বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের সেরা একাদশ

শেষ হয়েছে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আয়োজিত টুর্নামেন্টে চোখ কেড়েছে অনেক পারফর্মার, দেখা গেছে সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি, উইকেটের মেলা। তাঁদের থেকেই খেলেই খেলা ৭১ বাছাই করেছে সেরা একাদশ।

যেকোনো ক্ষেত্রেই সেরা একাদশ নির্বাচন করাটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, এই পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মত থাকতে পারে। তবে, সব বিবেচনা করে আমাদের সম্পাদকীয় প্যানেলের মনে হয়েছে এই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স বিবেচনায় এটাই সবচেয়ে আদর্শ একাদশ।

  • লিটন কুমার দাস (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম): উইকেটরক্ষক

লিটন এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। শট সিলেকশন, উইকেটে সেট হওয়া, সব ভুল শুধরানো; এই টুর্নামেন্টে দেখা গেছে অন্য এক লিটন দাসকে! এই টুর্নামেন্টে করেছেন ৪৯.১২ গড় ৩৯৩ রান। আর উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ডিসমিসাল নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মুশফিকুর রহিমের সাথে যুগ্ম ভাবে (১০ টি) শীর্ষে আছেন।

  • সৌম্য সরকার (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম)

লিটনের তুলনায় সৌম্য সরকার এই টুর্নামেন্টে একটু পিছিয়ে। ১১ ম্যাচে ২৯২ রান করা সৌম্য রান সংগ্রাহকদের তালিকায় আছেন পাঁচ নম্বরে। তবে পুরো টুর্নামেন্টেই লিটন-সৌম্য জুটি আলো কেড়েছে। একসাথে নিজেদের দিনে রীতিমত তান্ডব চালিয়েছেন দুজন

  • নাজমুল হোসেন শান্ত (মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী): সহ-অধিনায়ক

নাজমুল দীর্ঘদিনের পাখির চোখ করা খেলোয়াড়। বিসিবি যে ক’জন খেলোয়াড়ের উপরে বিনিয়োগ করেছে বেশি, শান্ত তাদের একজন। রাজশাহীর অধিনায়ক শান্ত আছেন রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিন নম্বরে, টুর্নামেন্টে যে তিনটি সেঞ্চুরি হয়েছে তাঁর একটি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।

  • মুশফিকুর রহিম (বেক্সিমকো ঢাকা)

মুশফিকুর রহিমের জন্যে টুর্নামেন্টটা গেছে ‘খারাপ যায় নি’র মত। রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিনি আছেন ছয় নম্বরে। তবে মিডল অর্ডারে ঢাকার আস্থা ছিলেন তিনিই। ১০ ম্যাচে ২৮৭ রান করেছেন তিনি।

  • মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক)

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার। ঠিক দরকারের সময় তিনি আবির্ভূত হন স্বরূপে। ঠিক যেমনটা দেখা গেল ফাইনালে। পুরো টুর্নামেন্টে নামের প্রতি সুবিচার না করতে পারা রিয়াদ ফাইনালে দেখালেন কেন তিনি ত্রাণকর্তা!

  • ইয়াসির আলী রাব্বি (বেক্সিমকো ঢাকা)

ইয়াসির আলী রাব্বির শট আর দেহের গড়ন দেখেই মনে হয়, টি-টোয়েন্টি টা তিনি বেশ ব্যাট চালিয়েই খেলতে পারবেন। তা সেই মনে হওয়াটা তিনি এই টুর্নামেন্টে প্রমাণ করে ছেড়েছেন। ৯ ম্যাচে ২৯৪ রান করে আছেন রান সংগ্রাহকদের তালিকায় ৪ নম্বরে!

  • আকবর আলী (বেক্সিমকো ঢাকা)

সেরা একাদশে আকবর আলীকে দেখে হয়তো চমকে যেতে পারেন, তবে ঢাকার বিপদের দিনে তিনি শেষদিকে যেভাবে ব্যাট চালিয়েছেন, আদর্শ স্লগ ওভারের ব্যাটসম্যান তিনি ছাড়া আর কে। পুরো টুর্নামেন্টে আকবর আলী ব্যাট করেছেন ১৫০ স্ট্রাইক রেটে!

  • শুভাগত হোম (জেমকন খুলনা)

শুভাগত হোম আস্তে আস্তে যে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন তা দেখা গেছে আগেই। এই টুর্নামেন্টেও যেমন তিনি শেষদিকে নেমে খেলেছেন হাত খুলেই! সাথে তার কাজ চালানোর বোলিংটা তো আছেই। তিনি ১০ উইকেট নিয়েছেন, মাথে লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করেছেন ১৮৪.৬১ স্ট্রাইক রেটে। একাদশে তিনিই একমাত্র স্পিনার।

  • মুক্তার আলী (বেক্সিমকো ঢাকা)

পরিচিত তিনি পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। তবে এই টুর্নামেন্টে মুক্তার আলী নিজেকে চিনিয়েছেন বোলার হিসেবে তিনি কতটা কার্যকরী। ১০ ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ১৭ উইকেট, উইকেট প্রতি খরচ করেছেন মাত্র ১৬ রান। দুই-একটা ম্যাচে ব্যাট হাতেও দেখিয়েছেন ঝলক।

  • শহিদুল ইসলাম (জেমকন খুলনা)

পুরো টুর্নামেন্ট খেলতে পারলে হয়তো টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের দাবিদার থাকতেন তিনি। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজাকে জায়গা দিতে বাদ পড়ায় হয়তো সেভাবে ফুটে উঠতে পারেননি তিনি। তবে যে ক ম্যাচেই জায়গা পেয়েছেন নিজের জাত চিনিয়েছেন শহিদুল। মাত্র ৮ ম্যাচ খেলেই জায়গা করে নিয়েছেন উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় চার নম্বরে আছেন ১৫ উইকেট নিয়ে, উইকেট প্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ১৪! ফাইনালের শেষ ওভারে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ততাতেই জিতেছে

  • মুস্তাফিজুর রহমান (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম)

বিভিন্ন সময়ে অনেকবার ফিরে আসার মাঝে এই টুর্নামেন্টে আরেকবার ফিরে এসেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এই টুর্নামেন্টে সবচাইতে বেশি উইকেট (২২) নিয়েছেন তো বটেই, উইকেট প্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ১১। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট পাওয়া মুক্তার আলী তাঁর থেকে পাঁচ উইকেট দূরে আছেন। শুধু তাই না, এক একটা উইকেট নিতে বল করেছেন মাত্র ১০টা!

  • দ্বাদশ খেলোয়াড়: কামরুল ইসলাম রাব্বি (ফরচুন বরিশাল)

কামরুল ইসলাম রাব্বী তো এই টুর্নামেন্টে হ্যাটট্রিকও করেছেন। পুরো টুর্নামেন্টেই বেশ কার্যকরী বোলিং করেছেন তিনি। উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় আছেন তিন নম্বরে। এখানে অবশ্য বিবেচনা করা যেতে পারে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের পেসার শরিফুল ইসলামকেও।

 

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link