ভারতের নীরব সাধক

সম্ভব হলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালটা নতুন করে শুরু করতে চাইতো ভারত। আর আজিঙ্কা রাহানে যেখানে থেমেছিলেন, সেখান থেকেই আরেকবার চাইতেন ছুটতে। দ্য ওভালে রাহানের ব্যক্তিগত ৮৯ রান। যা প্রথম ইনিংসে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ।

শতক করতে না পারার কষ্ট রয়েছে, রয়েছে দলের পুঁজি বড় করতে না পারার আক্ষেপ। দলের খারাপ সময়ে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন রাহানে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফলো-অন এড়াতে ছিলেন সম্মুখ যোদ্ধা। তবে ইনিংসে মহানায়ক হওয়ার সুযোগ মিস করেছেন ভালো ভাবেই।

ওভালের পিচে সামলিয়েছেন স্টার্ক, কামিন্সের গতি। নাথান লায়নের স্পিন ঘুর্ণির বিপক্ষেও ছিলেন সাবলীল। ভারতকে খাদের কিনারা থেকে মাঝারি অবস্থায় নিতে সহ্য করেছেন বলের আঘাত। অভিজ্ঞতার মূল্য দিলেন ব্যাট হাতে। সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ২৫৪ মিনিট ব্যাটিং করে।

রাহানের ক্যারিয়ার প্রায় শেষ হয়েছিল। ২০২২ সালের শুরুতে খেলেছিলেন সবশেষ ম্যাচটি। আইপিএলে লোকেশ রাহুলের ইনজুরি মঙ্গল হয়েছে রাহানের জন্য।

রাহুলের পরিবর্তে স্কোয়াডে যুক্ত করা হয়েছিল রাহানেকে। তখন এই ব্যাটারকে নিয়ে উঠেছিল কথা। দল নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কেউ কেউ। রাহানে হয়ত অপেক্ষায় ছিলেন সুযোগের।

রাহানের বর্তমান বয়স ৩৫। ওভালে যখন ব্যাট করতে নামলেন তখন দলের সংগ্রহ ৭১। ততক্ষণে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন উপরের সারির চার ব্যাটার। আর নিজে যখন আউট হলেন তখন স্কোরবোর্ডে রান ২৬১।

১৮ মাস পর দলে ফিরে রাহানে দেখালেন টেস্ট মেজাজ। ধরে-শয়ে দিয়েছেন সমালোচনার জবাব। স্বদেশী থেকে ভিনদেশি অনেক গ্রেট প্রশংসা করছেন এই ব্যাটারের।

রাহানে যখন শতকের পথে, তখন দুর্দান্ত ক্যাচ ধরে বসেন ক্যামেরুন গ্রিন। আউট হওয়ার পর মাঠে আক্ষেপ প্রকাশ করেননি রাহানে। তবে মাঠ থেকে বের হয়ে বসে পড়েছিলেন ব্যাট-প্যাড নিয়ে। যা কষ্ট বাড়িয়েছে ভারতীয় সমর্থকদের।

বছর তিনেক আগেও ভারতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার সুর উঠেছিল। তবে সেই সুর হয়নি বাস্তবায়ন। দল থেকে বাদ পড়েছেন। ফিরেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

রাহানে বর্তমান ভারতীয় দলের সাইলেন্ট কিলার। যেখানেই খেলেছেন সুযোগ পেলেই দলকে নিয়েছেন সামনের দিকে। ২০১৮ সালের কথা, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে বাদ পড়েছিলেন। ভারত হেরেছিল ম্যাচ দুইটি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্স উইকেটে রাহানে করেন ৪৮ রান। যা ছিল সেই ইনিংসে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ। রাহানের এই রানকে অনেকে শতকের সাথে তুলনা করেছিল। কেননা সেই ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ভারত জয় পায়।

প্রতিটি দলই এমন একজন খেলোয়াড় থাকে। যারা দলকে রক্ষা করে বিপদ থেকে। আবার সমালোচনা নিতে হয় সবচেয়ে বেশি। রাহানেরা সবসময় বাকিদের অনুপ্রেরণা। ‍শুধু ক্রিকেট নয়, জীবনযুদ্ধেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link