ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর পর অনেকেই ক্রিকেটের সাথে জুড়ে থাকতে যোগ দেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে, কেউ বা আবার বেছে নেন কোচিং পেশা। কেউ কেউ নিজ দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সাথেও নিযুক্ত হন। আবার অনেকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন আম্পায়ারিং। আম্পায়ারিং মোটেও সহজ কাজ নয়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, বিচক্ষণতা, বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তই একজন আম্পায়ারকে দেখাতে পারে সফলতার পথ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে আম্পায়ারিংকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে দিব্যি একটা একাদশ বানিয়ে ফেলা যায়। বলাই বাহুল্য, সেই একাদশে ইংরেজদের সংখ্যা একটু বেশি।
- চার্লস ব্যানারম্যান (অস্ট্রেলিয়া)
১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ টেস্ট ইতিহাসের প্রথম স্বীকৃত ম্যাচে খেলতে নেমেই করেন সেঞ্চুরি। তিনি প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির অনন্য এক রেকর্ড গড়েন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইনজুরিতে পড়ার আগে প্রথম ইনিংসে খেলেন ১২৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। টেস্ট অভিষেকের দশ বছর বাদে আম্পায়ার হিসেবে অভিষিক্ত হন ব্যানারম্যান। তবে আম্পায়ার হিসেবে খুব বড় ক্যারিয়ার গড়তে পারেননি এই অজি ওপেনার। মাত্র ১২ ম্যাচে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
- মার্ক বেনসন (ইংল্যান্ড)
কাউন্টি দল কেন্টের হয়ে প্রায় ১৫ মৌসুম ধরে ওপেনিংয়ে নিয়মিত মুখ ছিলেন মার্ক বেনসন। ২৯২ ম্যাচে ৪০ গড়ে করেছেন ১৮৩৮৭ রান করেন তিনি। ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট অভিষেকের পর ওই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৩০ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ২১ রান।
সাদামাটা পারফরম্যান্সের পরই তিনি বাদ পড়েন দল থেকে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা তাই সীমাবদ্ধ ছিল এক টেস্টেই। ১৯৮৫ সালে আম্পায়ার হিসেবে আবির্ভাব হয় বেনসনের। ২৭ টেস্ট, ৭২ ওয়ানডে ও ১৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারিং করেন মার্ক বেনসন।
- পিটার উইলি (ইংল্যান্ড)
সাবেক ইংলিশ অলরাউন্ডার পিটার উইলি ক্যারিয়ারের অধিকাংশ ম্যাচই খেলেছেন শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ১৯৭৬ থেকে ৮৬ এর মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে ১৫ টেস্ট খেলেন তিনি।
ক্যারিয়ারের দুই সেঞ্চুরির দু’টি করেছেন ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে। ৫৫৯ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ২৪৩৬১ রান ও ৭৫৬ উইকেট নেন এই অলরাউন্ডার। আম্পায়ার হিসেবে ১৯৯৬ সালে ক্যারিয়ার শুরু। এরপর ২৫ টেস্ট ও ৩৪ ওয়ানডেতে আম্পায়ারিং করেন উইলি।
- ইয়ান গোল্ড (ইংল্যান্ড): উইকেটরক্ষক
প্রায় দুই দশক ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও লিস্ট এ তে খেলা একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটার ছিলেন ইয়ান গোল্ড। ক্যারিয়ারে খেলেছেন মোটে ১৮ ওয়ানডে। ১৯৮৩ আইসিসি বিশ্বকাপে খেলেন তিনি। ১৯৮২-৮৩ অ্যাশেজ সিরিজেও খেলেন এই ইংলিশ উইকেটরক্ষক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে করেছেন ৬০৩ ডিসমিসাল। এছাড়া এই ফরম্যাটে ব্যাট হাতে করেছেন ৮৭৫৬ রান।
- জন হ্যাম্পশায়ার (ইংল্যান্ড)
প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে লর্ডসের অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করেন ইংলিশ ব্যাটার জন হ্যাম্পশায়ার। ১৯৬৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন তিনি। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর পাঁচ বছর বাদেই আম্পায়ার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। আম্পায়ারিং করেন ২১ টেস্ট ও ২০ ওয়ানডে ম্যাচে।
- জেমস লিলিহোয়াইট জুনিয়র (ইংল্যান্ড)
ক্রিকেট পরিবার থেকেই উঠে আসা জেমস লিলিহোয়াইট ১৮৭৭ সালে প্রথম স্বীকৃত টেস্টে ইংল্যান্ডের হয়ে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ওই সিরিজে বল হাতে ৮ উইকেট ও ব্যাট হাতে ১৬ রান করেন তিনি। ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর পর আম্পায়ার হিসেবে ৬ টেস্টে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
- অশোক ডি সিলভা (শ্রীলঙ্কা)
