শতকের মাইলফলক স্পর্শ করতে মুখিয়ে থাকে সবাই। সেটা হোক রান কিংবা ভিন্ন কিছুর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে শতকের শতক করেছেন লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার। অবশ্যি ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে শতকের শতক করেছেন ২৫ জন ক্রিকেটার। একজন তো প্রায় করে বসেছিলেন শতকের দ্বিশতক। হ্যা কথা বলছি জ্যাক হবসের কথা, এই ভদ্রলোক তো ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে শতক করেছেন মোটে ১৯৯ টি। আর মাত্র ১টি শতক করলেই হয়ে যেত অনন্য এক কীর্তি যা কখনোই ভাঙা সম্ভব হতো নাহ।
এ তো বললাম রানের দিক দিয়ে শতকের কথা। যদি বলি ম্যাচের হিসেবে শতকের মাইলফলক? ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত শত ম্যাচ খেলেছেন শত শত ক্রিকেটার। টেস্ট ক্রিকেটে এই সংখ্যাটা ৭২। টেষ্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত শতম্যাচ খেলেছেন ৭২ জন ক্রিকেটার। ওয়ানডেতে ২০০ ম্যাচ খেলেছেন ৮৫ জন খেলোয়াড়।
টি-টোয়েন্টিতে শতম্যাচ খেলার কৃতিত্ব রয়েছে ১৩ জন ক্রিকেটারের। যার সর্বশেষ সংযোজন অবশ্যি বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিমের। এই তালিকায় বাংলাদেশের আরো একজনের নাম আছে, তিনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই লিষ্টে প্রবেশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন একজন। তিনি অবশ্য শুধু শত টি-টোয়েন্টি খেলার মাইলফলকের জন্যই অপেক্ষায় নন, বরং আরো একটি অনন্য মাইলফলক ছোয়ার অপেক্ষায়। নামটি বিরাট কোহলি।
গত কয়েক বছরে হয়তো ক্রিকেট প্রেমীদের সবচেয়ে বড় আক্ষেপের নাম কিং কোহলির বড় রানের ইনিংস খেলতে না দেখা। গত কিছুদিন ধরে তো কোহলি অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন নিজেকে খুঁজে পাওয়ার। চলতি বছরে বিশ্রাম কিংবা বিশ্রামের নামে দল থেকে দূরে রাখার পর অবশেষে দেশের জার্সি পড়ে মাঠে নামবেন ২৮ এ আগষ্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে।
এদিন মাঠে নামার পরই ১৪ তম খেলোয়াড় হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে শতম্যাচ খেলার কৃতিত্ব অর্জন করবেন। এরই সাথে অর্জন করবেন ক্রিকেট ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় প্লেয়ার হিসেবে ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে ১০০ ম্যাচ খেলার গৌরব।
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ সালে অষ্টেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচের মাধ্যমে ক্রিকেটে গোড়াপত্তন হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের। এরপর একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ক্রিকেটের এই তিন ফর্মেটেই শত ম্যাচ খেলার গৌরব অর্জন করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান রস টেইলর। চলতি বছরের চার এপ্রিল অবশ্যি সবধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন কিংবদন্তি এই ব্যাটার।
চলতি মাসের ২৮ তারিখে অবশ্যি রস টেইলর এর থেকে মুকুটটি একমাত্র দাবিদার হিসেবে নিজের করে নিবেন বিরাট কোহলি। রস টেইলর এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন করোনা আসার ঠিক পূর্বমুহূর্তে ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে। সেদিন প্রতিপক্ষ ছিলো ভারত। ভারতের বিপক্ষে ১০০ তম টেষ্ট ম্যাচ এ খেলতে নেমে এমন অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। এর আগে অবশ্য একই বছরের একই মাসের দুই তারিখে খেলতে নেমেছিলেন ১০০তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। ১০০ তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন তার ০৯ বছর আগে ২০ই ফেব্রুয়ারী ২০১১ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে।
বিরাট কোহলি অবশ্য এই অনন্য কৃতিত্বে নিজের নাম লেখাবেন টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার মাধ্যমে। কোহলি ইতিমধ্যে খেলে ফেলেছেন শততম ওডিআই এবং শততম টেষ্ট ম্যাচ। শততম টেষ্ট ম্যাচ খেলেছেন নিজের অফফর্মের সময়ে। অর্থাৎ এইতো কতক মাস পূর্বে খেলেছেন নিজের শততম টেষ্ট। শততম টেষ্ট ম্যাচটি খেলেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ঠা মার্চ ২০২২ সালে। এদিন তার ছোটবেলার ফেবারিট ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড় এর কাছে থেকে স্পেশাল সংবর্ধনা পেয়েছিলেন। এছাড়াও টিমমেট দের কাছে থেকে পেয়েছিলেন গার্ড অব অনার।
এই টেস্টে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বিরাট কোহলি। কোহলি তার শততম ওডিআই ম্যাচ ও খেলেছিলেন রস টেইলরের অনুরুপ ৯ বছর আগে ২০১৩ সালে। ম্যাচটি ছিলো উইন্ডিজের বিপক্ষে। কোহলি তার শততম ওডিআই ম্যাচে খেলেছিলেন ১৮ বলে ২২ রানের ইনিংস।
এই অনন্য কীর্তি নিশ্চয়ই কোহলিকে ভিন্ন এক আনন্দে ভাসাবে। বিশ্বব্যাপি শত কোটি ভক্তের এখন একটাই চাওয়া কিং কোহলি ফিরে আসুন চিরচেনা রুপে, কোহলিকে আবারও দেখতে চান রাজসিংহাসনে, দেখতে চান বোলারদের উপড় রাজত্ব করতে।