শচীন কিংবা ওয়ার্ন হবেন শেহজাদ?

আবুধাবি টি-টেন লিগে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন কিন্তু অর্থের ঝনঝনানি দূরে সরিয়ে আহমেদ শেহজাদ জাতীয় দলে ফেরার সাধনায় মগ্ন ছিলেন। ভাগ্য তাঁকে হতাশ করেনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছেন তিনি।

ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের বদৌলতে চার বছর পর পাকিস্তানের সবুজ জার্সিতে দেখা যাবে তাঁকে। ২০১৯ সালে বাদ পড়ার পর থেকে কেউই ভাবেননি শেহজাদ আবার জাতীয় দলের আশেপাশে আসতে পারবে। তবে এই ওপেনার ঠিকই ফিরেছেন সবাইকে চমকে দিয়ে।

এখন দেখার বিষয় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়ে এসে ভরসার প্রতিদান দিতে পারেন কি না। এর আগে অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটারই নিন্দুকদের ভুল প্রমাণ করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন।

এই যেমন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। ২০০৩ সালে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অনুপস্থিতিতে সুযোগ পাওয়া স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল তখন দারুণ পারফরম করতে শুরু করেন। তাই ওয়ার্ন আবার রেখে যাওয়া আসনে বসতে পারবেন, সেই সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ ছিল।

কিন্তু তিনি ঠিকই পেরেছেন, প্রত্যাবর্তনের পরের তিন টেস্টেই নিয়েছিলেন ২৬ উইকেট। এরপরের সময়টাতে এই লেগি শুধু নিজের ক্যারিয়ারকে পুনরুজ্জীবিত করেননি বরং কিংবদন্তি তুল্য মর্যাদাকে আরো সুসংহত করেছিলেন।

ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির গল্পটাও অনেকটা এমন। ২০০৫/০৬ সালের দিকে কোচের সাথে দ্বন্দের কারণে বাদ পড়েন তিনি; ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক রান করার পরও নির্বাচকরা তাঁর দিকে সুদৃষ্টি দেয়নি।

যখন মনে হয়েছিল সব শেষ তখনি অবশ্য গাঙ্গুলির সুযোগ চলে আসে – দক্ষিণ আফ্রিকার সফরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন তিনি। এরপর থেকে অবসরের আগ পর্যন্ত এই বাঁ-হাতি রান করে গিয়েছেন বিরামহীন। আর তাতেই ভারতীয় ক্রিকেটাঙ্গনে তাঁকে ঘিরে সৃষ্ট সব সংশয় বাতাসে উবে গিয়েছিল।

ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচ অবশ্য বাদ পড়েছিলেন ১৯৮৯ সালের অ্যাশেজে হতশ্রী প্রদর্শনীর কারণে। পাঁচ ম্যাচে মাত্র বিশ গড়ে ব্যাটিং করায় স্বাভাবিকভাবেই দলের বাইরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। তবে হাল ছাড়েননি তিনি, স্রেফ বারো মাসের মাঝে নিজেকে আমূল বদলে আবারো ফেরেন ইংল্যান্ডের জার্সিতে।

ফেরার পরপরই ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে ৭৫২ রান করে হইচই ফেলে দেন গুচ। সেই সিরিজে তাঁর ব্যাট থেকে আসা ৩৩৩, ১২৩ ও ১১৬ রানের দর্শনীয় ইনিংসগুলো এই তারকার ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ দেয় – তিনি হয়ে উঠেন ইংলিশদের ব্যাটিং আইকন।

দৃঢ়তা আর সংযমের পরিচয় দিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকারও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০০২ সালের সিরিজে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি, চার ম্যাচে কোনবারই বড় রান করতে পারেননি। ফলে তাঁর সমাপ্তি নিয়ে গুঞ্জন উঠেছিল। কিন্তু টেন্ডুলকার বিশ্বকে উপহার দেন আশ্চর্যজনক সংযমের এক উদাহরণ, নিজের প্রিয় কভার ড্রাইভ খেলা ছাড়াই পরের ম্যাচে ৬১৩ মিনিট উইকেটে কাটিয়ে দেন তিনি।

সবমিলিয়ে সেই ইনিংসে ২৪১ রান করেছিলেন ক্রিকেট ঈশ্বর; সেই সাথে শিখিয়ে গিয়েছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলে, ত্যাগ স্বীকার করতে জানলে সাফল্য আসবেই – পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদও হয়তো সেই মন্ত্রেই উজ্জীবিত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link