ড্রেসিংরুমে দাউদ ইব্রাহিম, বাতিল হওয়া বিমান টিকেট ও ‘দেবদাস’

১.

১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ। সেবার ভারতীয় ওপেনার কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্ত আগে ভাগেই নিজের এবং তাঁর স্ত্রীর জন্য আমেরিকার বিমান টিকেট কেটে ফেলেছিলেন।

বিশ্বকাপ জেতা তো দূরের কথা, সেমিফাইনালে পৌঁছাবে ভারত, সেটাও তার ভাবনায় ছিল না। ভারত বিশ্বকাপ জিতে নেয়, এবং পুরো দলকে ভারতে ফিরে আসতে বলা হয় ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রনে!

শ্রীকান্তের আমেরিকার টিকিট বাতিল হয়ে যায়, আবারো টিকেট কাটার জন্য তাঁর খরচ হয় দশ হাজার রুপি! শ্রীকান্তের সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে কপিল দেবের উপর!

কপিলের অতিমানবিক পারফর্ম্যান্সের জন্যই অসাধ্য সাধন করেছিল ভারত! মজার ব্যাপার হল, শ্রীকান্ত কপিলের কাছে সেই দশ হাজার রুপি দাবী করে বসেন, যদিও মজার ছলেই।

২.

লর্ডসের ব্যালকনিতে সৌরভ গাঙ্গুলির জার্সি খুলে উড়ানোর দৃশ্যটা আইকনিক হয়ে আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জার্সি খুলে উড়ানোর কথা ছিল হরভজন সিংয়ের। কিন্তু রাহুল দ্রাবিড় তাকে আগেভাগেই বাঁধা দেন!

কিন্তু, যখন তিনি দেখেন সৌরভ নিজেই কাজটা করছেন, তখন রাহুলের ভাবনা ছিল, বরং হরভজনকে কাজটা করতে দিলেই ভালো হত, অন্তত দাদার থেকে হরভজনের বডি শেপ কয়েকগুণ ভালো।

পরের ঘটনা আবারও সেই ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। বিশাল রান তাড়া করতে নেমে ভারতের অবস্থা তখন করুণ। দেড়শো পার হবার আগেই অর্ধেক ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে! ক্রিজে তখন যুবরাজ সিং এবং মোহাম্মদ কাইফ!

এমন অবস্থান থেকে ম্যাচ জিতবে সেটা খোদ কাইফের পরিবারের সদস্যরাও কল্পনা করেননি। ঘরে তালা দিয়ে তারা চলে যান সিনেমাহলে, শাহরুখ খানের ‘দেবদাস’ মুভি দেখতে! পরে তাঁদেরকে সিনেমা হল থেকে ডেকে এনে খুশির সংবাদ দেয়া হয়।

৩.

একদা অ্যালান বোর্ডার এবং ইমরান খানের ভেতর খোশ গল্প চলছিল। কথায় কথায় ইমরান বললেন, ‘আমাকে সুনীল গাভাস্কার এবং বি এস চন্দ্রশেখরকে এনে দাও, আমি অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেব।’

হাসতে হাসতে বোর্ডার বললেন, ‘আমাকে শুধু দুইজন পাকিস্তানি আম্পায়ার এনে দাও, আমি পুরো বিশ্বকে হারিয়ে দেব।’ মজার ছলে বলা কথাটাই ছড়িয়ে পড়ে, আর এটা নিয়ে রীতিমত শোরগোল শুরু হয় ক্রিকেট বিশ্বে। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চান বোর্ডার।

৪.

আরেকটা ঘটনা বলা যাক ইমরানকে নিয়ে। ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের একটি ম্যাচে ইমরান খান যখন ব্যাট করতে মাঠে নামেন তখন তিনি বাউন্ডারি লাইন ক্রস করার সময় দেখতে পান উইকেটরক্ষক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

বিস্মিত ইমরান তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি এখানে কি করছ ?’ উইকেটরক্ষক তাকে বলেন, ‘তুমি সেটা নিজেই দেখতে পাবে যখন মাইকেল হোল্ডিংকে বোলিংয়ে খেলবে!’ হোল্ডিং সেদিন এতটাই জোরে বল করছিলেন যে, উইকেটরক্ষককে প্রায় বাউন্ডারি লাইন থেকে সেগুলো ধরতে হচ্ছিল।

৫.

ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলছিলেন বীরেন্দ্র শেবাগ। তার পার্টনার জেরেমি স্নেপ পুরাতন বলের সুইংয়ে বারবার পরাস্ত হচ্ছিলেন। স্নেপ শেবাগের কাছে গিয়ে পরামর্শ চাইলেন, ‘কি করা যায় বলতো?’

পরের ওভারে শেবাগের ছক্কায় বলটাই হারিয়ে গেল। নতুন বল নেয়া হল, শেবাগ স্নেপকে বললেন, ‘নতুন বলে তেমন সুইং হবে না। আপাতত দুই ঘন্টা নিশ্চিন্ত!’

৬.

১৯৮৭ সালে শারজায় একটি টুর্নামেন্ট খেলছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ড্রেসিং রুমে প্রবেশ করেন গ্যাংস্টার দাউদ ইব্রাহিম।

পাকিস্তানকে হারাতে পারলে গাড়ি উপহার দেয়া হবে বলে প্রস্তাব দেন। কপিল দেব তাঁকে ইচ্ছেমত গালাগাল দিয়ে ড্রেসিং রুমের বাইরে বের করে দেন।

৭.

১৯৯২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তখন পুরো মুম্বাই জ্বলছে। একটি মুসলিম পরিবারকে হত্যা করার জন্য দাঙ্গাকারীরা মারমুখো। এমতাবস্থায় সুনীল গাভাস্কার দাঙ্গাকারীদের সামনে দাঁড়িয়ে যান! জীবনের ঝুঁকি থাকা স্বত্ত্বেও সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ করেন এবং পরিবারটিকে রক্ষা করতে সমর্থ হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link