দিল্লী টেস্ট: দর্শকের চোখে নায়ক

পাকিস্তানের বিপক্ষে অনিল কুম্বলের সেই স্মরণীয় বোলিং ফিগার ছাড়াও পুরো ক্যারিয়ারে কুম্বলে ছিলেন স্পিন জাদুকর। নিজের সিনিয়র সতীর্থের প্রশংসা করতেও তাই কৃপণতা করেন না আরেক সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার হরভজন সিং। কুম্বলের দশ উইকেট অর্জনের দিনেও মাঠে ছিলেন হরভজন।

ভারতীয় কিংবদন্তি স্পিনার অনিল কুম্বলে। শেন ওয়ার্নের মতো তিনি হাত থেকে কোনো জাদু তৈরি করতে পারতেন না। তিনি মুত্তিয়া মুরালিধরনের মতো ব্যাটসম্যানদের চারপাশে স্পিনের মায়াজাল তৈরি করেননি। তবুও তাঁর নামের পাশে আছে ৬১৯ উইকেট। এই বোলার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।

তবে উইকেট সংখ্যায় শেন ওয়ার্ন এবং মুত্তিয়া মুরালিধরন এগিয়ে থাকলেও একটা জায়গায় এগিয়ে আছেন কুম্বলে। এক ইনিংসে প্রতিপক্ষের সবকয়টি উইকেট একাই দখল করার রেকর্ড আছে তাঁর ক্যারিয়ারে। কিন্তু বিরল এই কীর্তি কখনো গড়তে পারেননি বাকি শেন ওয়ার্ন কিংবা মুত্তিয়া মুরালিধরন।

অনিল কুম্বলেকে ছাড়া এখন পর্যন্ত মাত্র দুইজন বোলার এক ইনিংসে দশ উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছেন। ক্রিকেট ইতিহাসে সবার আগে এই মাইলফলক ছোঁয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন জিম লেকার। অন্যদিকে ২০২১ সালে আজাজ প্যাটেল এক ইনিংসে একাই ভারতের দশ উইকেট শিকার করেছেন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে অনিল কুম্বলের সেই স্মরণীয় বোলিং ফিগার ছাড়াও পুরো ক্যারিয়ারে কুম্বলে ছিলেন স্পিন জাদুকর। নিজের সিনিয়র সতীর্থের প্রশংসা করতেও তাই কৃপণতা করেন না আরেক সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার হরভজন সিং। কুম্বলের দশ উইকেট অর্জনের দিনেও মাঠে ছিলেন হরভজন।

বোলাররা উইকেট তুলতে পারলে খুশি হয়, কিন্তু হরভজন নিজে উইকেট না পাওয়াতেই বরং খুশি হয়েছিলেন। কেননা তিনি উইকেট না পাওয়াতেই অনিল কুম্বলে এমন একটা মাইলফলক ছোঁয়ার গৌরব অর্জন করতে পেরেছেন।

‘দিল্লী টেস্টে অনিল ভাই দশ উইকেট নিয়েছিলেন। এবং আমি খুশি যে আমি কোন উইকেট পাইনি সেদিন। বিশেষ করে ৬-৭জন ব্যাটসম্যানকে আউট করার পর আমি ভেবে নিয়েছি আমার আর উইকেট তোলার দরকার নেই। পুরো দশ উইকেট আসলে কুম্বলে ভাইয়ের প্রাপ্ত।’ – স্টার স্পোর্টসে এভাবেই সে-সময়ের বর্ণনা দিয়েছিলেন হরভজন সিং।

২০০৭ এবং ২০০৮ সালে ভারত জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন অনিল কুম্বলে। এছাড়া ২০১৬ সালে নিজ দেশের কোচের দায়িত্ব পালন করেন এই কিংবদন্তি। ওয়ানডে এবং টেস্টে এখন পর্যন্ত ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার কুম্বলে। কি জানি, সে যুগে টি-টোয়েন্টি থাকলে এখানেও হয়তো ব্যাটারদের নাকাল করে ছাড়তেন তিনি।

যেকোনো পরিসংখ্যান ছাড়াই অনিল কুম্বলেকে সেরা হিসেবে মেনে নিয়েছেন তাঁর উত্তরসূরী হরভজন সিং। কুম্বলেকে ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণের সবচেয়ে সেরা বোলারদের সাথে একই কাতারে বন্দী করেছেন হরভজন। তাঁর মতে, এই লেগি চাইলে যেকোনো ভাবে যে কাউকে আউট করতে পারতো।

২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী হরভজন সিং বলেন, ‘আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে অনিল কুম্বলে সর্বশ্রেষ্ঠ ভারতীয় যে ব্যাট-বলের খেলাটা খেলেছে। এমনকি তিনিই ভারতেরে সবচেয়ে সেরা ম্যাচ-উইনার। অনেকেই হয়তো বলাবলি করে, কুম্বলে তো বলে স্কিপ করাতে পারেনা। কিন্তু সত্যিটা হলো, তিনি ব্যাটারদের বোকা বানাতে জানতেন। বল স্পিন করুক কিংবা না করুক তিনি ব্যাটারদের আউট করতে পারতেন।’

হরভজনের প্রশংসা এখানেই থেমে যায়নি। তিনি আরো যোগ করেন যে, কারো যদি অনিল কুম্বলের অর্ধেক সামর্থ্য থাকে, সে চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার হতে পারবে। এই স্পিন গ্রেটের সাথে খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবানই মনে করেন হরভজন সিং।

অনিল কুম্বলে হরভজনের কাছে ক্রিকেটের প্রতি অবিশ্বাস্য এক নিবেদিত আত্মা। হরভজন অবশ্য বাড়িয়ে বলেননি কিছু। প্রজন্মের অন্যতম সেরা বোলার কুম্বলের নিবেদন ছিল অনন্য, অতুলনীয়। তাই হয়তো চোয়ালে ব্যান্ডেজ বেঁধেই বল করতে এসেছেন; সেই সাথে ধরে রেখেছেন বলের ধার।

অনিল কুম্বলে নিঃসন্দেহে ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে পঠিত অধ্যায়গুলোর একটি। অগুণিত ভবিষ্যৎ ক্রিকেটারের কাল্পনিক গুরু; তারা কুম্বলে হতে চায়, কুম্বলের মত হতে চায়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...