বাবরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে…

রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিং সহায়ক পিচে ড্রয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম টেস্ট। কিন্তু শেষদিনে সাহসী ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়েছে স্বাগতিকরা। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ক্ষোভ ঝেড়েছেন পছন্দমতো পিচ না পেয়ে। পাশাপাশি কথা বলেছেন পুরো টেস্টের ঘটনাপ্রবাহ এবং দল নির্বাচন নিয়েও।  

রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিং সহায়ক পিচে ড্রয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম টেস্ট। কিন্তু শেষদিনে সাহসী ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়েছে স্বাগতিকরা। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ক্ষোভ ঝেড়েছেন পছন্দমতো পিচ না পেয়ে। পাশাপাশি কথা বলেছেন পুরো টেস্টের ঘটনাপ্রবাহ এবং দল নির্বাচন নিয়েও।  

সংবাদমাধ্যমে বাবর বলেন, ‘আমরা পিচের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছিলাম, কিন্তু পছন্দমতো পিচ পাইনি। আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমরা স্পিনসহায়ক টার্নিং পিচ চেয়েছিলাম, কিন্তু পরিবেশ এবং প্রস্তুতির অভাবে সেটা সম্ভব হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এমন হারে পুরো দলই হতাশ। আমাদের সামনে ম্যাচ জেতার সুযোগ ছিল। ইনিংসের শুরুর দিকে আমরা সঠিক পথেই ছিলাম। লাঞ্চের পর ব্যাটসম্যানরা দারুণ জুটি গড়েছিল, পুরো দলই তখন জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। কিন্তু দ্রুত উইকেটের পতনের ফলে নতুন ব্যাটসম্যানরা ক্রিজে সেট হবার সময় পাননি। চাপের মুখে ব্যাটসম্যানরা খেই হারিয়ে ফেলেছিল। তবে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের প্রশংসা করতেই হবে। তাঁরা লড়াকু মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে।’

একদম হাতের মুঠোয় নিয়ে না আসলেও দ্বিতীয় ইনিংসে একপর্যায়ে জয়ের কক্ষপথেই ছিল পাকিস্তান। চতুর্থ দিন খেলা শেষ হবার আগে ইমাম উল হক এবং সৌদ শাকিল ৫৪ রানের অবিচ্ছিন্ন এক জুটি গড়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন। স্পিন এবং পেসের বিপক্ষে দুজনেই ছিলেন বেশ সাবলীল। কিন্তু পঞ্চমদিনে নিজেদের ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন পাকিস্তানি ব্যাটাররা। পাকিস্তান তাঁদের শেষ পাঁচ উইকেট হারায় নয় রানের ব্যবধানে। 

বাবর বলেন, ‘আমাদের সামনে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। আমরা জয়ের খুব কাছেই ছিলাম, কিন্তু কিছু ভুল আমাদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে।’

এছাড়া স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা নিয়েও হতাশা পোষণ করেন বাবর। বলেন, ‘চা বিরতির পর আগা সালমান এবং আজহার আলি আউট হলে আমরা বুঝতে পারছিলাম ম্যাচ আমাদের হাত গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। নাসিম শাহ এবং মোহাম্মদ আলি শেষদিকে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু টেলএন্ডারের জন্য এত দায়িত্ব রাখা উচিত হয়নি। আমাদের স্পেশালিস্ট ব্যাটারদের ম্যাচ শেষ করে আসা উচিত ছিল।’

পিচের পাশাপাশি পাকিস্তানের দল নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। চারজনকে অভিষেক করানোর পাশাপাশি পাকিস্তান মাঠে নেমেছিল কোনো অলরাউন্ডার ছাড়াই। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে হারিস রউফ ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়লে পাকিস্তানের পেস বোলিং লাইনআপ হয়ে পড়ে নখদন্তহীন।

অথচ ফাহিম আশরাফের মতো কার্যকরী পেস বোলিং অলরাউন্ডার খেলানোর সুযোগ ছিল তাঁদের সামনে। এছাড়াও ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করার পরও আবরার আহমেদের পরিবর্তে পাকিস্তান মাঠে নামে জাহিদ মাহমুদকে নিয়ে। তবে বাবর অবশ্য দল নির্বাচনে ভুল হয়েছে এমনটা মানতে নারাজ। বরং তাঁর দাবি সেরা কম্বিনেশনের দল নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন তাঁরা। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে সেরা এগারোজনই মাঠে নেমেছিল। আমি একাদশ নিয়ে খুশি। আমরা এই টেস্টের জন্য পরিকল্পনা করেছি এবং সে অনুযায়ী একাদশ বাছাই করেছি। দল নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। প্রত্যেক দলেরই আলাদা দর্শন আছে, আপনি চাইলেই একদিনে সেটা পরিবর্তন করতে পারবেন না। আপনাকে পরিস্থিতির অনুযায়ী খেলতে হবে, আক্রমণের সময় আক্রমণ। আবার প্রয়োজনমাফিক রক্ষণাত্নক হতে হবে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে এবং আমরা নিজেদের পরিকল্পনামাফিক খেলার চেষ্টা করেছি। আমরা জয়ের কথা ভেবেই পরিকল্পনা করেছিলাম। দিনশেষে ম্যাচটা আমাদের হাতেই ছিল।’

চতুর্থ দিনে ইংল্যান্ডের অপ্রত্যাশিত ইনিংস ঘোষণা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল গোটা বিশ্ব। অনেকে তো আখ্যায়িত করেছিল পাগলাটে এক সিদ্ধান্ত হিসেবে। যদিও বাবরের ভাষ্যমতে তাঁরা অবাক হননি, বরং ভেবে রেখেছিলেন তাঁরা জানতেন এমনটা ঘটতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁদের থেকে এমন ক্রিকেটই আশা করেছিলাম। ঘরের মাঠে গোটা গ্রীষ্মজুড়ে তাঁরা এমন দর্শনের ক্রিকেটই খেলছিল। আমরা সে অনুযায়ীই নিজেদের পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা সঠিক জায়গায় বল করতে পারিনি, ফলে তাঁদের আক্রমণাত্নক ব্যাটিং করাটা সহজ হয়ে গিয়েছে। প্রথম ইনিংসেই তাঁরা আমাদের চাইতে এগিয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা একদিক থেকে টানা ভালো বোলিং করেছি এবং সাফল্যও পেয়েছি। কিন্তু জো রুট এবং হ্যারি ব্রুক কৃতিত্ব পাবেন, দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁরা দুজনেই অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন।’

রাওয়ালপিন্ডির দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করেন পাক অধিনায়ক। টানা পাঁচদিন ধরেই তাঁরা সমর্থন দিয়ে গেছেন স্বাগতিক দলকে। বাবর বলেন, ‘পিন্ডির দর্শকেরা কখনোই হতাশ করেনি। তাঁরা পাঁচদিন ধরেই দুই দলকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। ঘরের মাঠে এমন দর্শক দেখে বিশ্ববাসী নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট এখনো মরে যায়নি।’

তবে পাকিস্তানের পারফরম্যান্স নিশ্চিতভাবেই মন ভরাতে পারেনি স্টেডিয়ামে আসা হাজার দর্শকদের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...