পর ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়েছেন এই পেসার। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছেন ইংলিশদের। আর সেই সুযোগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার ভাইয়ের মুখোমুখি হয়ে উইকেটও শিকার করেছেন ২৬ বছর বয়সী এই ডাচ পেসার।
অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুই দেশের হয়ে দুই ভাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এবারই প্রথম নয়। এর আগেও তিনবার এমনটি ঘটেছে। দুই ভাই ড্যারেন প্যাটিনসন ইংল্যান্ড ও জেমস প্যাটিনসন খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা এড জয়েসেরর ভাই ডম জয়েস আয়ারল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। অপরদিকে, সাবেক আফ্রিকান ক্রিকেটার ফ্র্যাংক হিয়ারনের ভাই জর্জ হিয়ারনে ও অ্যালেক হিয়ারনে খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। অবশ্য ফ্র্যাংকও ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন।
ফুটবল ইতিহাসে দুই ভাই দুই দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন – এমন ঘটনা আছে দু’টি। স্পেনের থিয়াগো আলকান্তারা ও ব্রাজিলের রাফিনহা আলকান্তারা সহদোর ভাই হলেও দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলছেন। এছাড়া আলবেনিয়ার ফুটবার টল্যান্ট শাকা ও সুইজারল্যান্ডের গ্রানিত শাকাও দুই আপন ভাই; যারা দু’টি ভিন্ন দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলছেন।