নিজেকেই যেন আবারও বিপদে ফেলে দিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। সাথে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে ঠেলে দিলেন চিন্তার গভীর সমুদ্রে। নিজেকে প্রমাণের খুব বেশি সুযোগ তো হাতে ছিল না আফিফের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেটা হতে পারত জীয়নকাঠি।
বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনকে সামনে রেখে একটা আলোচনা বারবার সামনে এসেছে। সাত নম্বর ব্যাটিং পজিশনে খেলবেন কে? সেই আলোচনার একটা বিকল্প ছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। শুধু ছিলেন বললে, খানিকটা ভুল বলা হয়। তিনি বেশ জোড়ালো দাবিই রাখছিলেন।
কারণটা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে তার পারফরমেন্স। ৫৫০ রান করেছিলেন তিনি পঞ্চাশ ওভারের ঘরোয়া টুর্নামেন্টে। আবহানী লিমিটেডকে চ্যাম্পিয়ন করবার অনেক বড় কারিগর ছিলেন তিনি। সেই পারফরমেন্সই কথা বলছিল আফিফের পক্ষে। তাইতো তাকে নিয়ে রুঢ় মন্তব্য করা চান্দিকা হাতুরুসিংহে আবারও তাকে ফেরালেন জাতীয় দলে।
মিডল অর্ডারে ডিপিএলে আফিফের পারফরমেন্স বেশ চাপ সৃষ্টি করছিল বলাই চলে। তবে জাতীয় দলে আবার ফিরে সেই চাপটা বিপরীতমুখীই করে দিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এখন অবধি তার ক্যারিয়ার সেরা এক ইনিংস খেলেছেন আফিফ। ২০২২ সালে এই আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সেবার ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে দলকে বাঁচিয়েছেন। এমনকি শেষ অবধি ম্যাচ জিতিয়েছিলেন।
এদিনও তার সুযোগ ছিল, আবার নায়ক বনে যাওয়ার। নিজেকে জাতীয় দলে আরেকটিবার থিতু করবার। ১১২ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ চিরায়ত নিয়ম মেনেই যেন ‘ব্যাকফুটে’। তেমন এক পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জেতানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে আফিফের। তাইতো স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা ছিল তার কাছে। কিন্তু রশিদ খানের স্পিন ঘূর্ণি তো রীতিমত গোলকধাঁধা।
সেই ঘূর্ণিপাকে পিষ্ট হলেন আফিফ, ঝড়ের দিনে উড়ে যাওয়ার বাড়ির টিনের মত করে। লেগ স্ট্যাম্পে পিচ করা বলটা ফ্লিক করতে ব্যর্থ হন আফিফ। আম্পায়ার সম্মতি না দিলেও, ডিআরএস মত দেন রশিদের পক্ষে। ৮ বলে ৪ রানের ব্যর্থতার চিত্র এঁকে সাজঘরে ধ্রুব।
তবে এটা গেল এক বছর ধরেই ধ্রুব এক ছবি। শেষ এক বছরে নয়বার আফিফের বিপক্ষে ছিল সেরা দশ ওয়ানডে দলের একটি। এর মধ্যে কেবল ৮.২২ গড়ে ব্যাটিং করেছেন তিনি। রান করেছেন মাত্র ৭৪। স্ট্রাইকরেট প্রায় ৬১। এমন বিদ্ঘুটে এক পারফরমেন্স তাকে দল থেকে ছেটে ফেলার জন্যে যথেষ্টই বটে। তেমনটা করা হয়েছিল। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে আবছায়া এক ছবিই তাকে সম্ভবত শেষ সুযোগটি করে দিয়েছিল, বিশ্বকাপের আগে।
কিন্তু প্রশ্নটা এবার ঘরোয়া ক্রিকেটের মানের দিকে। অনুশীলনে বেশ তৎপরতা দেখানো আফিফ ম্যাচে এসে দেখালেন মুদ্রার অপরপিঠ। ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ফারাকটা যেন বিস্তর সেটাই যেন প্রমাণ করলেন আফিফ। হয়ত এই সিরিজে আরও সুযোগ পাবেন। সেসবই তার শেষ সুযোগ বলেই গণ্য হবে। কিন্তু সেসব সুযোগ আদৌ আফিফ কাজে লাগাতে পারবেন কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
কেননা তিনি নিজে ঝাপ দিয়েছেন চাপের গভীর কুয়োতে। এই ম্যাচে নিদেনপক্ষে কিছু রান করতে পারলে হয়ত আত্মবিশ্বাসের আগুনে জ্বালানির সঞ্চার ঘটত। কিন্তু চট্টলার বৃষ্টির পানিকে পথ করে দিয়েছেন আফিফ নিজে। তাতে তার আত্মবিশ্বাসের উনুন ডুবে গেছে হতাশার জলে।
অন্যদিকে টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে খুব বেশি সুযোগও বাকি থাকলো না বিকল্প বাজিয়ে দেখার। এ যেন ‘জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ।’