সম্প্রতি বার্সেলোনা থেকে ১০.৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে গ্যাবনিজ স্টাইকার পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াংকে নিজেদের দলে ভেড়াল চেলসি। আক্রমণভাগের এই খেলোয়াড়কে ব্লুজরা নয় নম্বর জার্সির দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রায় ১৮ বছর আগে ডাচ ফুটবলার জিমি ফ্লয়েড হ্যাসেলব্লাঙ্কের পর এক ট্যামি আব্রাহাম ছাড়া আর কেউ চেলসির নয় নম্বর জার্সি পরে তেমন সফল হতে পারেননি, তাই অউবা’র সফলতার ব্যাপারেও অনেক ফুটবল বোদ্ধাই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ম্যানেজার থাকাকালীন সময় টমাস টুখেলের দলে খেলেছিলেন অবাবেয়াং। টুখেল মনে করেন ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা ফুটবলার চেলসির নয় নম্বর জার্সি নিয়ে ওঠা সব কথার অবসান ঘটাবেন। অউবাকে এই জার্সি নম্বর দেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অউবা এই জার্সি নম্বরের সাথে জড়িত অতীতের ঘটনাবলী নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়।’
গত মাসেই চেলসি নয় নম্বর জার্সি নিয়ে এই জার্মান ম্যানেজার মজা করে বলেছিলেন, ‘খেলোয়াড়েরা মনে করে এটা অভিশপ্ত।’ টুখেল কথাটি মজা করে বললেও আসলে এর মধ্যে সত্যতা আছে, চেলসির সর্বশেষ ১১ ফুটবলার যারা এই জার্সি নম্বর পেয়েছিলেন তাদের কেউই তেমন সফল হতে পারেননি।
এর মধ্যে তিন জনকে চেলসি তাদের ক্লাবের রেকর্ড ফি ভেঙ্গে দলে ভিড়িয়েছিল, যার সর্বশেষ উদাহরণ হলেন বেলজিয়ান স্টাইকার রোমেলু লুকাকু। ক্লাব রেকর্ড ৯৭.৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে গত মৌসুমে ইন্টার মিলান থেকে এই স্টাইকারকে দলে ভিড়িয়েছিল চেলসি। স্ট্যামফোর্ড তেমন একটা সবিধা করতে না পেরে এই মৌসুমের শুরুতেই আবার ইন্টারে ধারে খেলতে গিয়েছেন বেলজিয়ান এই ফুটবলার, ফলে ফাঁকা থাকা নয় নম্বরটি অউবা পেয়ে যান।
টুখেলের অধীনে ডর্টমুন্ডে থাকাকালীন সময় ৯৫ ম্যাচে ৭৯ গোল করেছিলেন অবামেয়াং। গ্যাবনিজ এই স্টাইকারের প্রতি তাই তুখেলের বেশ ভরশা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সে এই জার্সি নম্বর পড়েই নতুন ইতিহাস গড়বে। সে নয় নম্বর জার্সি নিয়েছে এর থেকেই বোঝা যায় যে সে কি পরিমাণে সাহসী’ তিনি যোগ করেন।’
বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ছেড়ে ২০১৮ সালে আর্সেনালে যোগ দেন অবামেয়াং। নর্থ লন্ডনের ক্লাবটিতে শুরুতে সময়টা ভাল কাটলেও ২০১৯ সালে মিকেল আর্তেতা গানারদের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সব হিসাব পাল্টে যায়। স্প্যানিশ এই ম্যানেজারের সাথে বনিবনা না হওয়ায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড হারাতে হয় তাকে। এরপর শীতকালীন দলবদলের বাজার চালু হলে কাতালান ক্লাব বার্সেলোনায় যোগ দেন তিনি।
ব্লাগুরানাদের ছেড়ে এবার আবার লন্ডনে ফিরলেন অউবা তবে গন্তব্য এবার চেলসি। স্ট্যামফোর্ড এসেই তারকা এই ফুটবলার ঘোষণা দিলেন ‘প্রিমিয়ার লিগে এখনো আমার অনেক হিসাব নিকাশ বাকি আছে।’ তার কথায় বোঝাই যাচ্ছে যে আর্সেনাল থেকে তিনি যেভাবে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তা এখনো মেনে নিতে পারেননি।
দলে নতুন ভেড়ানো এই তারকা ফুটবলার সম্পর্কে টমাস টুখেল আরো বলেন, ‘অউবাকে আমি যতটুকু চিনি তাতে আমি সহজেই বলতে পারি যে সে এমন এক খেলোয়াড় যে সব সময় লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য সে সবসময় মুখিয়ে থাকে, চ্যালেঞ্জটা যত বেশি কঠিন হবে সে তাতে তত বেশি নিজের সবটুকু ঢেলে দিবে।’
সম্প্রতি বার্সেলোনায় নিজ বাড়িতে ডাকাতির শিকার হন অবামেয়াং, এই ডাকাতির সময় চোয়ালে আঘাত পান এই ফুটবলার। অউবার ইনজুরি নিয়ে টুখেল বলেন, ‘এই মুহূর্তে সে দলের সাথে অনুশীলন করতে পারবে না। প্রথমে আমাদের তাকে একটা মাস্ক দিতে হবে যা তার চোয়ালের আত্মরক্ষা নিশ্চিত করবে এবং সপ্তাহখানিক পরে সে এই মাস্ক পড়েই দলের সাথে অনুশীলন শুরু করতে পারবে। সে খুব দ্রুতই এই ইনজুরি থেকে কাটিয়ে উঠবে।’
এদিকে দলের আরেক তরুণ স্টাইকার আর্মান্ডো বোর্জার সাথে নতুন চুক্তি সম্পন্ন করেছে চেলসি। গত মৌসুমে সাউথহ্যাম্পটনে ধারে খেলতে গিয়ে ৩২ ম্যাচে ৬ গোল করা এই ২০ বছর বয়সী ফুটবলারকে পাকাপকি ভাবে দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহী ছিল ওইয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেড এবং এভারটন। নতুন এই চুক্তি অনুযায়ী ২০২৮ সাল পর্যন্ত স্ট্যামফোর্ড ব্রিজেই থাকছেন এই আলবেনিয়ান ফুটবলার।
নতুন এই চুক্তি সম্পর্কে বোর্জা বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই এই ক্লাবে খেলছি তাই এটা আমার নিজের এবং আমার পরিবারের জন্য অসাধারণ এক খবর।’ চলতি মৌসুমে ক্লাব ম্যানেজার টমাস টুখেল প্রায়ই এই ফুটবলারকে বেঞ্চ থেকে বদলি হিসেবে ব্যাবহার করেছেন।
সর্বশেষ চেলসির নয় নম্বর জার্সি পড়ে যিনি একটু সফলতার মুখ দেখেছিলেন সেই ট্যামি আব্রাহাম তো রোমায় যোগ দেওয়ার সময় বলেই ফেলেছিলেন যে যেই জার্সি পড়বে তাকেই দুর্ভাগ্য তাড়া করে ফিরবে। এই অভিশাপের অবসান ঘটিয়ে অউবা তার চিরচেনা গোল উদযাপন করে আবার প্রিমিয়ার লিগে জ্বলে উঠবেন এটাই এখন চেলসি সমর্থকদের প্রত্যাশা।