বিশ্বকাপে অধিনায়কোচিত পারফরম্যান্সের কথা মনে পড়লেই স্মৃতিতে ভেসে ওঠে ১৯৯২ বিশ্বকাপের ইমরান খান কিংবা ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনির হাঁকানো ছক্কার ছবিটা। পুরো দলকে এক সুতোয় গেঁথে রাখার পাশাপাশি নিজে পারফর্ম করে দলকে অনুপ্রাণিত করাই অধিনায়কের মূল কাজ। কিন্তু এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অধিনায়করা সেটা করতে পারছেন কই? বরং তাঁদের বাজে পারফম্যান্স বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করছে দলে জায়গা পাওয়াকে।
অধিনায়ক কোটায় খেলছে- আমাদের দেশের ক্রিকেট পাড়ায় বহুল প্রচলিত এক বাক্য। এবারের বিশ্বকাপে সব অধিনায়কই যেন এই বাক্যকেই সত্য প্রমাণের চেষ্টায় নেমেছেন। বিশ্বকাপের আগে দুর্দান্ত ফর্ম থাকলেও মূল টুর্নামেন্ট শুরু হতেই যেন উবে গিয়েছে ফর্ম।
রোহিত শর্মা থেকে বাবর আজম, জস বাটলার কিংবা কেন উইলিয়ামসন সবাই যেন এবারের বিশ্বকাপে ব্যর্থতার ডালি সাজিয়ে বসেছেন। বাদ যাননি বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে টুর্নামেন্ট সেরার দৌড়ে ফেভারিট ভাবা হলেও ব্যাট-বলে এখনও জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি।
কেবল বাজে পারফর্ম নয়, দলের পরাজয়ের পেছনেও বড় ভূমিকা থাকছে অধিনায়কদের। নিউজিল্যান্ডের কাপ্তান কেন উইলিয়ামসনের কথাই ধরা যাক, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করা ম্যাচে খেলেছেন ৪০ বলে ৪০ রানের মন্থরগতির এক ইনিংস। অথচ ১৮০ রান তাড়া করতে নেমে বাকিরা দ্রুত গতিতে রান তুললেও তাঁর ধীরগতির ব্যাটিংয়ের কারণেই ম্যাচ হারে তাঁর দল। বৃথা যায় গ্লেন ফিলিপসের ৩৬ বলে ৬২ রানের অনবদ্য এক ইনিংস।
অন্যদিকে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার বিশ্বকাপ শুরুর আগে ছিলেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে, আইপিএলে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ধারণা করা হচ্ছিল বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হবেন তিনিই, অথচ এক নিউজিল্যান্ড ম্যাচ ছাড়া তাঁকে সেভাবে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি। বাটলার তবু এক ম্যাচে রান পেয়ে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন, পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমের অবস্থা আরও করুণ।
গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রহকারী বাবর এই বিশ্বকাপের তিন ম্যাচে করেছেন মোটে আট রান। তাছাড়া বাবরের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা। সেমির আগেই বিদায়ের শঙ্কায় থাকা পাকিস্তানের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। অধিনায়ক না হলে হয়তো অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানেই চেপে বসা হত না তাঁর।
২০২২ সালে ১০ ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ কেবল ৭৮ রান। স্ট্রাইক রেটটা তো আরও দৃষ্টিকটু, মাত্র ৭৭.২। অথচ তাঁর জন্য বেঞ্চে বসে থাকা রেজা হেনড্রিকস আছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে, নিজের শেষ তিন টি-টোয়েন্টিতেই হাঁকিয়েছেন ফিফটি। এবারের বিশ্বকাপে তাই আরও একবার দক্ষিণ আফ্রিকা শিরোপা ছাড়া বিদায় নিলে ব্যর্থতার দায়ভার প্রথমে নিতে হবে বাভুমাকেই।
শ্রীলংকার অধিনায়ক দাসুন শানাকা এবং বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের পরিস্থিতি খানিকটা একই। মিডল অর্ডারে নেমে রান পাচ্ছেন না, বল হাতেও এনে দিতে পারছেন না প্রয়োজনীয় ব্রেকথ্রু। ফলে অঘটন ঘটানোর সম্ভাবনা থাকলেও দুই দলকে বরণ করে নিতে হচ্ছে পরাজয়। অ্যারন ফিঞ্চ এবং রোহিত শর্মা বোধহয় বিশ্বকাপের সবচেয়ে ফেভারিট দুই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ব্যাট হাতে একদম খারাপ না করলেও পুরনো ছন্দটা কেন যেন টেনে আনতে পারছেন না কেউই। ইনিংসের উদ্বোধন করতে নেমে ঝড়ো গতিতে শুরুর বদলে তাঁদের ধীরগতির ব্যাটিং দলকে বিপদে ফেলছে প্রায়শই। বিশেষ করে শ্রীলংকার বিপক্ষে ফিঞ্চের অস্বাভাবিক ধীর গতির ব্যাটিংয়ের কারণে প্রায় হেরেই যাচ্ছিল স্বাগতিকরা, কিন্তু শেষে মার্কাস স্টোয়নিসের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ের সুবাদে জয় তুলে নেয় তাঁরা।
একই বিশ্বকাপে একসাথে সব অধিনায়কের ফ্লপ থাকা ক্রিকেটের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। তবে বড় খেলোয়াড়রা নাকি বড় মঞ্চের জন্য তাঁদের সেরাটা জমিয়ে রাখেন। নক আউট পর্বের বড় মঞ্চে তাই অধিনায়কদের পারফরম্যান্সের উপর বাড়তি নজর থাকবে দর্শকদের।