আমির নাজির, একজন আগন্তুক!

মার্চ, ১৯৯৩। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য ১৪ সদস্যর পাকিস্তান দল ঘোষণা করা হলো। দলে এক নতুন নাম সবার দৃষ্টি কেঁড়ে নিলো। আমির নাজির! এই আমির নাজিরটা কে? ক্রিকেটারদের কাছেই তিনি অপরিচিত এক নাম। এর আগে অনেকেই এই নাম শোনেনওনি।

তাহলে কিভাবে দলে এলো! একপ্রকার হৈচৈ পড়ে গেলো। তাঁর ব্যাপারে খোঁজ করে খুব বেশি কিছু জানাও গেলো না। তবে, একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেলো ২২ বছরের সেই ছেলেকে দলে এনেছেন তৎকালীন পাকিস্তান অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম!

মিডিয়া হন্তদন্ত হয়ে আকরামের পিছু ধরলো। কে এই নাজির? আকরাম সাক্ষাৎকারে জানালেন, গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের ট্রায়ালে তরুন ক্রিকেটারদের মধ্যে নজরকেড়েঁছিলেন নাজির। আর সেজন্যই তাকে দলে নেওয়া। আকরাম জানালেন, ‘আমি ওর মধ্যে প্রতিভা দেখতে পেয়েছি। আশা করি সে নিজেকে প্রমাণ করবে এবং প্রমাণ করে দিবে তাঁকে তাঁর প্রতিভা বিবেচনা করেই নেওয়া হয়েছে।’

খুব বেশি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার সুযোগ হয়নি! নামের পাশে তখনো অর্জন বলতে তেমন কিছুই নেই। এমন একজনকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনেকেরই ভ্রু কুঁচকেছিলো! তবে, অধিনায়কের সিদ্ধান্তের সামনে সবারই মুখে আঙুল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তখন চারজন পেসার এমনিতে ছিলো। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, আকিব জাভেদ, আতাউর রহমানদের সাথে পঞ্চম পেসার হিসেবে ক্যারিবিয়ান দ্বীপে পাড়ি জমান নাজির। খুব বেশি সময় অবশ্য অপেক্ষাও করতে হয়নি। প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচেই অভিষিক্ত হন নাজির। আকিব জাভেদের ইনজুরিতে সুযোগ হয় তাঁর। অভিষেকেই নিজের সামর্থ্যের সেরাটা দিলেন নাজির।

দেশমন্ড হেইন্সকে নিজের মেইডেন শিকার বানান তিনি। এরপর দুর্দান্ত এক ইয়োর্কারে রিচি রিচার্ডসনকে বোল্ড করে নিজের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন। ওই ওভারের পরের বলেই কার্ল হুপারকে বোকা বানিয়ে ফাঁদে ফেলেন লেগ বিফোরের! পর পর দুই উইকেট!

অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের হাতছানি নাজিরের সামনে। পরের বলে দুর্দান্ত স্যুইংয়ে পরাস্থ করলেন গুস লগি’কে! কিন্তু আম্পায়ের ভুল সিদ্ধান্তে অভিষেকের হ্যাট্রিকের রেকর্ড গড়তে পারেননি নাজির। খালি চোখে দেখলে স্পষ্টই লেগ বিফোর! এই সিদ্ধান্তে পরবর্তীতে অনেকেই ক্ষোভও ঝাড়েন।

অভিষেকেই ৪৩ রানে ৩ উইকেট। ওয়াসিম আকরামের মুখ রক্ষাই শুধু নয়, নিজের ক্যারিয়ারের জন্য খুঁটিও গাড়লেন বেশ শক্তভাবেই। আমির নাজিরের নাম শুনে ভ্রু কুঁচকানো বাকিরাও তাকিয়ে দেখলো আকরামের খুঁজে আনা সেই প্রতিভাবানের সামর্থ্য। তাও আবার অভিষেকে দলের সেরা পারফরমার। বাজে পারফরম্যান্সে বাকিরা পারলে মুখ লুকিয়ে বাঁচে এমন অবস্থা।

পরের ম্যাচেই শিকার করেন ২ উইকেট। এবার শিকারের তালিকায় ছিলেন গ্রেট ব্রায়ান লারাও। সিরিজের চতুর্থ ও নিজের তৃতীয় ম্যাচে উইকেট না পেলেও ৬ ওভারে মাত্র ১৭ রান দেন তিনি! ওই সিরিজেই টেস্টেও অভিষিক্ত হন তিনি। প্রথম ম্যাচে ২ উইকেট শিকারের পরই বাদ পড়েন দল থেকে। এরপর এক বছর আর টেস্টে নেই তিনি! ওয়ানডেতেও অভিষেক সিরিজে তিন ম্যাচ খেলার পর ছিলেন অনিয়মিত মুখ!

এরপর আর নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। তিন বছরের সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৯ ওয়ানডে। এই ৯ ম্যাচে প্রায় ৫ ইকোনমিতে শিকার করেছেন মাত্র ১১ উইকেট।

তবে, টেস্টে তিনি ফিরেছিলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯৯৫ সালে হারারেতে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ৪৬ রানে ৫ উইকেটও। এছাড়া সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে তিনি ছিলেন বেশ সাদামাটা। অবশ্য এই সাদামাটা পারফরম্যান্সই তাঁর সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারের কারণ। ৬ টেস্টে শিকার করেছেন মাত্র ২০ উইকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছিলেন সবশেষ টেস্ট। এরপর আর দেখা পাননি জাতীয় দলের।

হটাৎ আগন্তুকের মতো দলে এসেই দুর্দান্ত পারফরম করা আমির নাজির হারিয়েও গেলেন হুট করেই! ওয়াসিম আকরামের চোখের দেখা হয়তো ভুল ছিলো না। তার প্রমাণ ছিলো প্রথম কয়েক ম্যাচেই। প্রতিভার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে ব্যর্থ হন নাজির। ঝড়ের মতোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এলেন আবার হারিয়েও গেলেন দ্রুতই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link