Social Media

Light
Dark

দ্য বিউটি উইদ ব্রেইন

মাঠে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাচ চলছিল তখন। ধারাভাষ্য কক্ষে সাবেক এক ভারতীয় অধিনায়ক। চমকে উঠতে পারেন! তিনি হলেন আঞ্জুম চোপড়া, ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। এই সিরিজে ধারভাষ্য কক্ষে তিনিই সবচেয়ে বড় তারকা।

শুধু অধিনায়কই নন, তিনি ভারতের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অধিনায়ক। ভারতকে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তিনি প্রথম ভারতীয় নারী যিনি মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) আজীবন সদস্যপদ লাভ করেন ২০১৬ সালে।

আঞ্জুমের ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল ১৭ বছর দীর্ঘ। তিনি ভারতের হয়ে ছয়টি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই পথম নারী যিনি ১০০ টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন, ওয়ানডের প্রথম সেঞ্চুরির মালিকও তিনি।

তাঁর নামের ওজন বোঝাতে আর কিছু না বললেও চলে। এখানেই শেষ নয়, দিল্লীর অরুন জেটলি স্টেডিয়ামের (সাবেক ফিরোজ শাহ কোটলা) একটা গেটের নামকরণ হয়েছে তাঁর নামে।

তিনি বলেন, ‘ভারতের হয়ে খেলাটা সব সময়ই আমার জন্য খুব এক্সাইটিং ছিল। ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ তো আর সবাই পায় না। আমি দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটাকে নিজের জন্য সৌভাগ্য হিসেবে দেখি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। ভারতের হয়ে খেলতে পেরে আমি গর্বিত।’

একাধিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে পান পদ্মশ্রী পুরস্কার। এর আগে ২০০৭ সালে তিনি পান অর্জুনা পদক। তিনি অনেক রকম জুতোয় পা গলিয়েছেন। তিনি একাধারে ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, কোচ, লেখক ও অভিনেত্রী। ‘উইমেন্স ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড ১৭৪৫-২০১৩’ বইয়ের সহ-লেখক তিনি। তিনি ‘পোর কাজিন্স অব মিলিয়ন ডলার বেবিস’ নামে একটি ডকুড্রামায় অভিনয় করেন যেটা ২০১১ সালে ওহিও’র আর্নল্ড স্পোর্টস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সম্মানিত হয়।

তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ই খেলাধুলায় উৎসাহী ছিলাম। খেলাটা আমার পরিবারের সাথে মিশে আছে। পরিবার খেলাধুলার ব্যাপারে সব সময়ই আমাকে সমর্থন করেছে।’

আঞ্জুমের বাবা একজন গলফার। ভাইও ক্রিকেটার, তিনি দিল্লীর অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন। চাচা ক্রিকেটার। দাদাও ক্রীড়াবিদ ছিলেন, ক্রিকেটে মাঠে ধারাভাষ্য দিতেন।

তিনি ক্রিকেট জগতের কাউকে অনুসরণ করেন না। তবে ডেভিড গাওয়ার, মাইকেল বেভান, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, শচীন টেন্ডুলকাদের খেলা দেখতে পছন্দ করেন। তবে, অনুপ্রেরণা পান পরিবার থেকে। তিনি বলেন, ‘বাড়ির উঠানে পরিবারের সবাই আমরা ক্রিকেট খেলতাম। সেখান থেকেই আমার ক্রিকেট প্রেমের সূচনা।’

শুধু খেলায় নয়, পড়াশোনাতেও দারুণ ছিলেন আঞ্জুম। তিনি দিল্লী পাবলিক স্কুল ও সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে পড়াশোনা করেন। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি হিউম্যান রিসোর্স ও মার্কেটিংয়ে এমবিএ ডিগ্রি নেন। ধারাভাষ্যের পাশাপাশি তিনি একজন মোটিভেশনাল ও কর্পোরেট স্পিকার। তিনি বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও স্কুল-কলেজে ট্রেনিং প্রোগ্রামে ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেন।

আঞ্জুম বলেন, ‘আমি সব সময় নতুন কিছু করতে পছন্দ করি। ধারাভাষ্যেও সেভাবেই এসেছি। বই লেখা, ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া – সবই এভাবে হয়েছে। ক্রিকেটের বাইরের জগৎটা আমি এভাবেই চিনেছি। আমি সৌভাগ্যবান যে আমি এক জীবনে অনেক কিছু করার সুযোগ পেয়েছি।’

কোচিংও করিয়েছেন। ২০১২ সালে আঞ্জুম ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার (সিএসএ) অধীনে দেশটির নারী ক্রিকেট দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেন। সেবারই প্রথম কোনো নারী ভিনদেশি কোনো দলে কাজ করার সুযোগ পান। ইতিহাস হিসেবে এটাও কম নয়।

শুধু বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের চলমান সিরিজ নয়, অনেকদিন হল ধারাভাষ্যে বিশ্বজুড়ে নিয়মিত মুখ আঞ্জুম। নিয়মিত কাজ করেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। এই মাইক-ক্যামেরার জগতে যে ক’জন নারী দাপটের সাথে কাজ করছেন – তাঁদের একজন তিনি।

এই সাফল্যের রহস্যটা কি? আঞ্জুম বলেন, ‘খেলাধুলায় ভাল করার রহস্যটা খুবই সাধারণ। এজন্য আপনাকে অনুপ্রাণিত, শৃঙ্খলাবদ্ধ, নিবেদিত, নিরলস হতে হবে। আর সাফল্য পাওয়ার তীব্র বাসনা থাকতে হবে। আর ফিট থাকা, স্বাস্থ্য ভাল রাখাটাও জরুরী। আমি ক্রিকেটের দুনিয়াতেই থাকতে চাই, সেটা যে ভূমিকাই হোক না কেন!’

আঞ্জুমের এই ইনিংসটা আরো লম্বা হোক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link