আফগানদের ছক্কা-কেন্দ্রীক রণকৌশল

আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপেও তেমন কোন ইনিংস বিল্ডার নেই। সবাই কমবেশি আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও এমন একটি ব্যাটিং লাইন আপ করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখানে অ্যাংকোর রোল প্লে করার মত ছিলেন শুধু মারলন স্যামুয়েলস। ওদিকে এবারের আফগানিস্তান ব্যাটিং লাইন আপে একমাত্র অ্যাংকর করার মত আছেন আসগর আফগান।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাউন্ডারি বের করতে পারাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু বাউন্ডারি মারতে পারাই কী সব। তবে এটা ঠিক যে কেউ যদি প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি ছয় মারতে পারে তখন সেই দলকে ডট বল নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না। তবে এতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমন ঝুঁকিও থাকে।

ঠিক এই ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ দিয়েই বিশ্বের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি দল হিসেবে প্রমাণ করেছে একটি দেশ। ২০১২ ও ২০১৬ সালে শুধু ছয়ের উপর জোর দিয়ে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে দুনিয়ার সেরা পাওয়ার হিটারদের নিয়েও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি ক্যারিবীয়দের। এমনকি এই বিশ্বকাপেও খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ সম্প্রতি আফগানিস্তানের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে উন্নতি করা দেশগুলোর একটি আফগানিস্তান। তাঁদের বোলিং লাইন আপ আগে থেকেই দারুণ শক্তিশালী। এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক একটি ব্যাটিং লাইন আপ সাজিয়েছে তাঁরা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এই স্ট্র্যাটিজি নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কতদূর যেতে পারবে আফগানিস্তান। নাকি মুখ থুবড়ে পড়বে ক্যারিবীয়দের মত?

গত পাঁচ বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছয় মারাকে রীতিমত ডাল ভাতে পরিণত করেছে আফগানরা। এই সময়ে কাগজে কলমে তাঁদের চেয়ে এগিয়ে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজই। তবে ডট বল দেয়াতেও আবার শীর্ষে আফগানরা। বড় দলগুলোর সাথে জিততে হলে এই ডট বল গুলোই কাল হয়ে উঠতে পারে আফগানদের জন্য। এছাড়া ছয় মারার এই অ্যাপ্রোচও অনেক সময় হীতে-বিপরীত হতে পারে। ব্যাটিং কলাপ্স করার সম্ভাবনাও থাকে।

আফগানিস্তের এই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং লাইন আপ গঠনের ব্যাপারে তাঁদের কোচ অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার বলেন, ‘বাউন্ডারি মারতে পারা এবং প্রতিপক্ষকে বাউন্ডারিতে আঁটকে রাখতে পারাটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ম্যাচ জেতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

আফগানিস্তান বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে যে ১২০ টি বল খেলেছে তাঁর এক-তৃতীয়াংশই ডট দিয়েছে। তবে সেটা তাঁরা পুষিয়ে নিয়েছে বাউন্ডারি মেরে। স্কটল্যান্ডে বিপক্ষে আফগান ব্যাটাররা মোট ১৩ টি চার ও ১১ টি ছয় মেরেছে। সবমিলিয়ে বোর্ডে তাঁরা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ১৯০ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে স্কটল্যান্ড রীতিমত মুজিব উর রহমান ও রশিদ খানের স্পিনে ঘুরপাক খেয়েছে।

ওদিকে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে গড়ে প্রতি ১৪ বলে একটি ছয় মেরেছে আফগানিস্তান। তাঁদের চেয়ে এগিয়ে আছে শুধু মাত্র ক্যারিবীয়রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা ছয় মেরেছে প্রতি ১৩ বলে। ওদিকে সহযোগী দেশ গুলোর মধ্যে উন্নতি করা নামিবিয়াও আছে এই তালিকার উপরের দিকে। তাঁর প্রতি ছয় মারার জন্য খেলেছে ১৯ টি বল। এই তালিকায় সবার নিচে আছে বাংলাদেশ। তাঁরা ছয় মেরেছে ২৯ বল পরপর।

ওদিকে ডট বল খেলাতেও আবার উপরের দিকেই আছে আফগানরা। ২০১৬ থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ বল ডট খেলেছে দেশটি। মানে ১২০ বলের ম্যাচে গড়ে প্রায় ৫০ বলই ডট খেলে আফগানিস্তান। ডট বল খেলাতেও শীর্ষে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজই।

ওদিকে আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপেও তেমন কোন ইনিংস বিল্ডার নেই। সবাই কমবেশি আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও এমন একটি ব্যাটিং লাইন আপ করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখানে অ্যাংকোর রোল প্লে করার মত ছিলেন শুধু মারলন স্যামুয়েলস। ওদিকে এবারের আফগানিস্তান ব্যাটিং লাইন আপে একমাত্র অ্যাংকর করার মত আছেন আসগর আফগান।

তবে বড় কথা হচ্ছে কঠিন প্রতিপক্ষের সাথে আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা এই ছয় মারার সক্ষমতা কতটুকু কাজে লাগাতে পারবে। নাকি এই বাউন্ডারি নির্ভরশীলতাই কাল হয়ে দাঁড়াবে আফগানিস্তানের জন্য। বড় কিছু করতে হলে ডট বল কমানোও জরুরি। তাহলেই হয়তো বিশ্বকাপ শেষে নিজেদের সফল বলতে পারবে আফগানিস্তান।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...