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিচারে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে সফল আম্পায়ার অশোক ডি সিলভা। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ এর মাঝে খেলেছেন ১০ টেস্ট ও ২৮ ওয়ানডেতে। মূলত লেগ স্পিনার হিসেবেই খেলতেন তিনি। সে সাথে লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংটাও খারাপ ছিল না।
২৫ উইকেটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আছে ৩২৩ রান। ১৯৯৯ সালে গলে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মধ্যকার ওয়ানডে দিয়ে আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক অশোকের। ৪৯ টেস্ট, ১২২ ওয়ানডে ও ১১ টি-টোয়েন্টিতে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপেও আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান সাবেক এই লঙ্কান ক্রিকেটার।
- কুমার ধর্মসেনা (শ্রীলঙ্কা)
১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কা দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন কুমার ধর্মসেনা। শ্রীলঙ্কার হয়ে ওয়ানডেতে ছিলেন নিয়মিত এখন মুখ। খেলেছেন ৩১ টেস্ট ও ১৪১ ওয়ানডে। টেস্টে ৬৯ ও ওয়ানডেতে শিকার করেছেন ১৩৮ উইকেট। ব্যাট হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আছে ২ হাজারের বেশি রান।
অবসরের পর ২০১১ বিশ্বকাপে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ধর্মসেনা। ৫৩ টেস্ট, ৮৪ ওয়ানডে ও ২২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সাবেক এই লঙ্কান অফ স্পিনার। ২০১২ সালে আম্পায়ার অব দ্য ইয়ারের পুরষ্কারও জেতেন তিনি!
- পল রাইফেল (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার ১৯৯৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন পল রাইফেল। এই অজি পেসারের সামর্থ্য ছিল দুই দিকেই বল স্যুইং করানোর। ১২৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচে শিকার করেছেন ২১০ উইকেট। ইনজুরিতে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় ছিলেন দলের বাইরে।
৩৬ বছর বয়সে ২০০২ সালে অবসরের পর আম্পায়ার হিসেবে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করেন। আম্পায়ার হিসেবেও বেশ সফল তিনি। ৩৬ টেস্ট, ৫৪ ওয়ানডে ও ১৬ টি-টোয়েন্টিতে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক এই অস্ট্রেলিয়ান পেসার।
- রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ (ইংল্যান্ড)
১৯৯১ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডেতে অভিষেক হয় রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন ৩৪ ম্যাচ! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের ঝুলিতে আছে ৪৯ উইকেট।
১৯৯২ বিশ্বকাপে ছিলেন ইংল্যান্ড দলের অন্যতম সদস্য। তবে জাতীয় দলের হয়ে কখনোই নিয়মিত হতে পারেননি তিনি। আম্পায়ার হিসেবে ৩২ টেস্ট, ৫৭ ওয়ানডে ও ১৬ টি-টোয়েন্টিতে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক এই ইংলিশ বোলার।
- শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবন (ভারত)
ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা স্পিনারদের একজন ছিলেন শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবন। ৫৭ টেস্টে ১৫৬ উইকেট শিকার করেছেন এই স্পিনার। ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের মাটিতে মেইডেন সিরিজ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি।
আট টেস্টে ৩৫ উইকেট শিকার করেন রাঘবন। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ বিশ্বকাপে তিনি ভারতের হয়ে অধিনায়কত্ব করেন। ১৯৯৩ সালে আম্পায়ার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর পর ৫২ ওয়ানডে ও ৭৩ টেস্টে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
- এনামুল হক মনি (বাংলাদেশ): দ্বাদশ ব্যক্তি
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের দলের অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন এনামুল হক মনি। সবাই অবশ্য মনি হিসেবেই জানে। বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন ১০ টেস্ট ও ২৯ ওয়ানডে। বল হাতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিয়েছেন ৩৭ উইকেট।
ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে আম্পায়ার হিসেবে নতুন শুরু করেন মনি। ২০০৬ সাল থেকে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ১ টেস্ট, ৫৪ ওয়ানডে ও ১৪ টি-টোয়েন্টিতে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মনি।