নিজের পায়ে কুড়াল মারার নজীর

এমনকি একটা সময় ইংল্যান্ড ওদের খেলোয়াড়দের আইপিএলের জন্য ছাড়তে চাইতো না। এখন আপনি আইপিএলের সবথেকে দামি প্লেয়ারদের লিস্ট দেখেন। উত্তর পেয়ে যাবেন। যখন সবাই আইপিএলের গুরুত্ব বোঝা শুরু করেছে,তখন বোঝে না শুধু একটা দেশের ক্রিকেট বোর্ড।

এবারের আইপিএলের সময় নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা সিরিজ চলছে। যেহেতু আইপিএলের সাথে নিউজিল্যান্ডের সিরিজ ক্ল্যাশ করেছে, নিউজিল্যান্ড বোর্ড কি করেছে? ওদের সমস্ত প্লেয়ার, যারা আইপিএল কন্ট্র‍্যাক্ট পেয়েছে, তাদেরকে আইপিএলের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। একজনকেও বাদ রাখেনি।

এমনকি নিউজিল্যান্ডের মাইকেল ব্রেসওয়েল প্রথমে আইপিএলে কোনো দল পাননি। তাই ব্রেসওয়েল শ্রীলঙ্কা সিরিজের স্কোয়াডেও ছিলেন। কিন্তু, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর উইল জ্যাকস ইনজুরিতে পড়ার পর, আরসিবি মাইকেল ব্রেসওয়েলকে নিয়েছে। যখন আরসিবি ব্রেসওয়েলকে নিয়েছে,তখনই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ব্রেসওয়েলকে ছেড়ে দিয়েছে। ওর জায়গায় দলে নিয়েছে রাচিন রবীন্দ্রকে।

নিউজিল্যান্ডের কোচ গ্যারি স্টিড বলেছেন, ‘বছরের শেষদিকে ভারতে বিশ্বকাপ হবে। তাই আমরা চাই যতবেশি সম্ভব খেলোয়াড়দের ভারতে খেলার সুযোগ করে দিতে।’ এটা গেল বিশ্বকাপের প্রেক্ষাপট।

গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশের সাথে টেস্ট সিরিজ মনে আছে? আইপিএলের সাথে ক্ল্যাশ করেছিলো। তখন দক্ষিণ আফ্রিকার সবাই আইপিএল খেলতে চলে গেছিলো।সাউথ আফ্রিকা বোর্ড ওদের ছেড়েছিলো।

এমনকি একটা সময় ইংল্যান্ড ওদের খেলোয়াড়দের আইপিএলের জন্য ছাড়তে চাইতো না। এখন আপনি আইপিএলের সবথেকে দামি প্লেয়ারদের লিস্ট দেখেন। উত্তর পেয়ে যাবেন। যখন সবাই আইপিএলের গুরুত্ব বোঝা শুরু করেছে,তখন বোঝে না শুধু একটা দেশের ক্রিকেট বোর্ড।

এইবার দেখি আরেকটা প্রেক্ষাপট।

২০১৮ আইপিএলে সাকিব সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দলে ছিলো। সব ম্যাচ খেলেছিল। অসাধারণ পারফরম্যান্স না করলেও ভালোই করেছিলো। হায়দ্রাবাদ সেবার ফাইনাল খেলেছিলো। কিন্তু ২০১৯ সালে সাকিব যখন আইপিএলে গেলো,তখন দলেই জায়গা পাইলো না।

তখন সাকিবের মনে হয়েছিল যে, যখনই কাউকে বাদ দিতে হয়, তখন সেটা বাংলাদেশের খেলোয়াড় হয় কেন? এমন কিছু করে দেখাতে হবে যেটা সবাইকে বাধ্য করবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের প্রশংসা করতে। যার ফলাফল ২০১৯ বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স।

আইপিএলে আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করে কতজন? প্রতি মৌসুমে অন্তত ৪-৬ জন নিয়মিত সুযোগ পায়। বাংলাদেশের কতজন থাকে? সাকিব এবং মুস্তাফিজ। এতবছর পরে এসেও বাংলাদেশের মাত্র দুইজন প্রতিনিধিত্ব করে।

অথচ এ বছর সাকিব,মুস্তাফিজের সাথে লিটন চান্স পেয়েছেন। একই দলে সাকিব, লিটন। এবং এবার কলকাতা দলের যে অবস্থা, তারা বেশ কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতো। সাকিব, লিটন, মুস্তাফিজের পাশাপাশি বেশকিছু দল তাসকিনের সাথে যোগাযোগ করেছে। গতবছর ও করেছিলো। তাসকিন যে ফর্মে আছেন, হয়তো সামনের বছর তিনিও আইপিএলে দল পেয়ে যাবেন। হয়তো সামনের বছরেই আমরা অন্তত ৪ জন বাংলাদেশিকে আইপিএলে দেখার সুযোগ পাবো।

এই যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে দেশের ক্রিকেটের প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে, এতে কার লাভ? অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞরা আমাদের ক্রিকেট, ক্রিকেটারদের যখন রিকগনাইজ করে না, তখন আমরা তাদের দোষ দেই। মন খারাপ করি। অথচ আপনি আপনার দেশের ক্রিকেটারদের সব থেকে বড় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলতে দিচ্ছেন না।

যেটা যেকোনো স্পোর্টস মিলিয়েই সব থেকে বড় টুর্নামেন্ট গুলোর একটা। তাহলে আপনি যখন সবার সামনে পারফরম্যান্স করবেন না, তাহলে আপনার সম্পর্কে অন্যরা জানবে কিভাবে? আপনার অ্যাপ্রিসিয়েশনই বা করবে কিভাবে? আপনার দেশের ক্রিকেটের ব্র‍্যান্ড তৈরি হবে কিভাবে?

সাকিব, লিটনকে না ছেড়ে বিসিবি যে সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে; এর ফলে সাকিব,লিটন তো বটেই;ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্রিকেটারদের জন্যও আইপিএলের রাস্তা রুদ্ধ হল।

এমনিতেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা বাইরের দেশের টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ পায় না। যখন সুযোগ পায়,তখন আবার তাদের খেলতে যেতে দেই না। কিন্তু আফগানিস্তানের কেউ যখন খেলবে, তখন তাদের দেখিয়ে কেউ হয়তো বলবে, ‘আফগানিস্তানের ক্রিকেট কত এগিয়ে গেছে, আর আমরা এতদিনেও কিছু করতে পারলাম না।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...