কতশত কাব্য তাঁকে নিয়ে তো রোজই করা হয়। কত দিস্তার পর দিস্তা কাগজ খরচ হয়। কত কিবোর্ডে লিখতে লিখতে হ্যাঙ হয়ে যায় কম্পিউটার। কিন্তু, লেখা থামে না। লিওনেল মেসি এমনই এক চরিত্র। তিনি মানেই হাজার গল্প, হাজার কাব্য। মেসি আসলে একটা উপন্যাসের নাম। কিন্তু, সেই উপন্যাস অসংখ্য অর্জনে ঠাঁসা। কিন্তু, একটা অধ্যায় যে একেবারেই ফাঁকা।
ট্রফি কেবিনেটের একটা জায়গা দেখে হয়তো কেবল মেসিই নয়, লক্ষ-কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থকের বুকের ভেতরে হাহাকার উঠত। প্রায় ২০ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে মেসির আক্ষেপ যে ওই একটাই – একটা বিশ্বকাপ, স্রেফ একটা ট্রফি।
প্রথমার্ধেই দু’টো গোল করে ফেলে, স্বপ্নের পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল মেসিরা। কিন্তু, প্রতিপক্ষ দলটা যে ফ্রান্স। তাই তো, মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টে দিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে নামের এক তরুণ দানব। ম্যাচ গেল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে লক্ষ্যভেদ করলেন ম্যাচের প্রথমার্ধে পেনাল্টি থেকে গোল করা ওই ছোটখাটে মানুষটা। কেউ কেউ যাবে আবার ভিনগ্রহের ফুটবলারও বলেন। তিনি লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।
পরে আবার সেই দানব এমবাপ্পেই সমতা ফিরিয়েছিলেন। করেছিলেন ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রথম হ্যাটট্রিক। কিন্তু, শেষ রক্ষা হল না। টাইব্রেকারে মেসির হয়ে, আর্জেন্টিনার হয়ে লড়াইটা করলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ফলাফল, ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ উঠল আর্জেন্টিনার হাতে।
ব্যাস, আক্ষেপের যন্ত্রনা মাটি চাপা দিলেন মেসি। ডিয়েগো ম্যারাডোনার আবারও সেই আর্জেন্টিনা থেকে একজন আসলেন, যার জাদুতে নাচল পুরো ফুটবল বিশ্ব। তবে, এই দিনটা দেখার জন্য নেই সেই ম্যারাডোনা। তিনি থাকলে আজ আর্জেন্টিনার বিশ্বজয় যেন পূর্ণতা পেত।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সাথে তাঁর একটা লড়াই ছিল। সেটা এখন অতীত। রোনালদোর তুলনায় মেসি তো এখন দূর আকাশের তারা। যে তারাদের দুনিয়ায় আগেই সামিল হয়েছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা কিংবা পেলেরা। মেসির জন্য অপেক্ষাটা বাড়ল কেবল। আসলে মেসি তো সেই কালজয়ী উপন্যাস যার পূর্ণতা আসে কেবল শেষ অধ্যায়ে গিয়েই।
এই মানুষটাকে খেলতে দেখতে পারাটাই এই প্রজন্মের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। বিশ্বকাপ ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে মেসি গ্রুপ পর্বে, শেষ ষোলতে, কোয়ার্টার ফাইনালে, সেমিফাইনালে এবং ফাইনালে গোল করার রেকর্ড গড়েছেন। অবিশ্বাস্য, অতিমানবীয়, অনবদ্য!
১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের সুপারস্টার ছিলেন সালভাতর শিলাচি। এই ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড সেবার দেশের মাটিতে গোল্ডেন বল ও বুট দু’টোই জিতেন। এবার মেসিও সেই একই অর্জনটাই ছুঁয়ে ফেলতে পারতেন, হয়নি কেবল এমবাপ্পের জন্য। তবে, মেসির আজ কোনো আক্ষেপ নেই।
নব্বইয়ের বিশ্বকাপে ইতালি হয়েছিল তৃতীয়। আর এবার আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন। না এবার আর মেসির কোনো আক্ষেপ কি করে থাকে। আক্ষেপ নেই বিশ্বকাপেরও, সে পৌঁছে গেছে তাঁর সেরা ঠিকানায়। মেসির জন্য তাঁর ক্যারিয়ারের বাকিটা সময় কেবলই উদযাপনের। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা মেসিকে দেখছি।