আরও একটি অর্ধ-শতক গেল বিফলে। বাবর আজম আপ্রাণ চেষ্টা করেও থেকে যাচ্ছেন পরাজিতদের দলে। দলগতভাবেই যেন কোথাও একটা মাত খেয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। দুর্দশা যেন কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না শাহীন শাহ আফ্রিদির দল। সেক্ষেত্রে বাবর আজম কি পুরোপুরি দায় এড়িয়ে যেতে পারেন?
গেল দিন অবশ্য বাবর আজমের দিকেই উঠেছিল প্রশ্ন। ২২৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাবর ১৬২.৮৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছিলেন। তবুও খানিকটা প্রশ্নবিদ্ধই হয়েছিল তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দলের সবাই হয়েছিলেন ব্যর্থ। তবে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচের চিত্রটা ছিল খানিকটা ভিন্ন।
এদিন সমালোচনার একটা জবাব দেবেন বলেই হয়ত বাবর ঠিক করেছিলেন। তাইতো ব্যাটিং ইনিংসের শুরুতে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও বেশ আগ্রাসী ছিলেন বাবর। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাবর শেষ অবধি থেমেছেন ৪৩ বলে ৬৬ রান করে। এদিন তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫৩.৪৮।
এদিন বাবরের খেলা ইনিংসকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, শুরুর ১৮ বল। এরপর ফিফটির আগ পর্যন্ত একটি ভাগ। শেষ ভাগটা আউট হওয়ার আগ অবধি। তিন ভাগের বিশ্লেষণে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করা যেতে পারে পাকিস্তানের সদ্য সাবেক অধিনায়কের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচকে। আগের ম্যাচে অবশ্য যোগ্য সঙ্গ ছিল না বাবরের। তবে এদিন ফখর জামান দারুণভাবে ব্যাট চালিয়েছেন।
তিনিও তুলে নিয়েছেন অর্ধ-শতক। ২০০ স্ট্রাইক রেটে ৫০ রানেই আউট হয়েছে ফখর। বেশ দুর্ভাগ্যজনকভাবেই আউট হয়েছেন ফখর জামান। ব্যাটের খোঁচা লেগে বল আঘাত হেনেছে স্ট্যাম্পে। এমন আউটে ব্যাটারের নিশ্চয়ই দোষ থাকে না। পাশাপাশি প্রশ্ন তোলার সুযোগও থাকে না।
আবার ফেরা যাক বাবর আজমে। ইনিংসের প্রথম ১৮ বলে বাবর রান করেছিলেন ৩৪। প্রায় ১৮৮ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি। সাইম আইয়ুব ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের দ্রুত প্রস্থানের পরও তার ব্যাট চলেছে দ্রুত গতিতে। ইনিংসের মধ্যভাগে রানের গতি খানিকটা খর্ব হয়, সে কথা সত্য। তবে ৩৪ থেকে ৫০ অবধি যেতে বাবর আজম খেলেছেন আরও ১৮টি বল। এই সময়ে তার স্ট্রাইকরেট স্রেফ ৮৮.৮৮।
স্ট্রাইক রেটের এমন পতন নিশ্চয়ই বেমানান। যদিও ফখরের আগ্রাসনের সঙ্গী ছিলেন বলেই এড়িয়ে যাওয়া যায় বাবরের এমন ধীর লয়ের ইনিংসকে। আবার ফখর জামান আউট হওয়ার পর দ্রুতই বেশকিছু উইকেটের পতন ঘটে পাকিস্তানের।
তবুও অর্ধ-শতকের পর হাত খুলেই খেলেছেন বাবর। পরবর্তী চার বলে বাবর নিয়েছেন ১৬ রান। অথচ পঞ্চাশ করার আগ অবধি তিনি স্রেফ একটি চারই আদায় করতে পেরেছিলেন। সেখানে বরং একটু একটু করে ম্যাচ ফসকে যেতে শুরু করে।
ফিফটির পরের আগ্রাসনকে আর বেশিদূর অবধি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি বাবর। তিনি আউট হয়েছেন যখন দলের জয়ের জন্য ১৭ বলে প্রয়োজন ৪২ রান। এখানেই মূলত তীর্যক সব প্রশ্ন ঘনীভূত হতে শুরু করে। বাবর আজমকে বেশ বড় মানের ব্যাটার হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। অভিজ্ঞতার ঝুলিটাও বেশ সমৃদ্ধ তার। তবুও ম্যাচের প্রয়োজন বুঝতে না পারা এবং সেই অনুযায়ী ব্যাট করতে না পারাই বাবরকে পিছিয়ে দিচ্ছে বারংবার।
সে সাথে পিছিয়ে যাচ্ছে দল। বাবরের সমৃদ্ধ হওয়া পরিসংখ্যান আখেরে দলকে সহয়তা করছে না বিপদের মুহূর্তে। এখানেই একজন ভাল খেলোয়াড় আর একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়ের পার্থক্য গড়া শুরু হয়। বাবররা আর ছাপিয়ে যেতে পারেন না বিরাট কোহলিদের। সে দায় অবশ্য সতীর্থদেরও উপর বর্তায়।